পিকে নিয়ে ভারতে কট্টর হিন্দু সংগঠনগুলো সহিংস হয়ে ওঠছে

SHARE

বলিউডের ব্লকবাস্টার ছবি পিকে নিয়ে ভারতে কট্টর হিন্দু সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ ক্রমেই সহিংস আকার নিচ্ছে।image_112335_0

গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় ভোপাল, আহমেদাবাদ, দিল্লি-সহ বিভিন্ন শহরে পিকে-র পোস্টার ছেঁড়া হয়েছে, সিনেমা-হলগুলোতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি হলে ছবির প্রদর্শনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।ছবিটি হিন্দুবিরোধী, এই যুক্তিতে পিকে বয়কট করার ডাক দিয়েছেন রামদেব বা শঙ্করাচার্যর মতো ধর্মীয় নেতারাও।

এই তীব্র প্রতিবাদের মুখে ছবির নির্মাতারাও এখন বলছেন, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া তাদের উদ্দেশ্য ছিল না।

বিভিন্ন শহরে ভাঙচুর, বিক্ষোভ
আহমেদাবাদের শিবা সিনেমা হলের সামনে মঙ্গলবার বিকেলের ঘটনা। সেখানে গত দিন দশ-বারো ধরেই দেখানো হচ্ছিল এবছরের বলিউড সুপারহিট, আমির খানের ছবি পিকে।

কিন্তু ছবিটি হিন্দু-বিরোধী, এই যুক্তিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের কর্মীরা আচমকা সেখানে হামলা চালায়, তুমুল ভাঙচুর চালিয়ে বন্ধ করে দেয় ছবিটির প্রদর্শন।

গত দুতিন দিনে অবিকল একই রকম দৃশ্য দেখা গেছে দিল্লি, ভোপাল বা মুম্বাই বা বেরিলির মতো দেশের নানা শহরেই – যেখানে ভিএইচপি বা হিন্দু সেনার কর্মীরা এসে পিকে-র শো বন্ধ করে দিয়েছে।

এই বিক্ষোভকারীরা বলছেন, পিকে ছবিতে হিন্দু ধর্মকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করা হয়েছে – এমন কী হিন্দু দেবতা শিবকেও অপমান করা হয়েছে। ফলে এই ছবি কিছুতেই দেখাতে দেওয়া চলবে না।

সেন্সর বোর্ড কি চোখ বন্ধ রেখে এই সব ছবির ছাড়পত্র দিচ্ছে, সেই প্রশ্নও তুলছেন তারা।

আসলে ১৯ ডিসেম্বর পিকে-র মুক্তির ঠিক পর পরই যে বিতর্ক মূলত ট্যুইটার বা ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল, সেই প্রতিবাদ এখন রাস্তায় নেমে এসেছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তেই।

ছবিটি হিন্দুবিরোধী কি না, সেই প্রশ্নে তখন ট্যুইটারে দেখা গিয়েছিল বয়কটপিকে আর উইসাপোর্টপিকে নামে পাল্টাপাল্টি দুটি হ্যাশট্যাগ – কিন্তু এখন বিক্ষোভ আর ভাঙচুরে পিকে-বিরোধীদেরই পাল্লাভারী।

বয়কটের ডাক, প্রশংসার বন্যা
ছবিটি বর্জন করার ডাক দিয়ে সেই বিরোধিতাকেই আরও উসকে দিয়েছেন শঙ্করাচার্য বা বাবা রামদেবের মতো ধর্মীয় নেতারা।

রামদেব যেমন বলেছেন, যার যা খুশি মুখ খুলে বলে যাবে, যা খুশি দেখিয়ে যাবে – এতো ভীষণ লজ্জার ব্যাপার। যে সব লোক এধরনের কাজ করছে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা উচিত, তাদের বানানো ছবিও বয়কট করা দরকার।

এর পাশাপাশি কিন্তু ক্রিকেট লেজেন্ড শচিন টেন্ডুলকার থেকে শুরু করে বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি- প্রত্যেকেই পিকে দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। আদবানি তো এমনও মন্তব্য করেছেন যে প্রত্যেক ভারতীয়রই এই ছবি দেখা উচিত।

কিন্তু প্রতিবাদের মাত্রা বাড়ছে দেখে পিকে-র নির্মাতারাও আর নীরব থাকতে পারছেন না।

ছবির মুক্তির বারো দিনের মাথায় এসে পরিচালক রাজকুমার হিরানি অবশেষে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, গান্ধী ও সন্ত কবীরের ভাবধারায় নির্মিত পিকে কোনো ধর্মকে অপমান করেনি. শুধু ধর্মের নামে ভন্ডামির নিন্দে করেছে।

সেন্সর বোর্ড পিকে-র পাশেই
রাজকুমার হিরানি ও ছবির নির্মাতা সংস্থার জন্য সুখবর হলো, দেশের সেন্সর বোর্ড কিন্তু পিকে-র পাশেই থাকছে।

সেন্সর বোর্ডের চেয়ারপার্সন লীলা স্যামসন বলেছেন, ‘‘এমন বিক্ষোভ আগেও অনেক হয়েছে – আর বহু ক্ষেত্রেই তাতে প্ররোচনাও থাকে। এটা দুর্ভাগ্যজনক, কারণ ছবিটা ভালো না-লাগলে আপনি যাবেন না – তাহলেই তো হলো।’’

তিনি আরও বলেছেন, ‘‘মানুষকে যদি আপনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেন – তাহলে তো নানা মত আপনাকে শুনতেই হবে, সব আপনার মতের সঙ্গে হয়তো মিলবেও না।’’

পিকে-র কোনো দৃশ্য যে তারা পাল্টাতে বলবে না, সেন্সর বোর্ড সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও এদিন পিকে দেখার পর তার রাজ্যে ছবিটিকে করমুক্ত ঘোষণা করেছেন।

যাবতীয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সত্ত্বেও ছবিটির প্রযোজকদের জন্য আশার কথা হলো, প্রথম বারোদিনেই পিকে আড়াইশো কোটি রুপিরও বেশি আয় করে নতুন রেকর্ড গড়ার দিকে এগোচ্ছে।– বিবিসি