বেলারুশ-পোল্যান্ডের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছেই

SHARE

বেলারুশ ও পোল্যান্ডের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছেই। সম্প্রতি বেলারুশের দুটি সামরিক হেলিকপ্টার সীমান্ত অতিক্রম করে পোল্যান্ডের ভেতরে প্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরেই পোল্যান্ড সরকার তাদের সীমান্তে ১০ হাজার অতিরিক্ত সেনা প্রেরণ করেছে।
পোল্যান্ড বলছে, রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্যবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা বেলারুশে অবস্থান করছে। তারা সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রাশিয়ায় ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর ছয় সপ্তাহ আগে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় এই বাহিনীর যোদ্ধাদের বেলারুশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তখন থেকেই লুকাশেঙ্কো সতর্ক করে আসছেন যে, ওয়াগনার বাহিনী পোল্যান্ডে আক্রমণ করতে চায়। পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আগ্রাসীদের তাড়িয়ে দিতেই তার দেশ বেলারুশ সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করছে।
তাদের দাবি, বেলারুশের সামরিক বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার গত ১ আগস্ট খুব নিচ দিয়ে উড়ে পোল্যান্ডের ভেতরে প্রবেশ করেছে। হেলিকপ্টার দুটি তাদের সীমান্তের দুই কিলোমিটার ভেতরে বিয়াওভিয়েজা অঞ্চলে চলে আসে। সেসময় বেলারুশের সশস্ত্র বাহিনী সীমান্ত এলাকায় মহড়ায় অংশ নিয়েছিল।
তবে পোল্যান্ডের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বেলারুশ সরকার বলছে, তাদের এম-৮ এবং এম-২৪ হেলিকপ্টার দুটি পোল্যান্ডের ভেতরে যায়নি। তারা বলছে, কোনো ধরনের সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি। পোল্যান্ডের দাবিকে তারা ‘মিথ্যা’ অভিযোগ বলে উল্লেখ করেছে।
এদিকে পোল্যান্ডের বিয়াওভিয়েজা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা সামাজিক মাধ্যমে এম-৮ এবং এম-২৪ হেলিকপ্টারের ছবি প্রকাশ করেছে। এসব হেলিকপ্টারের গায়ে বেলারুশের চিহ্ন রয়েছে। বাসিন্দারা বলছেন, এই দুটি হেলিকপ্টারকে তারা তাদের শহরের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখেছে।

এই হেলিকপ্টারগুলোর সিরিয়াল নম্বর পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এগুলোর একটিকে ২০১৮ সালে বেলারুশের মাচুলিশচি এয়ারফিল্ডের কাছে দেখা গেছে। বেলারুশ থেকে হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসী যখন সীমান্ত পার হয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশ করছে তার মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটলো।
পোল্যান্ডের অভিযোগ, ২০২১ সালের পর থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে বেলারুশে আগত অভিবাসীদেরকে কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে পোল্যান্ডের ভেতরে ঠেলে দিচ্ছে। বেলারুশ নেতা প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধেও এই অভিবাসীদের উৎসাহিত করার অভিযোগ উঠেছে।

গত জুন মাসে রুশ সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর এই গ্রুপের বেশ কিছু সদস্য প্রতিবেশী বেলারুশে আশ্রয় নেয়। বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো একবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাপের সময় কৌতুক করে বলেন, তারা তো পশ্চিমের দিকে যাওয়ার কথা বলছে…তারা ওয়ারস ভ্রমণে যেতে চায়… তবে আমরা যেমনটা সম্মত হয়েছি, সে অনুসারে তাদেরকে আমি বেলারুশের কেন্দ্রেই রেখে দিচ্ছি।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জানান, ওয়াগনারের ১০০ জন সৈন্যের একটি দল বেলারুশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রদ্নো শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই শহরটি পোলিশ সীমান্তের কাছে অবস্থিত।
সেখানাকার বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন। পোল্যান্ড সতর্ক করে জানিয়েছে, অভিবাসীর রূপ ধরে ওয়াগনারের এই যোদ্ধারা পোল্যান্ডের ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে। এ ছাড়া তারা বেলারুশের সীমান্ত রক্ষীর বেশ ধরে আরও বহু অবৈধ অভিবাসীকে পোল্যান্ডের ভেতরে ঠেলে দিতে পারে।
বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ওয়াগনার বাহিনীর সৈন্যরা দেশটির দক্ষিণে ব্রেস্টসকি ক্যাম্পে অবস্থান করছে। এই এলাকাটি পোলিশ সীমান্ত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আরও দাবি করা হয় যে, ওয়াগনারের যোদ্ধারা সেখানে তাদের সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
ভাড়াটে সৈন্যবাহিনী হওয়ার কারণে এই গ্রুপের যোদ্ধারা সীমান্ত এলাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য রাশিয়া ও বেলারুশকে সরাসরি দায়ী করা যাবে না বলে উল্লেখ করেছেন ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. বারবারা ইয়োক্সন।

তবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস অর্গানাইজেশনের বিশ্লেষক অধ্যাপক ম্যালকম চামার্স বলছেন, রাশিয়া এবং বেলারুশ পরিস্থিতি পরীক্ষা করে দেখার অংশ হিসেবে ন্যাটোর সদস্য দেশের ভেতরে ঢুকে পড়ার এই মহড়া চালিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা দেখতে চাইছে ন্যাটো জোট কিভাবে এর জবাব দেয়।
রাশিয়া ও বেলারুশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কিছু সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এছাড়াও রাশিয়ার সৈন্যরা বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে ইউক্রেনে ঢুকে আক্রমণ চালিয়েছে এবং বেলারুশে রাশিয়ার কৌশলগত পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে।