দেশের চিপা গলি আর হাঁটা পথের প্যানারোমা ভিউ তুলছে গুগল

SHARE

google striআনুষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল ট্যুর শুরু করলো বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বাংলাদেশে স্ট্রিট ভিউ ট্রেকার এবং ওয়্যারেবল ব্যাকপ্যাক নিয়ে চালু হলো পায়ে চলা পথের দৃশ্য ধারণ কার্যক্রম। এরফলে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বা বহুমাত্রিক উপায়ে পায়ে হাঁটার রাস্তাগুলোর ছবি তোলা যাবে।

আর স্ট্রিট ভিউ ট্রেকারের সাহায্যে গুগল বাংলাদেশের আরো অনেক অফ-রোড বা জনগণ কম চলাচল করে এমন সব রাস্তার ছবি ও মানচিত্র তুলে ধরবে; যা সবাই অনলাইনের মাধ্যমে দেখতে পারবেন।

গুগল স্ট্রিট ভিউ-এর মাধ্যমে থ্রিডি মানচিত্রের ৬৫টি দেশের নির্বাচিত তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ। শুরুতে জাতীয় সংসদ ভবন ও দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির সহ ৪২টি পর্যটন স্থাপনা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রপলিটনের কোনাকাঞ্চিসহ বিস্তৃত পরিসরের পথ চিত্র উন্মুক্ত হলো বিশ্বদুয়ারে।

বৃহস্পতিবার হোটেল সোনারগাঁও আনুষ্ঠানিকভাবে এই পথচিত্র উন্মোচন করেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গুগল এশিয়া প্যাসিফিক পাবলিক পলিসি পরিচালক অ্যান লাভিন এবং প্রকল্প সহযোগী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল (অ্যাডমিন) এবং এটুআই প্রকল্পের পরিচালক জনাব কবির বিন আনোয়ার।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গুগল’র গণমাধ্যম মুখপাত্র জেফরি ইউসোফ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, ইউএসএআইডি বাংলাদেশ মিশনের পরিচালক মিজ জানিনা জারুজেলস্কি, অ্যাক্সেস টু ইন্ফরমেশন অনির চৌধুরী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কানো জায়গার স্ট্রিট ভিউ বা রাস্তার চিত্র দেখতে হলে ম্যাপ বা মানচিত্রের একেবারে ডানদিকে নিচে গিয়ে অরেঞ্জ বা কমলা রংয়ের ‘পেগম্যান’-এর ওপর ক্লিক করতে হবে। সেখানেই নীল রংয়ে ওই রাস্তাটি দেখা যাবে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনেও গুগল ম্যাপ সার্চ করেও সরাসরি কাঙ্খিত পথচিত্র দেখা যাবে।

গুগলের এই সুবিধা চালুর ফলে যে কেউই গুগল ম্যাপ দেখে যেমন অনায়াসে পরিচিত ও অপরিচিত রাস্তা ধরে গাড়ি চালিয়ে কাজের জায়গা বা সভাস্থলে পৌঁছানোর পাশাপাশি নিজ শহরের রাস্তাঘাট সম্পর্কে আরও নিবিড়ভাবে জানতে পারবেন। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরাও তাদের ওয়েব সাইটগুলোতে গুগল ম্যাপের লিংক যুক্ত করে ব্যবসায়িকভাবে উপকৃত হতে পারেন। উদাহরণস্বরুপ- হোটেলগুলো যদি তাদের নিজ নিজ ওয়েবসাইটে গুগল ম্যাপ সংযুক্ত রাখে তাহলে সম্ভাব্য গ্রাহকেরা রাস্তার পাশে হোটেলের অবস্থান কেমন এবং হোটেলের আশপাশের পরিবেশটাও বা কী রকম সেই ধারণা পাবেন।

গুগলের এই সুবিধা চালুর ফলে সারা বিশ্বের মানুষের জন্য ডিজিটাল উপায়ে বাংলাদেশের রাজধানীর কোনো সেতু থেকে শুরু করে বন্দরনগর চট্টগ্রামের উপক‚লীয় এলাকার পথচিত্র বা রাস্তার মানচিত্র ৩৬০ ডিগ্রি কোণ থেকে জেনে নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই সুবাদে তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের বলেন, “বাংলাদেশে ৬৫তম দেশ হিসেবে স্ট্রিট ভিউ বা পথচিত্রের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে মঞ্চে উপস্থিত হতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। স্ট্রিট ভিউ একটি চমকপ্রদ প্রযুক্তি কারন এটি আইসিটি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যটন থেকে ব্যবসা পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের জন্য সুবিধা নিয়ে আসবে। ভিশন ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ এর লক্ষ্যে সরকার এইসকল খাত এবং সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের পাশাপাশি আইসিটি প্রযুক্তির বর্ধিত ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি পরিষেবা বাড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।”

বাংলাদেশ সরকারের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন কর্মসূচি প্রকল্পের পরিচালক জনাব কবীর বিন আনোয়ার বলেন, “এই অংশীদারির ভিত্তিতে এ ধরনের একট ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। এতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার রুপকল্প বাস্তবায়নের মৌলিক উদ্দেশ্য ও প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হয়েছে। এর ফলে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে বলে আমরা মনে করি। এখন থেকে বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে থাকা মানুষজন গুগল ম্যাপের সাহায্যে স্ট্রিট ভিউ বা পথচিত্র ব্যবহার করে আমাদের দেশ, মানচিত্র ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন এমনটা ভেবে আমরা অত্যন্ত খুশি।’’

গুগল এশিয়া প্যাসিফিকের পাবলিক পলিসি পরিচালক অ্যান লাভিন বলেন, ‘‘আমরা আশা করি যে নতুন এই স্ট্রিট ভিউ বা পথচিত্র বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ নতুন প্রেক্ষাপটে তুলে ধরবে। কারণ এতে ঢাকা শহরের ব্যস্ত রাস্তা থেকে শুরু করে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় তীর্থস্থানগুলোর ছবিও দেখা যাবে। আর এই পথচিত্র বৈশ্বিক পর্যটকদেরও বাংলাদেশ ভ্রমণে আকৃষ্ট করবে। আমরা গুগল ম্যাপের মাধ্যমে আগামী মাসগুলোতে বাংলাদেশের আরও অনেক জায়গার পথচিত্র নিয়ে আসব বলে আশা রাখি।’’

তিনি জানান, এই স্ট্রিট ভিউ বা পথচিত্র তৈরি করতে গিয়ে গুগল মানুষের প্রাইভেসি বা গোপনীয়তার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছে; যাতে কেউ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং সবার উপকার হয়। গুগল অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্ট্রিট ভিউ বা পথচিত্রের ছবিগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যেখানে কারো চেহারা বা গাড়ির লাইসেন্স প্লেটের লেখা ঘোলাটে দেখাবে।

অর্থাৎ গুগল ম্যাপে মানুষের চেহারা চেনা ও গাড়ির নম্বর প্লেট স্পষ্টভাবে বুঝা যাবে না। এছাড়াও গুগল ম্যাপে দেওয়া স্ট্রিট ভিউ বা পথচিত্রে উপস্থাপিত কারো ছবি যদি আরো ঘোলাটে বা অস্পষ্ট করার অনুরোধ জানান কেউ সে অনুযায়ী কাজ করবে গুগল।

এর আগে গত ২২ জানুয়ারি থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের ভিউ দেখা যাচ্ছে গুগলে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের স্ট্রিট ভিউ উম্মুক্ত হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে গুগলের এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের হেড অব এমার্জিং মার্কেটস জেমস ম্যাকক্লুর জানিয়েছিলেন, স্ট্রিট ভিউ প্রকল্পে ঢাকাসহ অন্যান্য প্রধান প্রধান শহরগুলোর সাথে প্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক এবং পর্যটন এলাকার কার্যক্রম চলছে। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে এই স্ট্রিট ভিউ উন্মুক্ত করার আশাবাদ জানিয়েছিলেন ম্যাকক্লুর।

যেসব দেশে স্ট্রিট ভিউ সুবিধা বিদ্যমান, সেখানকার ব্যবহারকারীগণ গুগল ম্যাপস থেকে যেকোনো এলাকার দৃশ্য জুম করে বড় আকারে দেখতে পান। বামপাশে অবস্থিত কমলা রঙের পেগমান আইকনটি টেনে এনে ম্যাপের নীল রঙ চিহ্নিত রাস্তাগুলোর ওপর বসিয়ে এই সুবিধা পেয়ে থাকেন ব্যবহারকারীরা।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটুআই এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনে গুগল ঢাকা এবং চট্টগ্রাম জুড়ে স্ট্রিট ভিউ গাড়িতে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।
গুগল ম্যাপের স্ট্রিট ভিউ বা পথচিত্র সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে কিংবা বিনোদন ও ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কীভাবে এটি ব্যবহার করতে হবে তা বুঝতে হলে অনুগ্রহ করে এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন: www.google.com/maps/about/behind-the-scenes/streetview/।