পথহারা বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে চায় জিয়ার জন্মবার্ষিকীতে

SHARE
begumদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল-বিএনপি। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিশ্চুপ হয়ে গেছেন।অস্বাভাবিক পরিস্থিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ছয়দিন পার হলেও নেতাকর্মীরা এখনও দিকনির্দেশনাহীন।
সবাই তাকিয়ে রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের দিকে। কিন্তু সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীও বেশ কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের ডেকেও কথা বলেননি খালেদা জিয়া । গত প্রায় পাঁচ দিন ধরে খালেদা জিয়ার বাসভবন থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের।
টানা অবরোধে সাড়া না পেয়ে অনেকটা তড়িঘরি করে শুক্র ও শনিবার অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কাল থেকে অবরোধ চলার কথা থাকলেও এ নিয়েও দুর্ভাবনায় বিএনপির মধ্যম ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তবে আগামী ১৯ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ চায় দলটির হাইকমান্ড।
এদিকে, সরকার হার্ডলাইনে যাওয়ায় এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ প্রায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। তাছাড়া ডজন খানেকের বেশি কেন্দ্রীয় নেতাকে কারাগারে আটকে রেখেছে সরকার। বিভিন্ন মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে। এ অবস্থায় দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে একটি ভুল সিগনাল যাচ্ছে। ফলে জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরাও রয়েছেন চরম আতঙ্কে। শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হওয়ার কথা বলার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ঢাকার বাইরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা-উপজেলার কার্যালয়গুলোতে দেখা যায় না নেতাকর্মীদের। অনেক কার্যালয়ে এখন তালা ঝুলছে। দিনের পর দিন জেলা-উপজেলার অফিসগুলোতে কাউকে দেখা যায় না।
গত কয়েকদিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল। তাঁর ভাই মনিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিস্তার ফারুখও জেলে রয়েছেন। এ অবস্থায় উপজেলা বিএনপি অফিসে যাওয়ার সাহস কেউ পাচ্ছেন না বলে জানালেন মনিরামপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন। অন্যত্রও একই অবস্থা।
তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। দৃশ্যত তিনিই এখন সরব রয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ফোন আসছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে। পরবর্তী করণীয় কী হবে তাও জানতে চাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা আসাটা স্বাভাবিক। তবে এই অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। দলীয় চেয়ারপারসনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা জনগণের সামনে আসবেন। জনসম্পৃক্ততা আছে এমন কর্মসূচি দেয়া হবে। তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।
জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে একটি সমাবেশ থেকে নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করাই হবে বিএনপির নতুন রূপরেখার মূল লক্ষ্য। তবে এখন পর্যন্ত দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক করতে পারছেন না খালেদা জিয়া।
এ পরিস্থিতিতে টেলিফোনেই নতুন পরিকল্পনা নিয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির নতুন পরিকল্পনার মধ্যে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে ঢেলে সাজানো, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ভিত্তিক টিম গঠন, দলকে জিয়াউর রহমানের আদর্শে ফিরিয়ে আনা, নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে বিভিন্ন দল ও মতের মানুষকে নিয়ে বৃহৎ জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন কাজে লাগানো এবং আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো ইত্যাদি।
সূত্র জানায়, বিএনপির অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী মনে করেন, বর্তমানে দলটির জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও ১৯ দফা কর্মসূচির রাজনীতি থেকে বিচ্যুতি ঘটেছে। ১৯ জানুয়ারি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানগুলোতে তার আদর্শে দলকে ফিরে এসে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হবে। পুলিশ অনুমতি দিলে এ উপলক্ষে রাজধানীতে একটি সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা তারেক রহমানকে আন্দোলন-সংগ্রামে পেতে চান। বিশেষ করে তরুণ নেতাকর্মীদের একমাত্র আশা তারেক রহমান দেশে ফিরে দলের হাল ধরলে সব হতাশা কাটিয়ে বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
চলতি মাসে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপির তরুণ নেতাকর্মীরা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে হরতাল অবরোধ পালন করছে এমন অভিব্যক্তিও পাওয়া গেছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, নেতাকর্মীরা যে আন্দোলন করেছেন, তাতে প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। নেতা-কর্মীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।