একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিচার প্রক্রিয়াকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ উল্লেখ করে পুরো মামলার স্বাধীন রিভিউ দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)৷ মামলার প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এইচআরডাব্লিউ-র মন্তব্যকে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন৷
মঙ্গলবার এইচআরডাব্লিউ-র এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘গুরুতর ত্রুটিপূর্ণ বিচার সত্ত্বেও ৬ এপ্রিল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হওয়ার মধ্য দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড অবিলম্বে কার্যকর করার পথ প্রশস্ত হলো৷”
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ হওয়ার পর তিনি ২০১৫ সালের ৫ই মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের স্বাধীন রিভিউ চেয়ে আবেদন করেন৷ মেরিটের ভিত্তিতে তার আবেদনের শুনানি না করে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত সংক্ষিপ্ত আদেশে আবেদন খারিজ করেন এবং মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন৷”
এইচআরডাব্লিউ-র এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারের উচিত মৃত্যুদণ্ডের বিধান স্থগিত করা৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড অসংগতিপূর্ণ৷ মৃত্যুদণ্ড অপরিবর্তনীয় ও নিষ্ঠুর শাস্তি৷ এটা আরও খারাপ হয় যখন বিচারব্যবস্থা এ ধরনের শাস্তি পুরোপুরি পুনর্বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়৷ ন্যায়বিচার লঙ্ঘনের ক্রমাগত ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ এবং নিরপেক্ষ বিচারিক পুনর্বিবেচনার অভাবে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে৷”
এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় পেয়েছি, সেই রায়ের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে৷ এইচআরডাব্লিউর মন্তব্য অসতর্ক অবস্থান থেকে করা হয়েছে৷”
তিনি বলেন, ‘‘কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা যদি কোনো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচার ব্যবস্থাকে ত্রুটিপূর্ণ বলেন, তাহলে সেটি সে দেশের সার্বভৌমত্বকে নিয়ে কথা বলা হয়, যা কিনা সেই দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ৷”
তুরিন আফরোজ বলেন, ‘‘এইচআরডাব্লিউ এর আগে একই ধরণের মন্তব্য করে বাংলাদেশের আদালতে মাফ চেয়েছে৷ তারা মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতার নামে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় কাজ করছে৷ কারণ এই বিচারে কোনো অস্বচ্ছতা নেই৷ আপিলে এমনকি প্রাণভিক্ষার সুযোগ রয়েছে৷ তারপরও তারা বলছে বিচার ত্রুটিপূর্ণ৷ কিন্তু কিভাবে ত্রুটিপূর্ণ তারা তা বলছে না৷”
তিনি আরো বলেন, ‘‘এইচআরডাব্লিউকে যারা অর্থ দেয় তাদের নাম পরিচয় গোপন রাখে সংস্থাটি৷ তাদের বাংলাদেশের যুদ্ধপরাধীরা অর্থ দিয়েছে কিনা তা স্পষ্ট করা উচিত৷”
প্রসঙ্গত সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন৷
এর আগে ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল-২৷ এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন৷ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়৷ এর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়৷ ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়৷- ডিডব্লিউ