শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীরা

SHARE

কয়েক দিন আগের আর বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চিত্র এক নয়। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরগরম ক্যাম্পাস। আগে সাধারণ ছাত্ররা সংগঠনের নেতাদের পেছনে ঘুরলেও এখন নেতারা ঘুরছেন শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে। আসন্ন নির্বাচনে ভোট পেতে চালাচ্ছেন ব্যাপক প্রচারণা।

প্রায় তিন দশক পর আগামী ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা। ক্যাম্পাসের অনুষদ, আড্ডার স্থানে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, দাবিদাওয়া তুলে ধরে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা।

এদিকে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে প্রশাসন। মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ভোটার তালিকায় নাম নেই, বিলম্বে মনোনয়নপত্র জমা ইত্যাদি কারণে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর বেশ কয়েকজন প্রার্থী বাদ পড়েছেন। বাদ পড়া প্রার্থীদের কোনো আপত্তি থাকলে আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে লিখিতভাবে হল প্রশাসনকে জানাতে হবে। যাচাই-বাছাইয়ের পর আগামী ৩ মার্চ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে বিশ্ববিদ্যালয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গতকাল বুধবার ক্যাম্পাস ঘুরে শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া শুনছেন প্রার্থীরা। পুরো প্যানেল নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। সমর্থন আদায়ে শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া শুনেছেন ছাত্রলীগ প্যানেলের ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। ক্যাম্পাসের কলাভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকায় শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের দাবির বিষয়ে জানতে চেয়েছেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২ মার্চের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করব। এখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে মতামত সংগ্রহ করছি। তারা কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চায়, তা জেনে সবাই মিলে স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে চাই। যুগোপযোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার লক্ষ্যেই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করব।’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রার্থীরাও। গতকাল দুপুর ১টার দিকে ক্যাম্পাসের মধুর ক্যান্টিন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, কলাভবন, ক্যাম্পাস শ্যাডো, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, রেজিস্টার ভবন এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তাঁরা।

ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ছাত্রদলের সহসভাপতি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্রদলের অবস্থান তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছি। ভালো সাড়াও পাচ্ছি। ভোট ডাকাতি না হলে ছাত্রদলের পুরো প্যানেল বিজয়ী হবে বলে মনে করি।’

দলীয় দাবিদাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সমর্থন আদায়ে কাজ করছেন বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রগতিশীল ছাত্র জোটের’ প্রার্থীরা। সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট, কলাভবন, ক্যাম্পাস শ্যাডো ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন তাঁরা।

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সহসভাপতি (ভিপি) লিটন নন্দী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা আগে থেকেই। যেকোনো আন্দোলন ও অধিকার আদায়ে তাদের সঙ্গে ছিলাম। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। প্রাথমিক বাছাইয়ে বিভিন্ন হলের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’

স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আসিফুর রহমান : এককভাবে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক পদে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এম আর আসিফুর রহমান। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন।

বাদ পড়লেন যাঁরা : বাম জোটের জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীরের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী কাহহার ফাহিম, শামসুন নাহার হলের সহসভাপতি প্রার্থী জিয়াসমিন শান্তা, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সহসভাপতি প্রার্থী নাহিদ, জসিমউদ্দীন হলের সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান তাজ, শামসুন নাহার হলের সহসভাপতি প্রার্থী মানসুরা আক্তারের মনোনয়নপত্র প্রাথমিকভাবে বাতিল করা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে বাদ পড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন সহসভাপতি পদে আব্দুল্লাহ জিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক পদে এ আর এম আসিফুর রহমান, সদস্য পদে ইশাত কাশফিয়া ইরা, হায়দার মোহাম্মদ জিতু, শাফায়াত হাসনাইন সাবিত ও রাইয়ান খান।

প্রাথমিক বাছাইয়ে ডাকসুর ২৫ পদে মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী সহসভাপতি পদে ২০ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ১২ জন, সহসাধারণ সম্পাদক পদে ১৩ জন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক পদে ১১ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯ জন, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৩ জন, সাহিত্য সম্পাদক পদে আটজন, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৫ জন এবং সদস্য পদে ৮৮ জন প্রার্থী রয়েছেন।