আজ পহেলা বৈশাখ, বাঙালির উৎসবের দিন

SHARE

আরেকটি নতুন বাংলা বছরের যাত্রা শুরু হলো। পঞ্জিকার পালাবদলে শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে যা ছিল খাজনা উপলক্ষ, তা এখন উদ্যাপনের উৎসব।

এ নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে, উদযাপন করতে সমগ্র বাঙালি জাতি আজ এক কাতারে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন এটি।

বিশিষ্টজনদের মতে, আমাদের এখানে ধর্ম নিরপেক্ষ আর কোনো জাতীয় উৎসব নেই। অসাম্প্রদায়িকতার দিক থেকে বিবেচনা করলে পহেলা বৈশাখ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতিগতভাবেও বৈশাখ গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে ফসলি মাস, অন্যদিকে কালবৈশাখী। সব মিলিয়ে বৈশাখ উদ্দীপনামূলক এক মাস, যা আমাদের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করে।

আবহমানকাল বাংলার গ্রামীণ জনপদে উদ্যাপিত হওয়া নববর্ষের আয়োজন এখন ছুঁয়েছে নগর জীবনে এবং নতুন মাত্রায়। সর্বত্র উদযাপিত হচ্ছে বাংলার উৎসব, উচ্চারিত হচ্ছে বাঙালিয়ানার জয়গান। কণ্ঠে কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে, ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য।’

প্রকৃতপক্ষে পহেলা বৈশাখ শুধু আমাদের একার উৎসব নয়। গোটা অঞ্চলেই বৈশাখ উদ্যাপিত হয়। সেই সঙ্গে পুরো অঞ্চলেই প্রকৃতির বদল হয়। আমরা নিজস্ব সংস্কৃতির কথা বলি, সেটার সঙ্গে প্রকৃতির সংলগ্নতা রয়েছে। এটাই আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান।

বর্তমানে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে মুখ্য হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, যা প্রবর্তনের কৃতিত্ব প্রায় পুরোটুকুই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তিনি শান্তিনিকেতনে প্রথম ঋতুভিত্তিক উৎসবের আয়োজন করেন। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলার প্রান্ত থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়ে বর্ষবরণের আয়োজন। ১৯৬১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রচর্চা নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল, সেই চেষ্টা প্রতিরোধেরও অংশ হয়ে গিয়েছিল বর্ষবরণের আয়োজন।

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম জানান, বৈশাখ প্রকৃতিতে সব রঙ নিয়ে আসে। বৈশাখ মানেই রঙের মেলা। যদিও এ সময় প্রকৃতি খুব কঠোর থাকে, যার মাধ্যমে বৈশাখ আমাদের মধ্যে সুদৃঢ় এক শক্তি তৈরি করে দেয়। বৈশাখে প্রকৃতির বৈপরীত্য থাকে। একটি কোমল, আরেকটি রূঢ় রূপ। এটা ঠিক বাঙালিদের চরিত্রের মতো। সব মিলিয়ে আমার কাছে বৈশাখ মানে আত্মআবিষ্কারের মাস। যেখানে আমাদের মেধা-মনীষার সৃজনশীল সব উপাদানই রয়েছে।

গ্রামীণ জীবন থেকে শহুরে জীবনে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ব্যাপকতা লাভ করে ১৯৬৭ সালে রমনা উদ্যানের অশ্বত্থমূলে ছায়ানটের প্রভাতি আয়োজনের মধ্য দিয়ে। এ পথচলা এত সহজ ছিল না। পাকিস্তান আমলে তো বটেই, স্বাধীন বাংলাদেশেও আক্রমণের শিকার হয়েছে এ উৎসব। ২০০১ সালে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের বোমায় রক্তাক্ত হয়েছে। রমনায় বোমা হামলা করেও সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা থামাতে পারেনি ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। পরের বছর থেকে বিপুল উৎসাহে মানুষ বর্ষবরণের আয়োজনে যোগ দিয়ে আসছেন। এর সঙ্গে রয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রাও।

সেই বার্তা নিয়েই আজ দেশব্যাপী উদযাপিত হবে বাংলা নববর্ষ। কায়মনে বাঙালি প্রার্থনা করবে- ‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা…। ‘