বাভারিয়াল আল্পসের নয়নাভিরাম পরিবেশে জি-৭ রাষ্ট্রগুলির বৈঠকে নতুন করে রাশিয়াকে একঘরে করার ডাক দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ দু’দিনের বৈঠকের প্রথম দিন ইউক্রেন প্রসঙ্গ ছাড়াও উঠে এল ইসলামিক স্টেট এবং বোকো হারাম জঙ্গিদের দমন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য গ্রিসের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের বিষয়গুলি৷
জার্মানি-অস্ট্রিয়া সীমান্তবর্তী ক্রুয়েন শহরের স্বাভাবিক পরিবেশের শান্তিভঙ্গ হয়েছে ১৭ হাজার জার্মান পুলিশের ভারি বুটের শব্দে৷ শহরের সক্লস এলমাউ হোটেলই আপাতত ঠিকানা জি-৭ দেশগুলির অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা হোমরাচোমরাদের৷ বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন এই দেশগুলির অর্থমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নররা৷ ইন্টান্যাশনাল মানিটরি ফান্ডের পেশ করা রিপোর্ট অনুযায়ী অর্থনৈতিক ভাবে সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশগুলি অর্থাত্ কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, বৃটেন ও আমেরিকাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে জি-৭৷
ঝকঝকে নীল আকাশ, হঠাত্ করে আল্পসের দিক থেকে বয়ে আসছে কনকনে হওয়া৷ এমনই পরিবেশে রোদে বসে প্রেটজেল সহযোগে বিয়ারে মগে চুমুক দেওয়াই স্থানীয় মানুষদের রোজকার কাজ৷ কিন্তু, জি-৭ বৈঠকে দু’দিনের জন্য সেই জীবনযাত্রায় আচমকা ছেদ৷ কড়া নিরাপত্তার চাদরে হঠাৎই মুড়ে ফেলা হল শান্ত এই জনপদকে৷
বৈঠকের উদ্বোধনী ভাষণে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ইবোলা ও নিরক্ষীয় অঞ্চলের অন্যান্য মারণ রোগগুলি দমন করার বিষয়ে জোর দেওয়ার প্রস্তাব দেন৷ জার্মান চ্যান্সেলর একই সঙ্গে মনে করিয়ে দেন বিশ্ব উষ্ণায়নের বিষয়টিও৷ কয়েক মাস আগেই প্যারিসের একটি বৈঠকে সারা বিশ্বের নেতারা শপথ নিয়েছিলেন কার্বন ও গ্রিনহাউস গ্যাসের নিষ্ক্রমণ কমানোর জন্য৷ কয়েক মাস পর পরিস্থিতি কতটা বদলালো তা নিয়েই সওয়াল করেন মার্কেল৷
আলোচনায় সবার নজর কাড়ে গ্রিসও৷ সম্প্রতি সে দেশে যে ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তার কোনো আশু সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন৷ গ্রিক নেতারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ছেড়ে দেওয়ার বিষয়েও ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দেন৷ বৈঠকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জুঙ্কার গ্রিক প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাসকে এই বিষয়ে নতুন করে ভেবে দেখার জন্য আবেদন করেন৷
বৈঠকে যোগদানকারী নেতাদের প্রত্যাশামতোই উঠে আসে ইউক্রেন প্রসঙ্গ৷ এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হতেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ ইউক্রেনের পূর্ব দিকে দোনেত্স্ক প্রদেশে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দেওয়া নিয়ে ফের রাশিয়ার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন তিনি৷ জি-৭ সদস্য দেশগুলির প্রতিনিধিদের কাছে আবেদন করেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে রাশিয়াকে একঘরে করে দেওয়ার জন্য৷
ইউক্রেনে সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার পর থেকেই অবশ্য আমেরিকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য করার অভিযোগ তুলে আসছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে৷ একাধিকবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে কোণঠাসা করার ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷ যদিও এমন পদক্ষেপে বিচলিত হননি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন৷