গ্রামীণফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ

SHARE

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দাবি করা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে আপাতত দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার জন্য গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ। প্রতিষ্ঠানটি এই টাকা না দিলে হাইকোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়ে যাবে।

আইনজীবীরা বলছেন, বিটিআরসির ফান্ডে গ্রামীণফোন এই টাকা না দিলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে বিটিআরসি।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ আজ রবিবার (২৪ নভেম্বর) গ্রামীণফোনের প্রতি এ নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, গ্রামীণফোন দুই হাজার কোটি টাকা দিলেই কেবল হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ বহাল থাকবে। অন্যথায় হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ বাতিল হয়ে যাবে। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিটিআরসির করা আবেদন নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেওয়া হয়।

আদেশের সময় গ্রামীণফোনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এ এম আমিনউদ্দিন, ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস ও ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী। বিটিআরসির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।

আদেশের পর বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব সাংবাদিকদের বলেন, অবিলম্বে এই টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে বিটিআরসি। তিনি বলেন, নিম্ন আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন। এই মামলা নিষ্পত্তি হলে জানা যাবে, বিটিআরসি গ্রামীণফোনের কাছে কত কোটি টাকা পাবে। তিনি বলেন, আপিল বিভাগ সময়সীমা দেননি। তবে আদেশের কপি পাওয়া গেলে জানা যাবে, কতদিনের মধ্যে টাকা দেবে গ্রামীণফোন। আপাতত এ আদেশে বিটিআরসি সন্তুষ্ট বলে জানান তিনি।

তবে গ্রামীণফোনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, তিন মাসের মধ্যে টাকা দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের আদেশের কপি পাওয়ার পর এই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রিভিউ আবেদন করার বিষয়টি চিন্তা করা হবে। আদেশের কপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে এই রিভিউ আবেদন করতে হবে। তাই এ জন্য গ্রামীণফোনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের আদেশ অনুযায়ী টাকা দিতে না পারলে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

হাইকোর্ট গত ১৭ অক্টোবর গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দাবি করে বিটিআরসি দেওয়া চিঠির কার্যকারিতার ওপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন। ‌ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আপিল বিভাগে আবেদন করে। এই আবেদনের ওপর শুনানিকালে গ্রামীণফোন আপাতত কত টাকা দিতে পারবে তা প্রথমে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এবং পরে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে আদালতকে জানানোর নির্দেশ ছিল। এ অবস্থায় গত ১৪ নভেম্বর গ্রামীণফোন আদালতকে জানায়, তারা শর্তসাপেক্ষে ২০০ কোটি টাকা দিতে রাজি।

গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে গ্রামীণফোনের সমঝোতা বৈঠকে পাঁচটি প্রস্তাব মেনে নেওয়া হলেই কেবল তাঁরা টাকা দিতে রাজি। এরপর আদালত আদেশের জন্য ১৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। কিন্তু ওই দিন আপিল বিভাগে প্রয়োজনীয় বিচারপতি না থাকায় আদালত আদেশের জন্য ২৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। তবে আদালত এ সময়ের মধ্যে গ্রামীণফোনকে এ বিষয়ে কারো সঙ্গে (ফোরাম) কোনো মধ্যস্থতা না করার নির্দেশ দেন।

এ অবস্থায় আজ রবিবার নির্ধারিত দিনে আদালত বসার পর আদেশ দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে গ্রামীণফোনের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস কিছু বলার জন্য দাঁড়ালে প্রধান বিচারপতি বলেন, শুনানিতো শেষ। আজ আদেশের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এখন আমরা আদেশ দেব। এ সময় ফজলে নুর তাপস বলেন, সরকারের একটি রেজুলেশন রয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার। আমরা সেটা দিতে রাজি। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা আদেশ দিচ্ছি। এরপর আপিল বিভাগ আদেশ ঘোষণা করেন।

এর আগে প্রায় ২৭টি খাতে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা (নিরীক্ষা আপত্তির দাবি) দাবি করে গ্রামীণফোনকে গত ২ এপ্রিল চিঠি দেয় বিটিআরসি। ওই চিঠির বিরুদ্ধে ঢাকার নিম্ন আদালতে মামলা (মানি স্যুট) করে গ্রামীণফোন। মামলায় অর্থ আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চায় গ্রামীণফোন। কিন্তু গত ২৮ আগস্ট নিম্ন আদালত ওই আবেদন খারিজ করে দেন। নিম্ন আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে গ্রামীণফোন।

আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ওপর দুই মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন। ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আপিল বিভাগে আবেদন করে। আবেদন নিষ্পত্তি করে আজ আদেশ দেন আপিল বিভাগ।