কনুইয়ের চোটে কাহিল ধোনি না-ও খেলতে পারেন

SHARE

dhoni28হঠাৎই ঘটে গেল ঘটনাটা৷

প্র্যাক্টিস প্রায় শেষ হব হব করছে৷ ধাওয়ান-রায়নারা এক এক করে কিট ব্যাগ নিয়ে ফিরছেন ড্রেসিংরুমের দিকে৷ শেষ বারের জন্য থ্রো ডাউন নিতে নেটে ঢুকেছেন ধোনি৷ ১৬ বা ১৮ গজ থেকে থ্রো ডাউন দিচ্ছিলেন সঞ্জয় বাঙ্গার৷ হঠাত্ই বাড়তি লাফানো একটা বল লাগল অধিনায়কের কনুইয়ে৷ বল ছোড়া থামিয়ে এগিয়ে গেলেন সঞ্জয়৷ ততক্ষণে কনুই চেপে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ধোনি৷ পরের দৃশ্যে ফিজিও নীতিন প্যাটেলের ছুটে যাওয়া৷ এবং শেষমেষ কনুইয়ে বরফের প্যাক নিয়ে ধোনির মাঠ ছাড়া৷

চোট কতটা গুরুতর, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ রাতের মধ্যে এক্স-রে হওয়ার কথা৷ স্বয়ং ধোনি ঠিক করেছেন, সকালে অবস্থা বুঝে খেলা বা না খেলার সিদ্ধান্ত নেবেন৷ রাতের খবর, তার খেলার সম্ভাবনা কম৷ অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে ঝুঁকি নিয়ে তাকে একেবারেই খেলানোর পক্ষপাতী নয় টিম ম্যানেজমেন্ট৷ সে ক্ষেত্রে ধোনির জায়গায় উইকেটের পিছনে থাকবেন বিশ্বকাপে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া অম্বাতি রায়াডু৷ আর অধিনায়ক হিসেবে কাপ অভিষেক হবে বিরাট কোহলির৷

এতেই শেষ নয়৷ দুপুরেই প্র্যাক্টিস শুরুর আগে মিডিয়া ম্যানেজার ডক্টর বাবা ই-মেল মারফত্ জানিয়ে দেন, মহম্মদ সামিকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে৷ কারণ হিসেবে হাঁটুর চোটের কথা বলা হয়েছে৷ হাঁটুতে আলট্রা সাউন্ড গাইডেড ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয়েছে সামিকে৷ বোলিং না করলেও নেটে সামিকে দেখা গিয়েছে৷ আশা করা হচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের আগে তাকে ফের সুস্থ করে তোলা যাবে৷

প্র্যাক্টিসে কার কখন চোট লাগবে, আগে থেকে কখনওই বলা সম্ভব নয়৷ কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়৷ ১৫ জনের টিমে যখন দ্বিতীয় কোনো বিশেষজ্ঞ কিপার নেই, তখন নেটে কেন আর্ম গার্ড ছাড়া থ্রো ডাউন নিচ্ছিলেন ধোনি? বিশেষ করে পার্থের উইকেটে? চোট গুরুতর হলে কিন্তু এই প্রশ্নটা সামনে চলে আসবে৷

বিপক্ষের নাম যেহেতু সংযুক্ত আরব আমিরাত, সে জন্য সামি বা ধোনির চোট অবশ্য তত প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে না৷ সামির জায়গায় ভুবনেশ্বর কুমারের খেলাটা একপ্রকার পাকা৷ নেটে টানা বোলিং করতে দেখা গেল তাকে৷ আবার বিগ শটের প্র্যাক্টিসে ব্যস্ত রইলেন ব্যাটসম্যানরা৷ একটা কারণ, এই ম্যাচে নেট রান রেট বাড়িয়ে রাখা৷ যাতে কোনও ভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে অঘটন ঘটলে তার জেরে গ্রুপে এক নম্বর হওয়া না আটকে যায়! তবে গেইলের টিমকে ডে ভিলিয়ার্সের খুনখারাপি দাপটে এ দিন যে ভাবে নাস্তানাবুদ করে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ানদের পক্ষে আর গ্রুপ শীর্ষে থাকা কঠিন৷

ফ্লেচার নেই, সোমবারের আগে কেপ টাউন থেকে ফিরবেনও না৷ নেটে স্বভাবতই বাড়তি দায়িত্ব নিচ্ছিলেন শাস্ত্রী৷ একটা সময় আবার পড়লেন টেল এন্ডারদের ব্যাটিং নিয়ে৷ নিজে নেটে গিয়ে উমেশ যাদবকে দেখাচ্ছিলেন, কী ভাবে সুইপ করতে হবে৷ বলছেন, ‘যে টিমের বোলিং নিয়ে এত প্রশ্ন ছিল, সেটাই কিন্তু বিশ্বকাপের সময় ক্লিক করছে৷ তিন জন পেসারই ১৪০ প্লাস গতিতে বল করছে৷ এই বোলিং অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকা করলে লোকে ধন্য ধন্য করত!’

শুধু শাস্ত্রী নন, ভারতীয় বোলিং চমকে দিয়েছে পন্ডিতদেরও৷ শেন ওয়ার্নের মতো লোক ফক্স স্পোর্টসে বসে বলে দিচ্ছেন, ‘টেস্ট সিরিজে ওদের বোলিং দেখে মনে হয়েছিল, বিশ্বকাপে এ জন্য ডুবতে হবে৷ অথচ হচ্ছে ঠিক উল্টোটা৷ পেস বোলিং ক্লিক করে যাচ্ছে৷’ হিসেব বলছে, পেসাররা মোট কুড়িটা উইকেটের মধ্যে তুলেছেন ১২টা, প্রতি উইকেট এসেছে ২৫ বলের মধ্যে৷ আর দুই স্পিনার অশ্বিন-জাডেজার ক্ষেত্রে প্রতি ৩৬ বলে৷ অর্থাত্ পাঁচ বিশেষজ্ঞ বোলারের মধ্যে তিন পেসার-দুই স্পিনারের ছক খেটে যাচ্ছে পুরোপুরি৷ ভুবনেশ্বর কুমারও আজ খেলে ফেলবেন প্রথম ম্যাচ, টিম ম্যানেজমেন্টও দেখে নিতে পারবে কতটা ম্যাচ ফিট তিনি৷

আবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্যাপ্টেন তৌকিরের বয়সই ৪৩৷ জীবনের প্রথম ওয়ান ডে খেলেছিলেন ২০০৪ সালের এশিয়া কাপে, ডাম্বুলায়৷ তার পরে এত বছরে খেলেছেন মাত্র ৮টি ওয়ান ডে৷ এই বিশ্বকাপে দুটো ম্যাচ খেলে জিম্বাবোয়ে ও আয়ার্ল্যান্ডের কাছে হেরেছে টিম, কিন্তু দুটোতেই ২৭৫-এর উপর রান করেছে আমিরাত৷ ‘আমরা জানি, ভারতীয়রা বড় তারকা৷ কিন্তু ম্যাচে সেটা আমাদের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না৷ যে দুটো ম্যাচ আমরা খেলেছি, দুটোতে হারলেও একটাও একপেশে ম্যাচ হয়নি৷ বরং দুটো ম্যাচেই আমরা জিততে পারতাম৷’

গোটা টিমটাই প্রায় প্রবাসী ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের নিয়ে গড়া৷ স্বপ্নিল পাটিল যেমন৷ এক সময় মুম্বাইয়ে অজিঙ্ক রাহানের সঙ্গে স্কুল ক্রিকেট খেলেছেন৷ আমিরাদের উইকেটকিপার স্বপ্নিলকে উচ্ছ্বসিত দেখাচ্ছে অজিঙ্ক সম্পর্কে, ‘জানতাম খুব বড় ক্রিকেটার হবে ও৷ কিন্তু কাল যখন ও ব্যাট হাতে নামবে, উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে কোনো ছাড়াছাড়ি নেই৷’

এক কথায়, হেসে-খেলে আজ দুটো পয়েন্ট ভারতের ঘরে আসা উচিত৷ আর উপরি হিসেবে আসতে পারে রোহিত শর্মার রান পাওয়া আর ভুবনেশ্বর কুমারের ছন্দে ফেরা৷ আর ধোনি? কনুই ঠিক না থাকলে কেন ঝুঁকি নেবেন?