ভেজাল ওষুধের সঙ্গে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত : হাইকোর্ট

SHARE

যে বা যারা ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত তাদের মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া উচিত বলে অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, কোনো ফার্মেসিতে দ্বিতীয়দফায় ভেজাল ওষুধ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা উচিত। আদালত ভেজাল ওষুধের বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ অভিমত দিয়েছেন। আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান কচি। বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।

এদিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর গত তিনমাসের কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পহেলা আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৪ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার এক শ ৪৩ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। এ সময়ে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এককোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় ১৩ হাজার ৫৯৩টি ফার্মেসি পরিদর্শন করে ৫৭২টি মামলা করা হয়। দুটি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়েছে।

এই প্রতিবেদন পাবার পর আদালত বলেন, কোনো ফার্মেসিতে ভেজাল ওষুধ পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত যে সাতদিনের সাজা দিচ্ছে তা কম হয়ে যাচ্ছে। তাই কোনো ফার্মেসিতে একবার ভেজাল ওষুধ পাবার ওপর দ্বিতীয়দফায় তার কাছে যদি ভেজাল ওষুধ পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা উচিত।

শুনানিকালে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির বিরুদ্ধে চলা অভিযানের সঙ্গে আমরা একমত। আমরাও চাই, বাজারে যাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ না থাকে।

এ সময় আদালত বলেন, ওষুধের পাতায় (স্ট্রিপ) স্পষ্ট করে বাংলা ও ইংরেজি বড় হরফে মেয়াদ, উৎপাদনের তারিখ ও মূল্য লেখার ব্যবস্থা করুন আপনারা।

জবাবে এ আইনজীবী বলেন, ফ্যাক্টরি মালিকদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করে আদালতকে জানাবো।

শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরেরও পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এ সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আইনজীবী বলেন, আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি। আদালত বলেন, কি কার্যক্রম নিয়েছেন জানান। এ সময় এ আইনজীবী বলেন পরবর্তী তারিখে জানানো হবে। আদালত এ বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। এরপর আদালত আগামী ১২ ডিসেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।

উল্লেখ্য, বিশেষ ক্ষমতা আইনে ভেজালকারীর মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তির বিধান রয়েছে।

ঢাকার বিভিন্ন ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে ‘ঢাকায় ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ’ শিরোনামে গত ১১ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন করেন ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন। এ রিট আবেদনে সারা দেশে বিভিন্ন ফার্মেসিতে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ একমাসের মধ্যে অপসারণ ও ধ্বংসের জন্য গত ১৮ জুন নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি, সংরক্ষণ ও সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, আইন, বাণিজ্য ও শিল্প সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও উপ-পরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও মহাসচিবের প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের আদেশ কার্যকরের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই নির্দেশের পর গত ১৬ জুলাই হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার আরেকটি প্রতিবেদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।