হ্যাপির আনহ্যাপি পরিণতি

SHARE

happirউঠতি নায়িকা নাজনিন আক্তার হ্যাপি। লোকে তাকে তেমন চিনতই না। কিন্তু হঠাৎই টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হন এই মুভি অভিনেত্রী। জাতীয় দলের পেসার রুবেলের সঙ্গে সম্পর্ক এবং এর জের ধরে থানায় ধর্ষণ মামলার পর থেকেই এক নামে পরিচিতি পেয়ে যান হ্যাপি।

এখন হ্যাপি-রুবেল কোনো কিছু মানেই মানুষের কাছে হট কেক। রেডিও ঢাকা এফএমে এসে অন্ধকারের গল্পে নিজের এবং রুবেলের কাহিনী নিজ মুখে শুনিয়েছেন হ্যাপি। জানান কিভাবে সম্পর্ক হয়েছিল এবং গভীরতা কত দূর গিয়েছিল। একই ফ্ল্যাটে তারা কিভাবে থাকতেন। এরপর কিভাবে আবার দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে।

যদিও মামলার পর হ্যাপি শর্ত দিয়েছিলেন, রুবেল তাকে বিয়ে করলে তিনি মামলা তুলে নেবেন। কিন্তু ঢাকা এফএমে তিনি বলেছেন, রুবেলকে আর বিয়ে করতে চান না। বরং প্রতারণার কারণে যেন তার কঠোর শাস্তি হয়, সেটাই চান তিনি।

রেডিওতে একটি ইন্টারভিউয়ে হ্যাপি বলেন, এক বছর ধরে ওর সঙ্গে পরিচয়। শুরুটা হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। ও যে খেলোয়াড় এটা আমি জানতাম না। ওর বাড়ি বাগেরহাটে, আমার বাড়িও বাগেরহাটে। ক্রিকেট আমি ভালো বুঝিও না। প্রথমে ও আমাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। ও ছিল অন্য একটা জগতের মানুষ, আমি আরেক জগতের। এভাবে একটা সময় আমার ফোন নাম্বার চায় রুবেল। এর আগে শুরু থেকেই ফেসবুকে কথা হয়েছে। এর ফোন পেয়ে প্রথমে খারাপ লাগত ও বিরক্ত হতাম। তারপর থেকে আস্তে আস্তে সম্পর্ক হয়েছে।

মার্চের ৮ তারিখে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করি। ও খুব পাগলামি করত। প্রায়ই ওর সঙ্গে ঘুরতে বের হতাম। একদিন গাড়িতে করে ঘুরছিলাম। কোনো কিছু নিয়ে খুব রাগ হওয়ায় আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। ঘটনাটি ঘটেছে স্টেডিয়ামের সামনে। সে আমার পেছন পেছন আসতে থাকে। হঠাৎ দেখি গাড়ি থেকে নেমে সে আমার রিকশা চালাতে শুরু করে। তখন বুঝলাম ও আমাকে সত্যি ভালোবাসে। আরেক দিন সে রাগ করে রাস্তায় বসে পড়ল, কিছুতেই উঠবে না। আর কোনো কিছুই হলেই কান্না শুরু করে দিত। এসব পাগলামি দেখে আমি বুঝতাম ও আমাকে সত্যি ভালোবাসে। এখন মনে হয় সব কিছু অভিনয় ছিল ওর।

ঢাকায় থাকলে প্রতিদিন ওর সঙ্গে দেখা হতো। ওর সঙ্গে অনেক ঘুরেছি। ওর সঙ্গে সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত জমা হয়ে আছে। ওইগুলো ভুলতে পারছি না। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসার পর ঈদের আগের রাতে আমি ওর জন্য একটি পাঞ্জাবি কিনেছি। সেই পাঞ্জাবি ওকে দিতে আমি বাগেরহাটে গিয়েছিলাম। বাসায় মিথ্যা কথা বলে আমি একাই রুবেলকে পাঞ্জাবি উপহার দিতে ওদের বাড়িতে গিয়েছি। কিন্তু সেটা আমি ওকে দিতে পারিনি। আমি সারা রাত কান্নাকাটি করে পরে ঢাকায় ফিরে আসি। আমি ওকে বলতাম, আমাকে বিয়ে করো। ও বলত, আমি তোমাকে বিয়ে করব।

ওর সব কথাই আমি শুনতাম। যখন যা বলত তাই করতাম। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে দিত না আমাকে। একা একা মার্কেটে যেতে দিত না। ওকে মনে হয়েছে ও শুধুই আমার, আর কারো নয়। আমরা অনেক দুষ্টুমি করতাম। নয় মাসে ৯০০ বার আমাদের মধ্যে ব্রেকআপ হয়েছে। এমন করত, তারপর আবার ফোন করে কাঁদত।

আমি চাইতাম ওর সঙ্গে সারা জীবন থাকব। রুবেল প্রতিদিন নেশা করত। অতিরিক্ত নেশা করত। আমি তাকে নিষেধ করতাম।

সম্পর্কে ভাটা বিষয়ে হ্যাপি বলেন, যখন আমি জানলাম ওর ফ্যামিলি ওকে বিয়ে করাতে চাইছে। তখন আমি ওকে বলেছি, তুমি আমাদের সম্পর্কের কথা বাবা-মাকে জানাও। আমাদের স্বপ্নের কথা বলে দাও। কিন্তু সে জানায়নি। উল্টো আমাকে খারাপ মেয়ে বলে গালি দিয়েছে। মিডিয়ায় কাজ করলে নাকি আমরা খারাপ হয়ে যাই।

তারপরও আমি মনে করতাম, যেহেতু ভালোবেসে ফেলেছি এখন তো ফিরতে পারব না। ওকে অনেক মিস করেছি। ওকে ছাড়া ভালো লাগত না। ওর কথায় ফিল্ম ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু ওর মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখিনি।

মামলার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে হ্যাপি বলেন, এ ব্যাপারটা বলতে গেলে অনেক কিছু চলে আসে। ওকে আমি এত বেশি ভালোবাসি। কিন্তু ও বলে দেয়, আমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। অথচ তার সঙ্গে তার বাসায় স্বামী-স্ত্রীর মতোই থাকতাম। বিয়ে না করার কথা শুনে আমি অন্য রকম হয়ে যেতাম। ওর বাবা-মা ছাড়া আমিই ওকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম। একদিন হঠাৎ করেই বলল, তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ব্রেকআপ। তুমি আমাকে ফোন দিও না। আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না।

এরপর একদিন আমাকে বলে, আমি কয়েকটি মেয়েটি নিয়ে মদ খাচ্ছি।

তখন রাতেই ওর বাসায় যাই। গিয়ে দেখি ওর বাসায় দু’টি মেয়ের জুতা। ভেতরে গিয়ে দেখি মদের বোতল নিয়ে সবাই খাচ্ছে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি আত্মহত্যা করব। তখন আমি মদের বোতল ভেঙে নিজের হাত কেটেছি। এরপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। সকাল পর্যন্ত আমার জ্ঞান ফেরেনি।

যখন আমি বলেছি তার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তখন অন্য ধরনের রূপ আমাকে দেখাত। দুই দিন পর ফের ও আমাকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। তখন আমি সব ভুলে যাই। আমারও খারাপ লেগেছিল। মেয়ে দু’টিকে দুই দিনের পরিচয়ে বাসায় সারা রাত রাখে। এ ব্যাপারটাই আমার কাছে মেনে নেয়া কঠিন ছিল। তখন ভাবলাম, মানুষ তো একটু ভুল করেই! কিন্তু সত্যি সত্যি ও আমার সঙ্গে নয় মাসে প্রেমের ম্যাচ খেলেছে।

ওর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মতোই থেকেছি, কিন্তু আমিও বুঝতে পারতাম না যে আমি ভুল করে যাচ্ছি। আবার ভুল বোঝার মতো ক্ষমতাও ছিল না। মামলা করার আগের দিন সে বলেছে, আমাকে বিয়ে করতে পারবে না। তখন আমি ওকে বলেছি, কেন তুমি বিয়ে করবে না? এরপর মামলা করতে চেয়েছি। থানায় যাই। তখন থানা থেকে বিসিবিতে ফোন করে। তখন কিছু খেলোয়াড় বিষয়টা মীমাংসা করতে থানায় আসে। ওই সময় রুবেল বলে, আমি তোমাকে বিয়ে করব। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিই মামলা করব না।

কিন্তু তাতেও কোনো কিছু বদলায় না। আবারও রুবেল বলে, বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। বিশ্বকাপের পরেই ও বিয়ে করবে। এ সময় ওকে বলি, আমাদের কথাগুলো রেকর্ড করা আছে। হঠাৎ সে পাল্টে যায়। অনেক ভালো ব্যবহার করতে থাকে। মামলা করার আগের দিন অনেক ভুলিয়ে-ভাগিয়ে আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়, মোবাইলের অনেক কিছু ডিলিট করে দেয়। তখন আমি বলি, তোমার সঙ্গে আমার নয় মাসের কিসের সম্পর্ক ছিল? তখন সে বলে, তুমি মামলা করবে? করো, কিছুই করতে পারবে না। মামলা করে কিছুই হবে না। আমি তোমার বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার মানহানি মামলা করব।

অথচ তার সঙ্গে অলিখিত স্বামী-স্ত্রী হিসেবে থাকতাম। ও আমাকে বউ বলে ডাকত। আমি নিজেকেও তার স্ত্রী ভাবতাম। আমি এখন চাইলেও কাঁদতে পারি না। চাইলেও হাসতে পারি না।

এখন ওর কথা শুনলেই ঘৃণা হয়। ওকে আমি ঘৃণা করি। এখন সত্যি রুবেল নামের এ মানুষের প্রতি ঘৃণা হয়। সে আমাকে নিয়ে খেলল। রুবেলের মতো জানোয়ারকে আমি আর কখনো বিয়ে করব না।

পরবর্তী সময়ে হ্যাপির দায়ের করা মামলায় রুবেলকে জেলে যেতে হয়। তারপর ক্রিকেট বোর্ডের সুপারিশে ২০১৫’র বিশ্বকাপে খেলার জন্য রুবেলকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়।