মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউয়ের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রীম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মেহেদি হাসান বুধবার বিকেল ৫টার দিকে রায়ের কপিটি ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসেন। তার কাছ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আফতাবুজ্জামান সেটি গ্রহণ করেন।
এর আগে, বুধবার দুপুরে ৩৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতিসহ চার বিচারপতি। স্বাক্ষর করা রায়ের কপি বুধবার বিকেলে সুপ্রীম কোর্ট রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, রায়ের চূড়ান্ত কপিতে ক্রমান্বয়ে স্বাক্ষর করেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা ও সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
ট্রাইব্যুনাল থেকে তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এরপর শুরু হবে কামারুজ্জামনের ফাঁসি কার্যকর প্রক্রিয়া। রায়ের কপি এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও আসামিপক্ষের আইনজীবীকেও পাঠানো হবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রায়ের খসড়া লিখে শেষ করেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে সেটি প্রধান বিচারপতিসহ অন্য তিন বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। বিচারপতিরা রায়ের খসড়া অনুমোদনের পর বুধবার সকালে সেটি চূড়ান্ত করা হয়।
সোমবার রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে কামারুজ্জামানের করা আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করে দেন।
এর আগে, গত ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল মামলার চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনটি দাখিল করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। মোট ৭০৫ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বাতিল ও তার খালাস চেয়েছেন আসামিপক্ষ।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির একই বেঞ্চ কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেন। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ তিন বিচারপতি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেন। অন্য দুই বিচারপতি হচ্ছেন বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম।
এরপর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মুস্তাফিজুর রহমান মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আইজিপি (প্রিজন) এর বরাবরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠান। পরে কারাগারে কামারুজ্জামানকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এরপর গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।