১৩৪ দিন ফোন ছাড়া ভ্রমণ

SHARE

প্রতীকী ছবি

ডিজিটাল এই যুগে, স্মার্টফোন যেখানে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে, সেখানে ফোন, ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট ছাড়া ১/২ দিন নয়, পুরো ১৩৪ দিন কাটিয়েছেন চীনের পিএইচডি শিক্ষার্থী ইয়াং হাও।

ফোন ছাড়া জীবন কতটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তা দেখতেই দুটি ক্যামেরা নিয়ে চীন ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েছিলেন ইয়াং।

ইয়াং গত বছরের নভেম্বরে শানসি প্রদেশে তাঁর নিজের বাড়ি থেকে ছয় মাসের জন্য ভ্রমণে বেরিয়ে যান। তিনি এ সময় ২৪টি প্রদেশ ও অঞ্চল ভ্রমণ করেন।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ইয়াং তাঁর মুঠোফোন ও ল্যাপটপ বাড়িতেই রেখে যান। সঙ্গে নেন শুধু দুটি ক্যামেরা, যেগুলো ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায় না। নিজের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ক্যামেরাবন্দী করতেই তিনি সেগুলো সঙ্গে নেন।

ইয়াং বলেন, ‘মুঠোফোনকে আমার নিজের ডিজিটাল অঙ্গ মনে হয়। এটি ছাড়া আমরা অনেক কিছুই করতে পারি না। তাই আমি দেখতে চেয়েছিলাম, যদি ইন্টারনেটে প্রবেশের কোনো রকম সুযোগ না থাকে, তাহলে কেমন হবে। টানা কয়েক মাস ধরে এমনটা হলে অভিজ্ঞতা ঠিক কেমন হবে।’

বলার অপেক্ষা রাখে না, চীনে প্রযুক্তি ছাড়া পথ চলতে গেলে অনেক প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়। সাধারণ কোনো কাজও ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন হোটেলে কক্ষ আগাম ভাড়া করা বা ট্যাক্সি ভাড়া করা।

ইয়াং বলেন, ‘আমি কোনো ফোন ব্যবহার করছি না, এটা শুনে বেশির ভাগ মানুষই অবাক হয়ে যেতেন। কেউ কেউ সন্দেহের গলায় জিজ্ঞেস করতেন, আমি খারাপ কিছু করছি কি না। কেউ কেউ এটাও ভাবতেন যে আমি বিশেষ কোনো কাজ করছি। বাকিরা মনে করতেন, মুঠোফোন ছাড়া জীবনযাপন দারুণ মজার কিছু।’

তবে নানা রকম উদ্ভট সংকটের মুখে পড়লেও ফোনবিহীন জীবনে অবাক করা কিছু সুবিধা খুঁজে পেয়েছেন ইয়াং। মুঠোফোনে ক্রমাগত নানা নোটিফিকেশনের ‘পিং’ শব্দ আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়া জীবনে প্রথমবার তিনি কোনো কাজে অধিক মনোনিবেশ করতে পেরেছেন, নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরেছেন আরও অর্থবহ সাধনায়।

বই পড়ে, লেখালেখি করে এবং নানা বিষয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করে ইয়াং সময় কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যা ও আনন্দ অর্জন আমাকে বিস্মিত করেছে। এটা জীবনের দারুণ এক অভিজ্ঞতা।’

ইয়াং বলেন, ‘আমার নিজেকে প্রাচীন যুগের মানুষ মনে হয়েছে, সময় পরিভ্রমণ করে যে আধুনিক যুগে এসেছে।’

নিজের পিএইচডি গবেষণার জন্যই ইয়াং এ কাজ করেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে তাঁর। রাস্তায় চলতে চলতে যেসব ভিডিও ও ছবি তিনি তুলেছেন, সেগুলো দিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরির পরিকল্পনাও আছে তাঁর।