ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৭

SHARE

উত্তর ইউক্রেনের চেরনিহিভ শহরের একটি থিয়েটারে রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ছয় বছরের এক শিশুসহ সাতজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। শনিবার সকালে এ হামলা চালানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, আহত ১৪৪ জনের মধ্যে ১৫ জনই শিশু। এর মধ্যে কমপক্ষে ২৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে অনেকে গির্জায় অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের ছুটির দিন উদযাপন করছিলেন।
ওই হামলায় একটি প্রধান চত্বর এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতিসংঘ এ হামলাকে ‘জঘন্য’ বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনের সৈন্যদের দিয়ে এই ‘সন্ত্রাসী হামলার’ কড়া জবাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
চেরনিহিভ বেলারুশের সঙ্গে ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী ইউক্রেনে পুরোদমে আক্রমণ শুরু করলে প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে এই শহরটি রাশিয়ান সৈন্যরা অবরোধ করে ফেলে।
ক্ষেপণাস্ত্রটি শহরের ইমপসিং থিয়েটারে সরাসরি আঘাত হানে। এতে আশেপাশের ভবনগুলোর ছাদ থেকে টাইলস উড়ে ছিটকে পড়ে। ১০০ মিটার দূরে একটি ভবনে আগুনও ধরে যায়।
চেরনিহিভের ভারপ্রাপ্ত মেয়র বিবিসিকে বলেছেন, থিয়েটারটি ড্রোন নির্মাতাদের একটি সমাবেশের আয়োজন করছিল।

‘আমি বুঝতে পেরেছি যে নাট্য থিয়েটারের ভবনে যে সামরিক ইভেন্ট চলছিল সেটি তাদের লক্ষ্য ছিল।’ ওলেক্সান্ডার লোমাকো বলেছেন।
‘তবে এটা স্পষ্ট, যেই রাশিয়ানরা সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করেছে এবং যারা এমন একটি বেসামরিক শহরে দিনে-দুপুরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আদেশ দিয়েছে, তারা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল যে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রাথমিকভাবে বেসামরিক মানুষই হবে।
‘এই হামলাকে বেসামরিকদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আরেকটি যুদ্ধাপরাধ ছাড়া, অন্য কোন ব্যাখ্যা দেয়ার উপায় নেই,’ তিনি যোগ করেন।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লাইমেনকো পরে বলেছেন যে, থিয়েটারের ভিতরে থাকা সকলেই সময়মত নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছাতে পেরেছিলেন।
তিনি বলেছেন যে ‘অধিকাংশ হতাহতরা তাদের গাড়িতে ছিলেন বা রকেট হামলার সময় রাস্তা পার হচ্ছিলেন, সেই সঙ্গে একটি গির্জা থেকে ফিরছিলেন।’

স্থানীয়রা বিবিসিকে বলেছে, চেরনিহিভ শহরের এই প্রাণকেন্দ্রটি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সাধারণ মানুষের ঘুরে বেড়ানোর একটি জনপ্রিয় এলাকা।
থিয়েটারের উল্টা পাশের রাস্তায় ক্রিমিয়ান তাতার রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক অ্যানা জাহরেবা বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত করার সময় তার কর্মীরা ব্যস্ত দিন শুরু করার সব প্রস্তুত নিচ্ছিলেন।
‘আমি কি ঘটছে দেখতে বাইরে দৌড়ে যাই,’ তিনি বলেন। “এখানে ১২ বছর বয়সী দুটি মেয়ে ছিল এবং প্রচুর রক্তপাত ছিল। একজনের পা গুরুতরভাবে আহত হয়েছিল। অন্য একটি মেয়ে চিৎকার করছিল।
‘আমরা একটি টর্নিকেট দিয়ে রক্ত বন্ধের চেষ্টা করছিলাম এবং অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এখানে আসতে অনেক সময় লেগেছিল, কিন্তু কিছু লোক তাদের গাড়ি থামায়। পরে আমরা একটি মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
অ্যানা বলেছেন, কর্মীরা আহতদের চিকিৎসা কিট এবং কম্বল দিয়ে সাহায্য করতে ছুটে এসেছেন।
‘এখানে সব সময় অনেক লোক ঘুরে বেড়ায়, বাচ্চাদের সাথে এবং বাচ্চাদের স্ট্রলার নিয়ে। এলাকায় অনেক রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফে আছে,’ তিনি বলেন, ‘আমরা এমন দিন আশাও করিনি।’
শনিবার গভীর রাতে এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, রুশ হামলায় নিহত মেয়ে শিশুটির নাম সোফিয়া।
এর আগে, তিনি বলেছেন যে রাশিয়া একটি ‘সাধারণ শনিবারকে শোক ও ক্ষতির দিনে’ পরিণত করেছে।
জাতিসংঘ বলেছে যে তারা এই হামলায় ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’ হয়েছে।
ইউক্রেনে নিযুক্ত জাতিসংঘের বর্তমান প্রধান ডেনিস ব্রাউন একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘সকালে একটি বড় শহরের প্রধান চত্বরে এ ধরনের আক্রমণ জঘন্য, যখন মানুষজন হাঁটছিল, অনেকে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে গির্জায় গিয়েছিল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বেসামরিক নাগরিক বা বেসামরিক স্থাপনার ওপর হামলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এটা থামাতে হবে।’
এদিকে এই ঘটনায় চেরনিহিভ শহরে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
মস্কো এ হামলার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
অন্যদিকে, রাশিয়া দাবি করেছে যে একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন উত্তর-পশ্চিম নভগোরদ অঞ্চলে একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে আঘাত করেছে, যার ফলে আগুন ধরে গেলেও পরে তা দ্রুত নিভিয়ে ফেলা হয়েছি।
এতে একটি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ইউক্রেনও কথিত ড্রোন হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে কিয়েভের বিমান বাহিনী বলেছে যে মস্কোর রাতভর হামলায় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ইরানের তৈরি১ ১৭টি শাহেদ ড্রোনের মধ্যে ১৫টি গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
খবর বিবিসি