নারীকে বাদ দিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয় : প্রতিমন্ত্রী

SHARE

নারীকে বাদ দিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। তিনি বলেন, নারীরা কখন বিয়ে করবে, কাকে বিয়ে করবে, কখন গর্ভধারন করবে এগুলো সম্পূর্ণ ওই নারী সিদ্ধান্ত নেবে এবং এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার আছে। নারীর অধিকার মানবাধিকার। কিন্তু বর্তমানে দেশের অনেক অঞ্চলে নারীরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত। নারীরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আজ শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা, গণমাধ্যমকর্মী, সুশীল সমাজ, এনজিও এবং দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের অবহিতকরণ এবং ১০ লাখ মানুষের গণস্বাক্ষর ইউএসএআইডি উজ্জীবন এসবিসিসি প্রকল্প হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এক কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএসএআইডির ডেপুটি পরিচালক মিরান্ডা বেকম্যান; ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন স্টিভেনস, সংসদ সদস্য (এমপি) সেলিমা আহমাদ ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভিন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউএসএআইডির উজ্জীবন প্রকল্পের প্রধান ড. ফয়সাল মাহমুদ। ইউএসএআইডির উজ্জীবন প্রকল্পের সহকারী প্রধান ড. জিনাত সুলতানা বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করেন।

ইন্দিরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল মডেল সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের ৭৫তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী ২০৪১ সাল নাগাদ কর্মস্থলে নারীর কর্মসংস্থান ফিফটি-ফিফটি উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও ঘোষণা দেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ের হার শূন্যতে নিয়ে আসবেন।

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা সর্বপ্রথম নারীদের গুরুত্ব অনুধাবন করেন। তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে নারী সমঅধিকার নিশ্চিত করেন। এরই ধারবাহিকতায় জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান ডিজিটাল লাইব্রেরি সম্পর্কে তার মতামত ও অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন।

ইউএসএআইডি উজ্জীবন এসবিসিসি প্রকল্প মা, নবজাতক ও শিশু-কিশোর স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি এবং যক্ষ্মা বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজের একটি সমন্বিত প্রয়াস।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উজ্জীবন প্রকল্প বাংলাদেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার নিমিত্ত স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করছে। এ লক্ষে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে দেশব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে উজ্জীবন প্রকল্পের আওতায় ১০ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন পেশা ও বয়সের জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেছেন।

এ কার্যক্রম জনস হপকিন্স সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস, ইউএসএআইডির উজ্জীবন প্রকল্পের আওতায় মা, নবজাতক ও শিশু-কিশোর স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি ক্ষেত্রে সাফল্য আনয়নের লক্ষ্যে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধেও বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ সংক্রান্ত একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি তৈরি করা হয়েছে যা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত ডিজিটাল লাইব্রেরিতে, মন্ত্রণালয়ের বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং অধীনন্থ দপ্তর/ সংস্থা কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের তথ্য ও উপকরণ সন্নিবেশ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর স্টিভেনস বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী, মা-বাবা, ধর্মীয় নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং নীতি নির্ধারকদের দ্বারা স্বাক্ষরিত ১০ লাখ অঙ্গীকারের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়ে উল্লেখ করেন যে সরকার এবং তাদের অন্যান্য অংশীদারদের সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেন সবাই মিলে এমন একটি দেশ গড়ে তোলা যায় যেখানে দেশের শিশুরা তাদের মেধা ও দক্ষতা বিকাশের সব সুযোগ পাবে এবং তারা নিজেদের, পরিবারের এবং নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।

অতিথিদের প্রতিশ্রুতি স্বাক্ষরের আগে শায়েস্তাগঞ্জ থিয়েটার গ্রুপ একটি ইন্টারেক্টিভ জনপ্রিয় থিয়েটার শো পরিবেশন করে। বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে আইনত দণ্ডনীয় হলেও এই প্রথা অব্যাহত রয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সময়ে তারা কর্তৃপক্ষকে দেশে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও আয়োজন করার জন্য অনুরোধ করেন।