আইএস খিলাফতের অবসান

SHARE

সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) স্বঘোষিত প্রায় পাঁচ বছরের খিলাফতের সমাপ্তি ঘটেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ‘সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস’ (এসডিএফ)। আইএসের সর্বশেষ ঘাঁটি বাগুজে নিজেদের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার এ ঘোষণা দেয় কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফ।

সিরিয়া থেকে বিতাড়িত হলেও বৈশ্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইএসের হুমকি রয়েই গেছে। বিশেষ করে নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান ও ফিলিপাইনে ঘাঁটি গাড়ার চেষ্টা করছে তারা।

সাফল্যের চূড়ায় থাকাকালে সিরিয়া ও ইরাকের প্রায় ৮৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা আইএসের দখলে ছিল। কিন্তু সরকারি সেনা ও এসডিএফের অভিযানের মুখে সিরিয়া থেকে ক্রমে বিতাড়িত হতে বাধ্য হয় তারা। এর আগে ২০১৭ সালে আইএস নির্মূলের ঘোষণা দেয় ইরাক সরকার।

সিরিয়ায় আইএসের সর্বশেষ ঘাঁটি ছিল পূর্বাঞ্চলীয় বাগুজ গ্রামে। চলতি মাসের শুরুতে সেখানে অভিযান শুরু করে এসডিএফ। কিন্তু গ্রামটিতে অনেক বেসামরিক লোকের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযানের তীব্রতা কমিয়ে আনা হয়। সেখানে আটকে পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশুসহ বিদেশি নাগরিকরাও ছিল। তাদের পর্যায়ক্রমে এসডিএফের আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তর করা হয়।

বিবিসির খবরে বলা হয়, বাগুজ থেকে আইএসের অনেক যোদ্ধা গত কয়েক দিনে পালিয়ে গেছে। আর যারা থেকে যায়, তারা গাড়িবোমা ও আত্মঘাতী হামলাসহ নানাভাবে এসডিএফের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে।

গতকাল এসডিএফের গণমাধ্যম শাখার প্রধান মুস্তফা বালি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এসডিএফ সিরিয়ার শতভাগ এলাকা থেকে আইএস নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছে। আজকের এই বিশেষ দিনে আমরা সেসব শহীদকে বিশেষভাবে স্মরণ করছি, যাদের আত্মত্যাগ ছাড়া এই বিজয় সম্ভব ছিল না।’

গত বছর সিরিয়ায় আইএসকে পরাজিত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সঙ্গে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও নেন তিনি। কিন্তু তাঁর সেই সিদ্ধান্ত কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে এবং প্রতিবাদ হিসেবে বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। সমালোচনার মুখে পড়ে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, সিরিয়া থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করা হবে না।

২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন অভিযানের পর আইএসের উত্থান শুরু হয়। সিরিয়ায় বিস্তৃত হয় ২০১১ সালে। এরপর একের পর এক এলাকা দখলে নিয়ে স্বঘোষিত খিলাফত জারি করে আইএস। একসময় দখলকৃত এলাকার প্রায় ৮০ লাখ মানুষের ওপর নিজেদের শাসন জারি করে এই জঙ্গিগোষ্ঠী। তেল বিক্রি ও মুক্তিপণ আদায়সহ নানাভাবে কোটি কোটি ডলার আয় করে তারা।

তবে ইরাক ও সিরিয়া থেকে বিতাড়িত হলেও আইএস পুরোপুরি নির্মূল হয়নি বলে মনে করেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তাঁদের বিশ্বাস, মধ্যপ্রাচ্যে এখনো আইএসের ১৫ থেকে ২০ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা রয়েছে। পরিচয় গোপন করে থাকা এসব সদস্য যেকোনো সময় নাশকতা চালাতে পারে। এ ছাড়া বাগুজ থেকে বিতাড়িত হওয়ার দিন কয়েক আগে আইএস মুখপাত্র আবু হাসান আল-মুহাজির এক অডিও বার্তায় ঘোষণা করেন, ‘খিলাফত শেষ হয়ে যায়নি’। সূত্র : বিবিসি।