আফিফ-মিরাজের রেকর্ড জুটিতে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য জয়

SHARE

লক্ষ্য বেশি বড় ছিল না। কিন্তু রান তাড়ায় নেমে ফজল হোক ফারুকির তোপে যেন লন্ডভন্ড বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। দলীয় অর্ধশতকের আগেই সাজঘরে ৬ ব্যাটসম্যান। ৪ সিনিয়রও ফিরে গিয়েছেন ততক্ষণে। তবে আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজ যেন ত্রাতা হয়ে দাঁড়ালেন। সপ্তম উইকেটে ইতিহাস গড়া জুটিতে দলকে তো জেতালেনই, সঙ্গে জানান দিলেন আফগানিস্তানের হাত থেকে ম্যাচও ছিনিয়ে নিলেন। এই দুজনের ১৭৪ রানের অনবদ্য জুটিতে ৪ উইকেটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ।

২১৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে আফগান পেসার ফজল হক ফারুকির তোপে ১ রানের ব্যবধানে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল (৮) ও লিটন দাসের (১) বিদায়ের পর দলকে পথ দেখাতে ব্যর্থ হন মুশফিকুর রহিমও। বাঁহাতি এই পেসারের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনিও।

একই ওভারে অভিষিক্ত ইয়াসির আলি রাব্বিকেও দুঃস্বপ্ন উপহার দেন এই বাঁহাতি। ০ রানে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের স্টাম্প ভেঙে দেন ফারুকি। ৩ ওভারে এক মেডেনসহ নেন ৪ উইকেট! ১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ২১৫ রানের লক্ষ্যকেই বাংলাদেশের জন্য করে তুললেন পাহাড়সম।

ফারুকির তোপ সামলে উঠার আগেই দৃশ্যপটে আবির্ভাব স্পিনারদের। নিজের চতুর্থ ওভারেই বিপিএল সতীর্থ সাকিব আল হাসানকে (১০) ফেরান মুজিবুর রহমান। ডানহাতি এই স্পিনারকে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন সাকিব। এরপর রশিদ খানকে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৮)। তাতে ৫০ রানেই নেই বাংলাদেশের ৬ উইকেট।

সেখান থেকেই আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের চমক দেখানো এক দুর্দান্ত জুটি। ইয়ামিন আহমেদজাইয়ের করা ১৭তম ওভারে আফিফ-মিরাজের ব্যাটে দুই চার, এক ছক্কা। দুজনেই এরপর নিজের জোনে পাওয়া বলে হাঁকিয়েছেন বাউন্ডারি।

আলোক স্বল্পতায় প্রায় ১৫ মিনিটের মতো বন্ধ ছিল খেলা। আলো ফিরতেই রাশিদ খানকে কাট করে সিঙ্গেল নিয়ে ৬৪ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন আফিফ। এরপর ১৪২ বলে দুজনের জুটিও ছুঁয়ে ফেলে শতরান। ৩৬তম ওভারে আহমেদজাইকে পুল শটে দুই চার হাঁকিয়ে মিরাজ ৭৯ বলে তুলে নেন ফিফটি।

দলকে চরম বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করে জুটির রেকর্ডও গড়ে ফেলেন মিরাজ-আফিফ। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ১২৭ রানের জুটিটি ছিল ৭ম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। আজ সেটিকে দ্বিতীয় অবস্থানে নামিয়ে দিলেন মিরাজ-আফিফ।

শুধু তাই নয়, এশিয়ার কোনো দেশের সপ্তম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটিও এটি। এদিকে অল্পের জন্য সপ্তম উইকেটে জস বাটলার এবং আদিল রশিদের রেকর্ড ১৭৭ রানের জুটি ভাঙতে পারেননি আফিফ এবং মিরাজ। শেষ পর্যন্ত আফিফ ৯৩ এবং মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ৮১ রানে।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের উদ্বোধনী জুটি টিকেনি ২.৩ ওভারের বেশি। মুস্তাফিজের বলে ৭ রান করে তামিমকে ক্যাচ দেন গুরবাজ। ব্যক্তিগত ৩ রানে ফিরতে পারতেন ইব্রাহিমও। তাসকিন আহমেদের বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।

জীবন পাওয়া জাদরান (২৩ বলে ১৯) অবশ্য ইনিংস লম্বা করতে পারেননি, শরিফুলের বলে ক্যাচ দেন স্লিপে। ভাঙে রহমত শাহের সাথে ৪৫ রানের জুটি। এরপর অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদী ও রহমত শাহর ধীর গতির জুটিতে যোগ হয় ২৩ রান। জুটি ভাঙেন তাসকিন, তার ব্যাক অব লেংথের লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে ব্যাক ফুটে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রহমত (৬৯ বলে ৩৪)।

৩ উইকেটে ৭৯ রানে পরিণত হয় আফগানিস্তান।অধিনায়ক হাসমতউল্লাহও যেতে পারেননি বেশি দূর, ৪৩ বলে ২৮ রান করে পরিণত হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের একমাত্র শিকারে। আফগানদের রান তোলার গতি ধীর করাতে বড় ভূমিকা মিরাজের। কোনো উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে ৩ মেডেনসহ খর করেন মাত্র ২৮ রান। তবে নাজিবউল্লাহ জাদরান ও মোহাম্মদ নবির ব্যাটে লড়াকু সংগ্রহের পথ দেখে আফগানরা। দুজনে মিলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন, এ দফায়ও জুটি ভাঙেন তাসকিন।

নবি (২৪ বলে ২০) ফিরলেও জাদরান ৭০ বলে তুলে নেন ফিফটি। তবে অন্য পাশে যোগ্য সঙ্গী পাননি এই বাঁহাতি। ইনিংসের ৪৫তম ওভারে সাকিব ফেরান গুলবেদিন নাইব (১৭) ও রাশিদ খানকে (০)। পরের ওভারেই মুস্তাফিজুর রহমান ফেরান মুজিবুর রহমানকে (০)।

আফগানিস্তান শেষ পর্যন্ত অলআউট হয়ে ২১৫ রানের সংগ্রহ পায় জাদরানের ব্যাটে চড়েই। শেষ ২১ রানে হারায় ৫ উইকেট। ৯ম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে তার জাদরানের ব্যাটে ৮৪ বলে ৪ চার ২ ছক্কায় ৬৭ রান। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট মুস্তাফিজের, ২ টি করে উইকেট নেন তাসকিন, সাকিব, ও শরিফুল।