অস্ত্রবিরতি বাড়াবে না পাকিস্তানি তালেবান, ফের সহিংসতার আশঙ্কা

SHARE

পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে সমঝোতার জন্য এক মাসের অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছিল পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি)। আগামী ৯ ডিসেম্বর শেষ হতে চলেছে সেই সময়সীমা। এরপর আর অস্ত্রবিরতি বাড়াতে রাজি নয় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান। ফলে দেশটিতে আবারও সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

সশস্ত্র এ গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তান সরকার আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয় অস্ত্রবিরতি। তবে বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে টিটিপি জানিয়ে দিয়েছে, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্ত্রবিরতি আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়’।

সূত্রের বরাতে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের কোনো একটি জায়গায় বৈঠকে বসেছিল টিটিপির শীর্ষ নেতৃত্ব। আশা করা হচ্ছিল, তারা অস্ত্রবিরতি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু সেটি হয়নি।

গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো এক অডিওবার্তায় পাকিস্তানি তালেবানের নেতা নুর ওয়ালি মেহসুদ অভিযোগ করেছেন, তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। এ কারণে বৃহস্পতিবারের পর অস্ত্রবিরতি আর বাড়ানো হবে না।

টিটিপির এ ঘোষণার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তান সরকার। দেশটির তথ্যমন্ত্রী ফাওয়ার চৌধুরীও মন্তব্যের জন্য আল-জাজিরার আহ্বানে সাড়া দেননি।

পাকিস্তানি তালেবান ও আফগান তালেবান সম্পৃক্ত হলেও তাদের কার্যক্রম এবং নেতৃত্ব কাঠামো আলাদা। গত ১৪ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি নিশ্চিত করেছিলেন, পাকিস্তান সরকার ও টিটিপির মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে আফগান তালেবান।

‘যুদ্ধ পরিকল্পনার অংশ’
বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে টিটিপি পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া ছয়টি বিষয়ের বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে অস্ত্রবিরতি না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। সশস্ত্র এ গোষ্ঠীর দাবি, প্রাথমিক চুক্তিতে পাকিস্তানের হাতে বন্দি ১০২ টিটিপি সদস্যের মুক্তির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। গত ১ নভেম্বর তাদের মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল।

লাকি মারওয়াত, সোয়াত, বাজাউর, দির এবং সোয়াবি এলাকায় টিটিপি সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলেও অভিযোগ করেছে তারা। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনী।

এ অবস্থায় পাকিস্তান সরকার ও টিটিপির শান্তি আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে সন্দিহান নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। কারণ টিটিপি বা এর মিত্রদের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের এ ধরনের সমঝোতা আগেও ব্যর্থ হয়েছে।

ইসলামাবাদ-ভিত্তিক পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব পিস স্টাডিজের (পিআইপিএস) নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং পরিচালক আমির রানা বলেন, এসব পদক্ষেপ এ অঞ্চলে টিটিপির অবসান ঘটাবে না। তাদের এখনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং তারা মনে করে, এই অস্ত্রবিরতি ও আলোচনা একটি যুদ্ধ কৌশলের অংশ। তাদের মতে, এটি যুদ্ধের সমাপ্তি নয়, যুদ্ধের একটি অংশ মাত্র।

২০০৭ সাল থেকে পাকিস্তানের মাটিতে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে টিটিপি। তারা রাজনৈতিক নেতা, বেসামরিক ব্যক্তি, নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলা, ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) হামলা, লক্ষ্য বানিয়ে হত্যাসহ নানাভাবে একের পর এক হামলা চালিয়ে গেছে।

২০১৪ সালে গোষ্ঠীটি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারের একটি স্কুলে বন্দুক ও বোমা হামলা চালায়। এতে ১৩২ স্কুলছাত্রসহ ১৪০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান।