কলকাতার চার গবেষক করোনার আণবিক রহস্য বের করলেন!

SHARE

করোনায় কাঁপছে সারা বিশ্ব। এখনো এই মারণ ভাইরাসের কোনো ওষুধ উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়নি। ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন কাজ চলছে। কিন্তু প্রত্যেকেই বলছেন যে বিভিন্ন দেশে করোনার চরিত্র ভিন্ন রকমের হচ্ছে। ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন আবহাওয়ায় চরিত্র পরিবর্তন করছে এই ভয়ংকর ভাইরাস। কিছু না পেয়ে এখন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে সমানে রেখে এগোচ্ছে বিশ্ব। কিন্তু ভ্যাকসিন তৈরি কিভাবে হবে? আবিষ্কারের প্রথম পথ বলে দিলেন কলকাতার চার গবেষক।

করোনাভাইরাসের আণবিক রহস্য এবং বিভিন্ন দেশে বা ভৌগলিক অবস্থানের পার্থক্যে ভাইরাসের ভিন্নরূপে বিবর্তনের রহস্য অনেকটাই উন্মোচিত করে ফেললেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন গবেষকের টিম। প্রি-প্রিন্ট অবস্থায় গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে জীববিদ্যা বিষয়ক গবেষণার বিশিষ্ট সংগ্রহশালা ‘বায়ো আর্কাইভ’-এ।

এই গবেষণা পত্রের নাম, ডিকোডিং দ্য লেথাল ইফেক্ট অব সার্স-কভ-২ (নভেল করোনাভাইরাস) স্ট্রেইনস ফ্রম গ্লোবাল পার্সপেক্টিভ: মলিকুলার প্যাথোজেনেসিস অ্যান্ড এভোলিউশনারি দিভার্জেন্স। শুভম ব্যানার্জি নামের এক গবেষকের সঙ্গে কাজ করেছেন পৃথা ভট্টাচার্য, শিরিঞ্জনা ধর, সন্দীপ ভট্টাচার্য।

গবেষণাপত্রটির প্রধান গবেষক হলেন শুভম ব্যানার্জি। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যে করোনাভাইরাসের চার থেকে পাঁচটি স্ট্রেন রয়েছে। চীন বলেছিল দুটি। কিন্তু তখন তাদের দেশেই শুধু ঘোরাফেরা করছিল ভাইরাস। সেই অনুযায়ী সঠিক। কিন্তু বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ারর পর বিষয়টি নিয়ে আমরা গবেষণা শুরু করি। খুঁজে পাই চার পাঁচ ধরনের স্ট্রেন। এবার আমারা গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছি যে বিভিন্ন দেশে এর বিভিন্ন চরিত্র। সেগুলোকে ভাগ করে দেখা যাচ্ছে, ইতালি, স্পেন, আমেরিকায় এর মৃত্যু হার সবথেকে বেশি, ১৪ শতাংশ। অর্থাত্‍ সবথেকে শক্তিশালী। চীন-জাপান এইসব দেশে এর শক্তি কম, ৬-৮ শতাংশ। এবার ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল, নেপাল, ভিয়েতনামে এর মারণ ক্ষমতা সব থেকে কম, ২-২.৫ শতাংশ।

গবেষণা থেকে জানা গেছে মৃত্যুর হার নির্ভর করছে মূলত তিনটি বিষয়ের উপর। মিউটেশনের সংখ্যা, রেয়ারিটি অব দ্য অ্যালেয়িক ভেরিয়েশন আর ফাংশনাল কনসিকোয়েন্স অব দ্য মিউটেশন অ্যাট প্রোটিন লেভেল। এরপরে তারা এই তিন ধরনের কোভিড১৯-এর মিউটেশন নিয়ে গবেষণা করেন।

সেই গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছেন চীনে বা তার আশেপাশে যে মিউটেশন ছিল ভাইরাসের তা সি টু টি। ইতালি, স্পেন, আমেরিকায় এর মিউটেশন এ টু টি, জি টু এ, টি টু এ। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল, নেপাল, ভিয়েতনামের মতো দেশে যেখানে মারণ ক্ষমতা সেখানে এই ভাইরাসের মূলত দুটি মিউটেশন রয়েছে। দেখা গেছে ডিলিটেশন মিউটেশন ও নন-সিনোনিমস মিউটেশন।

বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন চরিত্র যে ধারণ করছে ভাইরাস তার মিউটেশনগুলো হলো উপরের পয়েন্টভিত্তিক অংশগুলো। শুভম ব্যানার্জি বলেন, এর থেকেই স্পষ্ট তিন ধরনের মৃত্যু হার বিশিষ্ট দেশে তিন ধরনের ভ্যাকসিন লাগবে। যেটা ইতালিতে কাজ করবে সেটা চীনে কাজ করবে না। আবার যেটা চীনে কাজ করবে সেটা ভারতে কাজ করবে না। কিন্তু ভারতে যেটা কাজ করবে সেটা অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনামে কাজ করবে। ইতালির ভ্যাকসিন কাজ করবে আমেরিকায়।

তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে কাজ হচ্ছে কিন্তু এই প্রাথমিক বিষয়টা এখনও কেউ বলেনি। আমাদের গবেষণা সেই পথ দেখিয়েছে। আমরা এখন এর প্রোটিন স্ট্রাকচার নিয়ে কাজ করছি। এর পরে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাব। তবে যেহেতু আমরা প্রথম ধাপ দেখিয়ে দিয়েছি। তা প্রকাশিত হয়েছে ‘বায়ো আর্কাইভ’এ। সেখানে ১৪২টি দেশের বিজ্ঞানীরা রয়েছেন। এবার আমাদের মনে হয় এটা দেখে নেওয়ার পর আমাদের থেকে আরো দ্রুত কাজ করবে উন্নত দেশের বিজ্ঞানীরা। আশা করছি এই গবেষণা দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করতে সাহায্য করবে।

সূত্র : কলকাতা টুয়েন্টিফোর।