অতীতের খাদ্য ঘাটতির দেশ আজ উদ্বৃত্তের বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

SHARE

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। অতীতের খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ আজ খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান করছে ব্রি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্রি’র বিজ্ঞানী, কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। ফলে ধানের ওপর আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা শুরু হয়। স্বাধীনতার পর পর দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। তারই ডাকে সাড়া দিয়ে ব্রির বিজ্ঞানীরা স্বল্প সময়ের মধ্যেই উদ্ভাবন করেন নতুন জাতের ধান বিআর-৩ বা বিপ্লব, যা দেশের খাদ্য উৎপাদনে সত্যিই বিপ্লব নিয়ে আসে। জাতির পিতার নির্দেশিত পথ ধরেই গত পাঁচ দশকে এদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে ৮টি হাইব্রিডসহ মোট ১১১টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত ও তিন শতাধিক ধান উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে বন্যা, খরা, জলমগ্নতা, লবণাক্ততা, ঠাণ্ডা ইত্যাদি প্রতিকূলতা সহিষ্ণু, রোগ প্রতিরোধী, প্রিমিয়াম কোয়ালিটি, জিঙ্ক, আয়রন ও পুষ্টি-সমৃদ্ধ ধানের জাত উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘রাইস ভিশন ২০৫০’ এবং ‘ডাবল রাইস প্রোডাক্টিভিটি বাই ২০৩০’ শীর্ষক দু’টি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। এই কৌশলপত্র আমাদের সরকারের দূরদর্শী নীতি যেমন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট ২০৩০, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ এবং ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নের জন্য ‘রোড ম্যাপ’ হিসেবে কাজ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণে নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮ এবং অন্যান্য পরিকল্পনা দলিলের আলোকে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ফলে গত পাঁচ দশকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সৃষ্ট নানাবিধ বৈরী পরিবেশ মোকাবিলা করেও দেশের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চারগুণ। এরই অংশ হিসেবে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। অতীতের খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ আজ খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রযুক্তিগত দিক থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই উল্লেখ করে বলেন, সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানটি আগামী দিনে ধান গবেষণার ক্ষেত্রে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও বেশি সচেষ্ট হবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে টেকসই করার মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ তথা জাতির পিতার আজীবন স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এসময় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।