নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা শপথ নেবে আজ বিকালে। একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সরকার শুরুতেই আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃটেনের গণমাধ্যম সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে৷
মার্কিন সিনেটের প্রস্তাবে সরাসরি দৃশ্যমান সংলাপের কথা বলা হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন আগামী বাজেটের আগেই সরকারকে বিরোধী ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে হবে৷
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এবং সিনেটের ফরেন রিলেশেন্স কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট মেনেনডজ৷ তিনি চিঠিতে লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার৷ দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে৷ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলছে এবং তা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে আরো দুর্বল করে দেবে৷ এর আগে ৭ জানুয়ারি সিনেট কমিটিতে ৬ দফা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়৷ তাতে দৃশ্যমান সংলাপের কথা বলা হয়েছে৷
অন্যদিকে বৃটেনের একটি প্রভাবশালী পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ আংশিক বৃটিশ অর্থনৈতিক সহায়তা হারাতে পারে৷ জাতীয় সংসদের কার্যকারিতা এবং স্বচ্ছতার উন্নয়নে বৃটেন দু’টি প্রকল্পে বছরে ৫ কোটি পাউন্ডের বেশি অর্থ সহায়তা দেয়৷ এবার এই সহায়তা কমানো হবে৷ আর অন্যান্য ক্ষেত্রেও আর্থিক সহায়তা কমানো হবে৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির একপাক্ষিক নির্বাচনকে যুক্তরাজ্য ভালভাবে নেয়নি৷
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ জানান মার্কিন সিনেট কমিটির প্রস্তাব পাস এবং চিঠি পাঠানো গুরুত্ব বহন করে৷ তারা বাংলাদেশের নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি৷ তাই তারা আরেকটি নির্বাচন চায়, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে৷ নতুন সরকার সংলাপের মাধ্যমে সেটা কত দ্রুত করে তা তারা দেখবেন৷ তিনি মনে করেন আগামী বাজেটের আগেই তা না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সরকারের ওপর৷ তিনি বলেন বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা এই পরিস্থিতিতে ফিরে পাবে বলে মনে হয় না৷ আর তা হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নও জিএসপি সুবিধা বাতিল করতে পারে৷ ড. ইমতিয়াজ বলেন অ্যামেরিকা, বৃটেন এবং ইউরোপ বাজেটের আগেই তাদের প্রতিক্রিয়া দেখাবে- যা নতুন সরকারকে চাপে ফেলবে৷
এই অবস্থায় রবিবার বিকেলে বাংলাদেশে নতুন সরকার শপথ নেয়ার কথা৷ এ কারণে নতুন মন্ত্রিসভায় একজন দক্ষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোঁজা হচ্ছে৷ জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মহলে ভাল যোগাযোগ আছে এবং চাপ সামাল দেয়ার যোগ্যতা রাখে এমন একজনকেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী৷ দক্ষতার বিচারে অর্থমন্ত্রী হিসেবে অন্তত আগামী বাজেট পর্যন্ত আবুল মাল আব্দুল মুহিতকেই বিবেচনা করা হচ্ছে৷ মন্ত্রিসভায় এবার অভিজ্ঞদের স্থান হতে পারে৷ বাদ পড়বেন বিতর্কিতরা৷ জানা গেছে সামনের দিনগুলোতে ঘরে বাইরের চাপ সামাল দেয়াকে মাথায় রেখে সাজানো হচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভা৷
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে নতুন সরকারকে অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘১২ জানুয়ারি যে সরকার গঠিত হবে তা মানুষের প্রতিনিধিত্বহীন স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক৷ এই সরকার কোনো দিক দিয়েই বৈধ হিসেবে দেশে বিদেশে বিবেচিত হবে না৷’ তিনি চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন৷ সূত্র: ডিডব্লিউ।