রোববার থেকে ৭২ ঘণ্টা হরতাল

SHARE

20 dolদুই দিন বিরতি দিয়ে রোববার থেকে আবার হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। রোববার সকাল ছয়টা থেকে বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টা হরতাল চলবে বলে শুক্রবার রাত নয়টায় এক বিবৃতিতে জানান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালা্হ উদ্দিন আহমেদ।

বিবৃতিতে বলা হয়, দেশব্যাপী ক্রসফায়ারের মাধ্যমে অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা, গুলি করে পঙ্গু ও আহত করা, গণগ্রেফতার, বিচারব্যবস্থা ও গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতা ও সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে এই হরতাল ডাকা হয়েছে।

বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সব  নেতাকর্মী ও গণতন্ত্রকামী জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচি পালনের জন্য ২০ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আহ্বান জানান সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

২০ দলের ৫ জানুয়ারির সমাবেশ সামনে রেখে সরকার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করলে ৩ তারিখ থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে আসছে ২০ দল। এই অবরোধের মধ্যেই গত রোববার থেকে ১০৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করে তারা। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন বাদ দিয়ে আবার রোববার থেকে ৭২ ঘণ্টার হরতালের ফাঁদে পড়ল দেশ।

হরতাল আহ্বানসংবলিত বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গদি দখলকারী অবৈধ সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র হত্যাকারী নব্য বাকশালের রূপকার শেখ হাসিনার একক কর্তৃত্বে ও নেতৃত্বে ভয়াবহ দুর্নীতি, দুঃশাসন, অত্যাচার-নির্যাতনে দেশের মানুষের আজ নাভিশ্বাস উঠেছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী সন্ত্রাসী এবং দলীয়করণকৃত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের লুটপাটের বিচরণভূমিতে পরিণত হয়েছে প্রিয় স্বাধীন মাতৃভুমি।”

এই অবস্থা থেকে দেশের সব গণতন্ত্রকামী মানুষ মুক্তি চায় উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন বলেন, “তারা চায় মুক্ত স্বাধীন পরিবেশ, যেখানে থাকবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীনভাবে চলাফেরার ও সমাবেশের অধিকার, আইনের শাসন, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা।  সেটা অর্জন করা যেতে পারে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল জনগণতান্ত্রিক সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।”

ক্ষমতাসীন দলকে গণতন্ত্র হত্যাকারী হিসেবে অভিহিত করে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, “নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৫-৯৬ সালে এই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন হয়। নৈরাজ্য সৃষ্টি, রাস্তায় সরকারি কর্মকর্তাদের দিগম্বর করা, রাষ্ট্রীয় এবং জনগণের সহায়-সম্পদ বিনষ্ট করে তারা সহিংস আন্দোলন করেছিল। তাদের আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের কারণে তখন এসএসসি পরীক্ষা প্রায় তিন মাস পেছাতে হয়েছিল। সেই ইতিহাস দেশের জনগণ এখনো ভোলেনি।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “বর্তমানে নতুন বাকশাল কায়েম করার জন্য শেখ হাসিনাই সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিলেন।  করলেন একতরফা প্রহসনের নির্বাচন। নিবন্ধিত ৪২টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপিসহ ৩৭টি গণতান্ত্রিক দল সেই নির্বাচন বর্জন করলো। আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত কয়েকটি এতিম সংগঠন মিলেমিশে বিনা ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৫ শতাংশ ভোটের সরকার গঠন করলো। সেই সংসদে সরকার ও বিরোধী দল এক ও অভিন্ন। মূলত দেশের রাজনৈতিক সংকট এখানেই।”  আইনশৃঙ্খলা সংকটের নামে তাকে পাশ কাটানোর অপচেষ্টা জাতিকে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিপতিত করবে বলে বিবৃতিতে হুঁশিযার করা হয়।

বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে একটি  বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে অভিযোগ করে সালাহ উদ্দিন বলেন, “আন্দোলনকারী ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের প্রতিদিন ক্রসফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ করে চিরতরে পঙ্গু বানানোর অমানবিক নিষ্ঠুরতা গাণিতিক হারে বাড়ছে। বেওয়ারিশ লাশের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। বেওয়ারিশ নামে বিরোধীদলীয় অসংখ্য নেতাকর্মীর লাশ দাফন করা হচ্ছে। গণগ্রেফতারের কারণে উপচে পড়া অবস্থা দেশের কারাগারগুলোর।”

‘ক্রসফায়ারে’ শিবির ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীর হতাহত করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়। বলা হয়, “গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের তথ্য সম্পাদক শাহাবুদ্দিন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জামায়াত নেতা শহীদুল ইসলাম এবং চৌদ্দগ্রাম শিবির সভাপতি শাহাব পাটোয়ারীকে ক্রসফায়ারে হত্যা  করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ করে চিরতরে পঙ্গু করা হয়েছে সাতক্ষীরা পৌর ছাত্রদল সভাপতি আবদুল মজিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির নেতা হাবিবুর রহমান, মফিজুর রহমানসহ বিএনপি ও জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মীকে।”

“অথচ আমার দেখতে পাচ্ছি চৌদ্দগ্রাম ট্র্যাজেডির মূল হোতা এবং পেট্রলবোমাসহ আটক যুবলীগ নেতা মানিক ও বাবুলকে রেলমন্ত্রীর নির্দেশে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পত্রিকার খবরে প্রকাশ-নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে বোমা বানাতে গিয়ে আহত হয়েছে ছাত্রলীগের চার কর্মী যথাক্রমে রহমত উল্লাহ, শাহীন মিয়া, কবির ও রাসেল। তাদের পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইতিপূর্বে বঙ্গবন্ধু এভিন্যুতে গত ১০ জানুয়ারী বোমা বিস্ফোরণের সময় এক ছাত্রলীগ কর্মী সাদিককে আটক করার পর পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। এভাবে রাজশাহী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা, খুলনা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-নেতা-কর্মী পেট্রোল বোমাবাজী, ককটেল ফাটানো এবং বোমা তৈরীর সময় হাতে নাতে ধরা পড়লেও উপরের নির্দেশে পুলিশ তাদেরকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।”

বিবৃতিতে আরো অভিযোগ করা হয়, “মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের ধর্ম সম্পাদক সাজ্জাদ মোল্লা, ছাত্রলীগ নেতা লিমন ও রানা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গাড়িতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের সময় ধরা পড়ে। মাগুরা পুলিশ সুপার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও তাদের গ্রেফতার না করে উপরের নির্দেশে ছেড়ে দেয়া হয়। এই জাতীয় বহু ঘটনা জনগণের দৃষ্টিতে আসার আগেই পুলিশ সরকারি নির্দেশে তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। আমরা এ সব তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারি।”

‘গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার  আন্দোলন কলুষিত করতে সরকার  অপচেষ্টা চালিয়েই যাবে্’- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা  পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, যাত্রাবাড়ী ও চৌদ্দগ্রাম ট্র্যাজেডির মূল পরিকল্পনাকারী আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং বাস্তবায়নকারী তার মন্ত্রী ও নেতা-কর্মীরা।  আমরা এই জঘন্য অমানবিক ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য তাদের আহ্বান জানাই।” বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনগণের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে সরকারকে সতর্ক করা হয়।

রোববার থেকে আবার হরতাল আহ্বানের কারণ হিসেবে বিবৃতিতে বলা হয়, “দেশব্যাপী ক্রসফায়ারের মাধ্যমে অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা, গুলি করে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে পঙ্গু ও আহত করা, দেশব্যাপী বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীসহ নিরীহ জনগণকে গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে; জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের দাবিতে; বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ও কুক্ষিগতকরণের প্রতিবাদে; সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদে; জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতাও সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে ৮ ফেব্রুয়ারি রোববার সকাল ছয়টা থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত চলমান অব্যাহত অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি ৭২ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল পালিত হবে। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সকলব নেতাকর্মী ও গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচি পালনের জন্য ২০ দলীয় জোট নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। ”