ডায়াবেটিসের ম্যাজিক পিল

SHARE

pilডায়াবেটিসের একটি ম্যাজিক পিল আবিষ্কার করে ফেলেছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, প্রতিদিন নিয়মিত পিলটি সেবনে শারীরিক গঠন পুনর্বিন্যস্ত হয়ে টাইপ-১ ও টাইপ-২ উভয় ধরনের ডায়াবেটিস রোগ সেরে যায়। সাধারণত মানুষের অন্ত্র বা নাড়িভুঁড়িতে থাকা একটি উপাদান থেকে এ প্রোবায়োটিক পিলটি আবিষ্কার করেছেন নিউইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাদের দাবি, পিলটি ডায়াবেটিস রোগীর অগ্ন্যাশয় থেকে ব্লাড সুগার অন্ত্রে স্থানান্তর করে। সাধারণত সুস্থ মানুষের অগ্ন্যাশয় ইনসুলিনকে পরিশোধন করে গ্গ্নুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয় হয় কোনো ইনসুলিন উৎপাদনই করে না কিংবা যে পরিমাণ উৎপাদন করে, তা হরমোনের জন্য যথেষ্ট নয়। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, প্রোবায়োটিক ম্যাজিক পিলের চিকিৎসা রক্তে গ্গ্নুকোজ লেভেল ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। তাদের মতে, এই পিলের উচ্চতর ডোজ উভয় ধরনের ডায়াবেটিস নিরাময়ে সক্ষম। মানুষের অন্ত্রের নির্যাস থেকে তৈরি এই নতুন ম্যাজিক পিলে রয়েছে জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল আশা করছে, তাদের তৈরি করা পিলটি মানুষের শারীরিক বিন্যাস পাল্টে দিয়ে টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিরাময়ের পথ উন্মোচন করবে। গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক জন মার্চ বলেন, তাদের আবিষ্কারটি ‘নীতিগতভাবে প্রমাণিত’ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন এটা মানুষের মাঝে ভালোভাবে কাজ করলেই কেল্লা ফতে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য মানুষকে আর অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে না।’

ডায়াবেটিস একটি জটিল রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের রক্তে থাকে প্রচুর পরিমাণ গ্গ্নুকোজ। কারণ, তাদের দেহ ওই গ্গ্নুকোজ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম নয়। আর ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির অগ্ন্যাশয় হয় ইনসুলিন উৎপাদনে একেবারেই অক্ষম কিংবা পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না। এমনকি উৎপাদিত ইনসুলিন যথাযথ কাজে লাগাতেও অক্ষম তাদের দেহ। অথচ দেহের জন্য ইনসুলিন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এটা দেহকোষের তালা খুলে দেয়, যাতে কোষে গ্গ্নুকোজ প্রবেশ করে শক্তি জোগাতে পারে। আর ডায়াবেটিস রোগীদের দেহ গ্গ্নুকোজকে জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগাতে অক্ষম, যে কারণে তাদের দেহে গ্গ্নুকোজের মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়তেই থাকে।
অধ্যাপক মার্চের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল হিউম্যান প্রোবায়োটিক নামে একটি ল্যাকটোব্যাকিলাস ছাঁকনি তৈরি করেছে, যা সাধারণত মানুষের অন্ত্র বা নাড়িভুঁড়িতে বিদ্যমান। এ প্রোবায়োটিক পেপটাইড নামের একটি হরমোনকে পরিশোধন করে। দেহে খাবার প্রবেশ করলে পেপটাইড হরমোন তা থেকে ইনসুলিন তৈরি করে। গবেষক দল প্রথমে প্রোবায়োটিক পিলটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ইঁদুরের ওপর ৯০ দিন পর্যন্ত প্রয়োগ করে। এ সময় তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অন্য ইঁদুরের গ্গ্নুকোজ লেভেলের সঙ্গে পিল প্রয়োগ করা ইঁদুরের গ্গ্নুকোজের তুলনা করে দেখেন। এতে দেখা যায়, পিল প্রয়োগ করা ইঁদুরগুলোর গ্গ্নুকোজের মাত্রা অন্য ইঁদুরগুলোর চেয়ে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
এর পর আরেকটি পরীক্ষার ফল আরও চমকপ্রদ। বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, ডায়াবেটিস আক্রান্ত ইঁদুরের অন্ত্রের উচ্চভাগ এমন একটি কোষে পরিণত হয়েছে, যা অগ্ন্যাশয়ের কোষের মতো কাজ করছে। আর সুস্থ মানুষের অগ্ন্যাশয়ের কোষ ইনসুলিন পরিশোধন করে গ্গ্নুকোজের মাত্রায় ভারসাম্য রক্ষা করে।
সম্প্রতি ডায়াবেটিস জার্নালে এই গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ হয়েছে। অধ্যাপক মার্চ আরও বলেন, প্রোবায়োটিক পিল প্রয়োগের পর ডায়াবেটিস আক্রান্ত ইঁদুরের দেহে গ্গ্নুকোজ সুস্থ ইঁদুরের দেহের গ্গ্নুকোজের সমপর্যায়ে নেমে আসে। তিনি জানান, এখন তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে প্রোবায়োটিক পিলের উচ্চতর ডোজের পরীক্ষা চালানো। যেন এটা প্রমাণ করা যায় যে, ওষুধটি উভয় ধরনের ডায়াবেটিস নিরাময়ে সক্ষম। আর এ পরীক্ষা সফল হলে এটাকে পূর্ণাঙ্গ পিল হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের সেবনের জন্য বাজারজাত করা হবে। প্রতিদিন সকালে তারা ওষুধটি সেবন করবেন। এর মাধ্যমে মুখে হাসি ফুটবে বিশ্বের কোটি কোটি ডায়াবেটিস রোগীর। চিকিৎসাবিজ্ঞানে হবে নবদিগন্তের উন্মোচন।