দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে মাঠ প্রশাসন মূল চালিকাশক্তি বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবসময় এটা মাথায় রাখতে হবে এই দেশ আমাদের। এই মাটি আমাদের। এই মানুষ আমাদের। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা তাদের জন্য একটা সুন্দর জীবন দেওয়াই হচ্ছে লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য পূরণে আসলে মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে এই মাঠ প্রশাসন। কাজেই আপনারা আপনাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সেভাবে পালন করবেন। এটাই আমি চাই।
আজ বুধবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ১১৯তম এবং ১২০তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
নিজেকে সেবক মনে করেন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি নিজেকে সেবক মনে করি, প্রধানমন্ত্রী না। আমি মনে করি, এ দায়িত্ব আমার জনগণের সেবা করা। এ সময় প্রশাসন কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারাও নিজেদের দেশের সেবক মনে করবেন।
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন ও প্রশাসন কোর্স থেকে আর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সময় উপযোগী প্রশাসন গড়ে তুলে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আপনারা নিবেদিত থাকবেন। জনগণের পাশে থাকবেন, মানুষ যাতে ন্যায় বিচার পায় সেটা নিশ্চিত করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি অনেকেই এই করোনাকালীন সময়ে মানুষের সেবা করতে গিয়ে জীবন পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের প্রশাসনের সবাই এই যে টিকাদান কর্মসূচি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সবাই কাজ করে যাচ্ছেন এবং টিকা দিয়ে যাচ্ছেন। এত সুন্দরভাবে টিকাদান কর্মসূচিগুলো চলছে সেজন্য সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এর সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, আমি পৃথিবীর অনেক দেশে দেখেছি টিকা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে। সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এমনও হয়েছে একজন একডোজ পেয়েছে হয়ত ছয় মাস হয়ে গেছে দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছে না। বাংলাদেশে কিন্তু আমরা পরিকল্পিতভাবেই টিকা দিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি টিকাদানে আমাদের প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমাদের স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে শুরু করে প্রত্যেকেই এবং আমার নিজের দলের নেতাকর্মী তাদেরকেও শৃঙ্খলা রক্ষা করে যেন মানুষ টিকা পায় সেজন্য নির্দেশ দিয়েছি। সবাই কাজ করায় এখানে আমরা একটা বিরাট সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। বাংলাদেশের কোনো মানুষই বঞ্চিত হবে না। সবাই যাতে টিকা পায় সেই ব্যবস্থা আমরা করব।
সনদপ্রাপ্ত সবাইকে অভিনন্দন জানান সরকার প্রধান। সেই সঙ্গে বিচারের বাণী যাতে নিভৃতে না কাঁদে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলা।…প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আপনাদের মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কাজ করতে হবে জনগণের জন্য। জনগণের সেবক হিসেবে।’
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে এই হচ্ছে আমার জীবনের স্বপ্ন। এই অল্প কথার মাধ্যমে এটা প্রতীয়মান হয় যে, তিনি কী কারণে সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন।
‘মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি প্রদেশ ছিল বাংলাদেশ। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও সকল সুবিধা থেকে ছিল বঞ্চিত। স্বাধীনতার পর তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেন। যেখানে একটি টাকাও রিজার্ভ মানি ছিল না। কোনো খাদ্য ছিল না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেইভাবেই কিন্তু শূন্য থেকে যাত্রা শুরু। বঙ্গবন্ধু একদিক থেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলেন, অন্যদিকে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের কাজ করেন।’
বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ ভাষণের লাইন তুলে ধরে তার জ্যেষ্ঠকন্যা বলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় এই গরিব কৃষক, আপনের মাইনে দেয় এই গরিব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ওই টাকায়, আমি গাড়ি চলি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন, ওরাই মালিক।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মালিক জনগণ। আমাদের সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদেও এই কথা বলা আছে। কাজেই সেই শিক্ষাটাই তিনি দিতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ২১ এর ২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিটি সরকারি কর্মচারী সার্বক্ষণিকভাবে জনগণের সেবা প্রদানে বাধ্য।’
প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে জনগণের সেবায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করবেন।