২০১৪: আবাসনের সীমান্তের বছর

SHARE

আবাসনশিল্প এখন বিশ্বজুড়েই এক বড় বিনিয়োগক্ষেত্র। কিছু সংকট সত্ত্বেও এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ সব দেশে বাড়ছে এর পরিধি। প্রযুক্তির এই যুগে আবাসনশিল্পের ক্রেতা-বিক্রেতা, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটেদের সংযোগের এক বড় মাধ্যম এখন ইন্টারনেট। ফলে এই খাতটি পেয়েছে বৈশ্বিক রূপ।image_112317_0

ফিরে দেখা যাক গ্লোবাল রিয়েল এস্টেট প্রপার্টি পোর্টাল লামুডির বিশ্লেষণে গত বছর এ খাতটি কেমন ছিল।তাদের মতে, বেশ কিছু বছর ধরে টানা বৃদ্ধির পর চায়নার আবাসন বাজার স্থিতিশীল হওয়ায় ২০১৪ সালে উদীয়মান বাজারসমূহের আবাসনশিল্প অনেকটাই কেন্দ্রীভূত হয়েছে।

এশিয়াতে এই বছরের শুরুর দিকে চায়নার আবাসন বাজার অতিমন্দার সম্মুখীন হয়, যার ফলে প্রপার্টির দাম কমতে থাকে এবং নির্মাণ কার্যকলাপও হ্রাস পেতে থাকে। শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিকতার দরুন এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আবাসন বাজারগুলোতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃদ্ধির উচ্চ হার দেখা যায়, যা ২০১৪ সালেও অবিরত ছিল।

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অতিদ্রুত বিস্তারের কারণে ইন্দোনেশিয়ার আবাসন বাজারের প্রবৃদ্ধির হার প্রসার অব্যাহত রয়েছে, একই সঙ্গে ফিলিপাইনের আবাসন ব্যবসা প্রক্রিয়ার আউটসোর্সিংয়ের (বিপিও) কল্যাণে বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেটের স্থিতিশীল চাহিদা থেকে উপকৃত হয়েছে।

পিনাকল রিয়েল এস্টেটের গবেষণা ও পরামর্শ-প্রধান জোস রোমার্ক্স সালাস সম্প্রতি বলেন, ফিলিপাইনের প্রপার্টির মূল্য গত বছরের প্রাক-এশিয়ান সংকটের মাত্রাকে নামমাত্র পরিমাণে আঘাত করে। সালাস আরো বলেন, “কিন্তু এ থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, বিপিও সেক্টর থেকে আসা অর্থ এবং ফিলিপিনো শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাস্তবে বাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি করছে। তারা আসলে গ্রাহকদের আবাসনের চাহিদাকে ত্বরান্বিত করছে।”

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংশোধনের পরিপ্রেক্ষিতে, এশিয়ার অনেক উদীয়মান আবাসন বাজার আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মিয়ানমারের আবাসন বাজার শক্তিশালী চাহিদার বহির্মুখী জোগান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যা তাদের প্রপার্টির মূল্য বৃদ্ধি করেছে, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ইয়াঙ্গুন এলাকায়।

শ্রীলঙ্কার পর্যটনশিল্পের বিস্তার বিশেষভাবে এই বছরের নভেম্বরে নতুন আগন্তুকের সংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি বিনিয়োগকারী ও ডেভেলপারদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।

মেক্সিকোতে নতুন করব্যবস্থার সংশোধনের প্রভাব দেশটির আবাসনের বাজারে পড়েছে। জমিসহ যেকোনো রিয়েল এস্টেটের বিক্রয়ের ক্ষেত্রে একটি সর্বাধিক মূলধনী কর অব্যাহতি দেয়া হবে।

ল্যাটিন আমেরিকার অন্যান্য অঞ্চলে যেমন কলম্বিয়ায় ২০১৪ সালে ক্রমবর্ধমান হারে রিয়েল এস্টেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনের দিকে ঝুঁকেছে। ‘অনলাইন প্রপার্টি পোর্টালগুলোর আবির্ভাব প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের রিয়েল এস্টেটের বিপণন কৌশল এবং ব্র্যান্ড স্বীকৃতির বিস্তার করতে সাহায্য করেছে। বলেছেন প্রপার্টি প্রতিষ্ঠান জুলিও করিডর ওয়াই সিয়ার প্রশাসনিক পরিচালক গুইলেরমো সান্তামারিয়া আলভারাডো।

মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব তাদের আবাসন সংকটের সঙ্গে এখনো লড়াই করে যাচ্ছে। মার্চে আবাসন মন্ত্রণালয় এই ঘাটতি দূর করতে আগামী বছরগুলোতে পাঁচ লাখ বাড়ি তৈরি করতে ৬৭ বিলিয়ন ইউএস ডলারের একটি নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। গ্লোবাল রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান নাইট ফ্রাঙ্ক-এর সম্প্রতি রিয়াদের রিয়েল এস্টেট বাজারের ওপর করা একটি গবেষণা অনুযায়ী এই ঘাটতির কারণ হিসেবে দেশটির অতিদ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যাকে চিহ্নিত করেছে যা প্রপার্টির মূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

নাইজেরিয়ার জিডিপির বৃদ্ধির পর দেশটির অর্থনীতি সাউথ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলে আফ্রিকায় সর্ববৃহৎ অবস্থান অর্জন করেছে। কেনিয়ায়ও একই ফলাফল লক্ষ করা যায়, যেখানে জিডিপির বৃদ্ধি তাদের অর্থনীতির আকার ২৫.৩ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে মধ্যম আয়ের অবস্থান অর্জন করেছে।

পশ্চিম আফ্রিকার ফাইন রিয়েল এস্টেট এজেন্সির সিইও ইউডো অকোঞ্জো বলেন, “নাইজেরিয়ার জিডিপির সম্প্রতি বৃদ্ধির কল্যাণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথোপকথনের নতুন সুযোগ করে দিয়েছে। নাইজেরিয়া নিঃসন্দেহে একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার যা অন্যান্য অনেক পরিণত অর্থনীতির তুলনায় ভালো রিটার্নের হার প্রদান করছে, তথাপি প্রশমনের ঝুঁকি তো রয়েছেই।
সৌজন্যে: www.lamudi.com.ph/research