আদালত থেকে পলাতক জঙ্গির একজন অল্পের জন্য হাতছাড়া : সিটিটিসি

SHARE

গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে পলাতক আনসার আল ইসলামের দুই জঙ্গি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের গ্রেপ্তারে ধারাবাহিক অভিযানের মধ্যে একজন অল্পের জন্য হাতছাড়া হওয়ার কথা জানাল ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করে জঙ্গি সদস্য মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪) ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে (৩৪) ছিনিয়ে নেয় সহযোগীরা।

এর পর থেকে প্রায় এক বছর ধরে সংগঠনের নেতৃত্বপর্যায়সহ অনেককেই গ্রেপ্তার করা হলেও ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গি এখনো ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে।
সিটিটিসি জানায়, সম্প্রতি একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে সিটিটিসি জানতে পারে মাত্র ২ দিন আগে আদালত থেকে পলাতক এক জঙ্গি ওই বাসা থেকে চলে গেছে। তিনি প্রায় এক মাস ওই বাসাতেই অবস্থান করছিলেন।
শনিবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন কাজলা এলাকা থেকে আনসার আল ইসলামের নায়েবে আমির ও তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি।
গ্রেপ্তাররা হলেন আনসার আল ইসলামের নায়েবে আমির সাখাওয়াতুল কবির ওরফে আনিস ওরফে রফিক (৪৫), সংগঠনের আশকারী বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের কমান্ডার ইহসানূর রহমান ওরফে মুরাদ ওরফে সাইফ (২৬), বখতিয়ার রহমান ওরফে নাজমুল (৩০), ইউসুফ আলী সরকার (৩১) ও জাহেদুল ইসলাম ওরফে আশ্রাফ (৩৫)।
এ বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তান সময়ে জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে আনসার আল ইসলামই সাধারণত সক্রিয়। সংগঠনটি ঘিরে সামনে যে চ্যালেঞ্জ ছিলো, আমরা মনে করি সংগঠনের আমিরসহ নেতৃত্বপর্যায়ের ৫ জনকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আমরা তা অনেকটাই নিউট্রাল করতে পেরেছি।

গ্রেপ্তারদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে, রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে আদালত থেকে ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গির বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া গেছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে নিয়ে কাজ করছি। এরমধ্যে একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে জানতে পেরেছি ওই বাসা থেকে একজন মাত্র দুইদিন আগে চলে গেছে। ওই বাসায় সে এক মাসেরও বেশি সময় অবস্থান করছিল।
গ্রেপ্তার এই ৫ জনের কাছ থেকেও আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। আরো ২ এক জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান তিনি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কুকি চিনের সহায়তায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান শামিন মাহফুজকে আগে আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সে জেলখানায় বসে যখন নতুন সংগঠনের পরিকল্পনা করে তখন সমমনা আরো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিল। মতাদর্শ ও পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা একত্রিত হয়ে নতুন নামে কার্যক্রম শুরু করে। এজন্যই পরে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে শামিন মাহফুজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
তিনি বলেন, শারক্বিয়ার ৯৫ ভাগেরও বেশি সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছি। নেতৃত্ব পর্যায়ে যারা আছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা মনে করি শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে শারক্বিয়ার যবনিকা টানতে পেরেছি।

কুকি চিন ও তাদের নেতৃত্বপর্যায়ের সদস্যদের নিয়ে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, আনসার আল ইসলামের বাইরে এখন কোন সংগঠনের তৎপরতা আছে বলে মনে হয়না। আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কিছুদিন আগে ইমাম মাহমুদের কাফেলা নামে একটি সংগঠন শারক্বিয়ার মতো পাহাড়ি অঞ্চলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সংগঠিত হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। আমরা এমন সংগঠন অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিতে সক্ষম হচ্ছি।
নির্বচন সামনে রেখে আনসার আল ইসলামের পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। তবে এটা ঠিক জঙ্গি সংগঠনগুলো এ পরিস্থিতি কাজে লাগাতে চায়। যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যান্য কাজে মনোযোগ দেয় তখন তারা সদস্য সংগ্রহসহ সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এখন আগের মতো পরিস্থিতি নেই, আগে সিটিটিসির মতো ইউনিট ছিলোনা যারা শুধু জঙ্গিদের নিয়েই কাজ করবে। তবে আমরা তৎপর আছি, গ্রেপ্তারদেরকে তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।