ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে প্রদর্শনীর পাশাপাশি সেমিনারেও ভিড়

SHARE

digital world11নানা শ্রেণী-পোশার মানুষের ভিড়ে তৃতীয় দিন বুধবারও সরব ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৫। বেলা যতই বেড়েছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের সমাগমে মুখর হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেল কেন্দ্র। এক ছাদের নিচে সরকারি-বেসরকারি নানা সেবার পসরা দেখতে প্যাভিলয়ন আর স্টলের সামনে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। দল বেঁধে যোগ দিচ্ছেন সেমিনারগুলোতে।

সম্মেলন প্রাঙ্গণে প্রযুক্তির ব্যবহারে মানুষের হাতে সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর  তুলে দিতে নিজেদের ‘ডিজিটালাইজ’ হিসেবে উপস্থাপন করছে। তুলে ধরা হচ্ছে ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর সেবার ধারণা। এর বাইরে তথ্যপ্রযুক্তির নানা বিষয়ে চলমান সম্মেলনে যোগ দিতে তরুণদের মধ্যে আগ্রহ দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি।

সকালে প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে প্রান্তিক মানুষের কাছে আরো সহজে পৌঁছানো যায়, তা নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণের মিডিয়া বাজারে অনুষ্ঠিত হয় ‘পটেনশিয়াল অব ই-লার্নিং টু রিচ দ্য আনরিচ’ শীর্ষক আলোচনা সভা। সভায় পর্যাপ্ত বাংলা কনটেন্ট তৈরি করে ই-লার্নিং পদ্ধতি দূরশিক্ষণ কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়।

অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) ই-লার্নিং বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ফারুক আহমেদের পরিচালনায় সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এটুআই ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট অফিসার শাহ মুহাম্মাদ সানাউল হক। প্যানেল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক-এর জ্যেষ্ঠ পরিচালক আসিফ সালেহ, মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ড. শওকত আলী, কোরিয়া নলেজ লিমিটেড চিফ অপারেটিং অফিসার মুবাশ্বের মুনাফ, বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন এর হেড অব রিসার্চ সঞ্জিব সাহা এবং আফজাল হোসেন সারওয়ার।

বক্তারা বলেন, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার চেয়ে ই-লানিং পদ্ধতিতে শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় এবং এই পদ্ধতিতে খরচ কম। শিক্ষার্থীদের কাছে এটি বারবার শিক্ষণযোগ্য।

এদিকে একই সময়ে উইন্ডি টাউনে অনুষ্ঠিত হয় ‘আইসিটি ফর বেটার ম্যানেজেবিলিটি ইন প্রাইভেট সেক্টর’ শীর্ষক সম্মেলন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। মেধাভিত্তিক অর্থনীতিনির্ভর দেশ গঠনে বিদেশে জনশক্তি রফতানিতে ‘দক্ষ শ্রমিক’ তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, সরকার ‘দক্ষ শ্রমিক’ তৈরির কাজে হাত দিয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশ ‘দক্ষ শ্রমিক’ তৈরিতে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

আমু বলেন, “সফটওয়্যার নির্মাণ শিল্পে আমাদের মেধাকে কাজে লাগানো সম্ভব। এর মাধ্যমে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে বিপ্লব ঘটানোর পাশাপাশি সফটওয়্যার রফতানির সুযোগ তৈরি হবে। এ সময় উন্নত দেশগুলোতে আইটি প্রফেশনাল ও দক্ষ জনবল রফতানি করে রেমিট্যান্স বাড়ানো যেতে পারে।” সফটওয়্যারের রফতানির ক্ষেত্রে সব সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান শিল্পমন্ত্রী।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়াতুল্লাহ আল মামুন এবং বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট আতিকুল ইসলাম। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েসন সভাপতি শেখ কবির হোসেন, বিএসএইচআরএম সভাপতি মোশাররফ হোসেন, সিএসএল সফটওয়্যার রিসোর্স লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম রাউলি, বেসিস ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদুল হাসান এবং মহাসচিব উত্তম কুমার পাল। সম্মেলন পরিচালনা করেন বেসিস যুগ্ম সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল।

অন্যদিকে গ্রিন ভিউ-এ অনুষ্ঠিত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার দিকনির্দেশনা নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ সেশন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেভসটিম ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল আমিন কবির। বক্তব্য দেন পেওনার বাংলাদেশ কান্ট্রি অ্যাম্বাসেডর রিফাত আহমেদ।

একই স্থানে অনুষ্ঠিত ‘জ্ঞানভিত্তিক সমাজ’ শীর্ষক সেমিনারে তরুণদের জ্ঞানভিত্তিক সমাজের রূপান্তরের ওপর তথ্যচিত্র তুলে ধরেন প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার। তিনি সমাজ-সভ্যতার রূপান্তর কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলেছে তা তুলে ধরেন।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, “কৃষিযুগ থেকে সরাসরি আমরা ডিজিটাল যুগের প্রবেশ করেছি। আমাদের এখন ডিজিটাল শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণসমাজ তৈরি করতে হবে, যারা আগামী প্রজন্মকে নেতৃত্ব দেবে।  শিশু-কিশোররা প্রযুক্তিপণ্য নিয়ে আগ্রহী। তাদেরও প্রযুক্তির জ্ঞানে শিক্ষিত করে তুলতে হবে।”

মোস্তাফা জব্বার বলেন, “জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনতে হবে। আগামী ২০ বছরের মধ্যে সরকারব্যবস্থা, নির্বাচন প্রক্রিয়া ও রাষ্ট্রযন্ত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। প্রযুক্তির প্রসার এই পরিবর্তনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রযুক্তিবিদ মাহবুব-উজ-জামান, ইন্টেল ইন্ডিয়ার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক আশুতোষ চন্দ এবং ভারতের ক্যাডেন্স ডিজাইন সিস্টেমস এর পরিচালক বিশ্বজিৎ বেতাই।