এখনও কাপ-যুদ্ধে প্রথম এগারোয় না থাকলে কী হবে, স্বামী যে কোনোদিন চলে আসতে পারেন প্রথম এগারোয়৷ আর স্ত্রী এই মুহূর্তে টিভির সৌজন্যে ভারতে সবচেয়ে পরিচিত মুখ৷ স্টার স্পোর্টস খুললেই তো তাকে দেখছে গোটা ভারত!
স্টুয়ার্ট বিনি ও মায়ান্তি ল্যাঙ্গার৷ একজনের এখনও কাপ অভিষেক হয়নি আর অন্যজন, ২০১১ বিশ্বকাপে ছিলেন, কিন্ত্ত ২০১৫ বিশ্বকাপে সুপারহিট৷ যিনি ২০০৩ বিশ্বকাপের মন্দিরা বেদীর মতো স্প্যাগেটি টপ দিয়ে বাজিমাত করছেন না, তার বদলে তার ইউএসপি কিশোরীর চাপল্য আর অতিরিক্ত জ্ঞান জাহির না করার প্রবণতা৷ সময় করাই ছিল, ওয়াকায় ঠিক সময়মতো সাক্ষাৎকারের জন্য হাজির মায়ান্তি৷ ‘অ্যাঙ্করিংটা এখন আমার কেরিয়ার, নিজের একশো শতাংশ এখানে দিচ্ছি আর প্রতিদিনই শিখছি,’ বলছিলেন মায়ান্তি
দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় অহেতুক আগ্রহী নন কেউই, কিন্তু বেঙ্গালুরুর ক্রিকেটমহলে উঁকি মারলেই শোনা যায় স্টুয়ার্ট-মায়ান্তির প্রেমকাহিনি৷ ২০১২ সালে বিয়ে, কিন্তু বিয়ের পরেই বদলে যায় স্টুয়ার্টের ভাগ্য৷ বাংলাদেশ সফরে গিয়ে চার রানে ছয় উইকেট, ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট বাঁচানো ইনিংস৷ বেঙ্গালুরুতে বলা হয়, স্ত্রী ভাগ্যেই বদলে গিয়েছে স্টুয়র্টের ভাগ্য৷
রজার বিনির ছেলের বিশ্বকাপ টিমে থাকা নিয়েও কম পানিঘোলা হয়নি৷ কিন্তু অলরাউন্ডার হিসেবে পারফরম্যান্সের বিচারে তিনিই এখন দেশের এক নম্বর৷ নিউ জিল্যান্ডে দুটো গ্রুপ লিগের ম্যাচে বা নক আউটে তাকে লাগতেই পারে ভারতের৷ মায়ান্তি অবশ্য সেসব নিয়ে ভাবিত নন৷ অকপটে বলছেন, ‘ভারত বিশ্বকাপ জিতবে কি না বা স্টুয়ার্ট খেলবে কি না, সেটা নিয়ে আমি ভাবি না৷ স্টার স্পোর্টসের টিমে আমি একজন সদস্য মাত্র৷ ক্রিকেট ভারতের জনপ্রিয়তম খেলা, আমাদের দেশ বিশ্বকাপে খেলে৷ আমার কাজ হলো, কভারেজটা যাতে সবার ভালো লাগে৷ সেটা করতে পারলেই আমি মনে করব কাজটা ঠিকঠাক করতে পেরেছি৷ তা হলেই আমরা কাপ জিতব৷’
কিন্তু আপনি তো ফুটবল-ক্রিকেট দুটোতেই স্বচ্ছন্দ৷ আইএসএল করে উঠেই বিশ্বকাপ ক্রিকেট৷ অসুবিধা হয়নি? এবার হাসছেন মায়ান্তি, ‘সোজা তো নয়ই৷ কিন্তু আমার পক্ষে খুব কঠিন হয়নি, কারণ যখন ছোট ছিলাম, তখন থেকেই সব খেলা ভালোবাসতাম৷ ফুটবল বা ক্রিকেট বলে বাছবিচার করিনি৷ সব খেলাই আমার দেখতে ভালো লাগে৷ ব্যাডমিন্টন, টেবল টেনিস, হকি, সব৷ অলিম্পিকে অ্যাঙ্করিং করতে হলেও আমি কিন্তু পারব৷ কারণ আমি যেকোনো খেলা খুব তাড়াতাড়ি ধরে নিতে পারি৷’
স্পেন যখন ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছিল, ফাইনালের পরে মাঠেই দৌড়ে গিয়ে প্রেমিক ও অধিনায়ক কাসিয়াসকে চুমু খেয়েছিলেন স্প্যানিশ টিভির অ্যাঙ্কর সারা কার্বোনেরো৷ তেমন কিছু কি ভারত বিশ্বকাপ জিতলে হতে পারে না? হাসিতে ফেটে পড়লেন মায়ান্তি, যিনি নিজেকে মোটেই ‘ফিমেল অ্যাঙ্কর’ বলতে চান না, তার বদলে পছন্দের শব্দ স্পোর্টস প্রেজেন্টার৷ ‘এটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? আমি ফুটবল খুব ভালোবাসি৷ ওই ঘটনাটা জানি৷ ওটার সঙ্গে আমাদের কোনো তুলনা হয় না৷ তা ছাড়া এখন তো নক আউটই শুরু হয়নি!’
একটাও রি-টেক হয় না, ম্যাচের আগে প্রতিটা শো-ই লাইভ৷ প্রত্যেক দিন সকালে নিজের মতো করে তৈরি হন মায়ান্তি৷ কী ভাবে? উত্তরটা শুনুন, ‘বিশ্বকাপে ভারত-ইউএই ম্যাচে অ্যাঙ্করিং করছি মানে সেটাই সব নয়৷ অকল্যান্ড ম্যাচে কী হচ্ছে, জানতে হবে, সেটাও শো-তে বলতে হবে৷ মুখস্ত করে এখানে জেতা যায় না৷ কাজটা ভালোবাসতে হবে৷’
যে মেয়ে খেলাকে এত ভালোবাসে, তাকে কে হারাবে? অসম্ভব!