হারের চেয়েও দুশ্চিন্তার স্পিন!

SHARE

আয়ারল্যান্ডে সকালের উইকেটে নিয়ম মাফিক সুইং করে বল। তাই আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করাটাই পরিকল্পনায় ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু টস জেতা হয়নি, হেরে ফিল্ডিং করতে হয়েছে সাকিব আল হাসানদের। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে আইরিশ যুবাদের ৮ উইকেটে ৩০৭ রান তোলার কথা শুনে আঁতকে ওঠাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে মাঠের আকৃতি, উইকেট আর বোলিংয়ের মান বিবেচনায় স্কোরটা চার শর সঙ্গে বেশি মানানসই। এর পরও বাংলাদেশের ২১৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। তবে ব্যাটিং কিংবা ম্যাড়ম্যাড়ে পেস বোলিং নয়—প্রস্তুতি ম্যাচের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ থিংকট্যাংকের মাথাব্যথার কারণ স্পিন বোলিংয়ের দৈন্য।

অবশ্য স্কোরকার্ডের যে চেহারা, চার শর মাঠে বাংলাদেশের হুমড়ি খেয়ে পড়াটাই চোখে লাগছে বেশি। এ মলিন ছবি তৈরি হয়েছে দুটি রঙের মিশেলে। আইরিশ বোলাররা চেনা কন্ডিশনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন আর ‘উদার’ প্রতিপক্ষের মতো করে স্বাগতিকদের বিরামহীন প্রশংসা করে গেছেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। ভদ্র গোছের মিডিয়াম পেসার সাইমন গাটকাটের কথাই ঘুরেফিরে শোনা গেছে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে, তাঁর ছোট ছোট বাঁকের বল বুঝতে পারছিলেন না কেউই। তাই অনন্যোপায় হয়ে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে উইকেট দিয়েছেন তামিম ইকবালের মতো ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটসম্যানও। মুশফিকুর রহিম পয়েন্ট ফিল্ডারকে ক্যাচিং প্র্যাকটিস করিয়েছেন। মোহাম্মদ মিঠুন ক্যাচ তুলে দিয়েছেন ডিপে। আশার আলো হয়ে টিকে ছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তাঁর বিদায়েও বোলারের খুব বেশি কৃতিত্ব নেই। এতে চাপের সঙ্গে বেড়েছে রানের বোঝাও, যা সামাল দেওয়ার শক্তি আর অবশেষ ছিল না বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে। ফল দ্বিতীয় সারির আয়ারল্যান্ডের কাছে হার।

প্রস্তুতি ম্যাচে হার-জিতই সব কিছু নয়। তাই ব্যাটিং ব্যর্থতার চেয়ে বোলিং আক্রমণের ঘাটতিই দিনের আলোচ্যসূচির শীর্ষে। অবশ্য বাংলাদেশের মূল একাদশের বোলিং র‌্যাংকের অর্ধেকই যে কাল হিলস ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডের সীমানা দড়ির বাইরে কাটিয়েছেন। মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন— তিনজনই ছিলেন বিশ্রামে। তাই বাংলাদেশের বোলিং শুরুই হয়েছে দুজনের মাঝে চলমান অদৃশ্য ফিটনেস প্রমাণের লড়াই দিয়ে। একদিকে রুবেল হোসেন আর অন্য প্রান্তে তাসকিন আহমেদ। স্কোরকার্ডে দুজনকেই মোটামুটি সফল দেখাচ্ছে। তবে একটি উইকেট বেশি নিয়ে সফলতম তাসকিন। কিন্তু তিনি আবার রান দিয়েছেন রুবেলের চেয়ে বেশি। তাতে একই সমতায় দুজনে। আরো বেশি দুজনে একই সমতলে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ওপর প্রভাব বিস্তারে। সে পর্যবেক্ষণ অবশ্য খুব একটা প্রীতিকর হওয়ার কথা নয় রুবেল কিংবা তাসকিনের জন্য!

ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে হঠাৎ আকাশে মেঘের আনাগোনা এবং কনকনে বাতাসেও বল খুব বেশি ‘মুভ’ করেনি রুবেল আর তাসকিনের। জেমস ম্যাককুলাম আর টেক্টরের তাই শুরুর ধাক্কা সামলাতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। দেরিতে সুইংয়ের আশায় একটু ওপরে বল পিচ করাচ্ছিলেন বাংলাদেশি পেসাররা, যার অনেকগুলোই হয়ে যাচ্ছিল হাফভলি। বেচারা জ্যাক টেক্টর! লেন্থের তেমন গড়বড়ে প্যাডের ওপর পিচ করা রুবেলের ডেলিভারি ফ্লিক করতে গিয়ে তিনি ক্যাচ দিয়েছেন শর্ট মিড উইকেটে। তাসকিনের প্রথম শিকার নিয়েও খুব আহ্লাদের কারণ নেই। সময়ের দাবি মেটাতে গিয়ে তুলে মারতে গিয়ে মাত্র ৯ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছেন সিমি সিং। ঘরোয়া ক্রিকেট কাঁপিয়ে আয়ারল্যান্ডে এসেও বিস্তর চেষ্টা করেছেন ফরহাদ রেজা। তবে ন্যায্য একটি কট বিহাইন্ডের আবেদন উপেক্ষা হওয়ার সমবেদনা ছাড়া তাঁর ভাগে আর কিছু জুটছে না।

তবে খেলা যতই ইংলিশ কন্ডিশনে হোক, বাংলাদেশ বোলিং ভরসার অনেকটা জায়গাজুড়েই স্পিন। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ যখন আইরিশ যুবারা। কিন্তু কিসের কী, একজন সাকিব আল হাসান ছাড়া ব্যাটসম্যানদের সমীহ পাননি আর কেউই। নাঈম হাসান অবশ্য খেলেননি এ ম্যাচে। মেহেদী হাসান মিরাজের অনভ্যস্ত কন্ডিশনের সঙ্গে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। কাঁধের চোটের কারণে বোলিংয়ে আনা হয়নি মাহমুদ উল্লাহকে। অতঃপর সাব্বির রহমানের খণ্ডকালীন লেগস্পিনেই কি বাজি ধরতে হবে অধিনায়ককে? গতকাল বিরতির সময় এমন প্রশ্নে নিরুত্তর থেকেছেন মাশরাফি, তবে অভিব্যক্তিতে এজাতীয় সম্ভাবনা উড়িয়েও দেননি।

কাল বিপর্যয়ের পরও ব্যাটিং নিয়ে খুব একটা চিন্তিত মনে হয়নি মাশরাফিকে। তামিম ইকবাল আর লিটন কুমার দাশ ইনিংস সূচনা করতে যাওয়ার পর লাঞ্চে আসেন মাশরাফি। সেখানেই প্রধান নির্বাচক এবং এ সফরের ম্যানেজার মিনহাজুল আবেদিন মনে করিয়ে দেওয়ার ছলে এক রকম ভরসাই দিলেন অধিনায়ককে, ‘এ মাঠেই মমিনুল ১৯৫ রান করেছিল।’ বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে গত বছরই ধুম পিটিয়ে গিয়েছিলেন মমিনুল। আইরিশ তরুণ ম্যাককুলামকে অবশ্য অতটা নির্মম দেখায়নি। হাফভলি পেলে ড্রাইভ করেছেন, খাটো লেন্থের বলে পুল আর স্পিনের বিরুদ্ধে স্বতঃসিদ্ধ সুইপ খেলে সেঞ্চুরি করেছেন আইরিশ ওপেনার। রুটিন ব্যাটসম্যানশিপের প্রদর্শনী করেছেন তিনি।

সীমিত সামর্থ্য নিয়েও যখন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান একটা কিছু ঘটিয়ে ফেলেন তখন ধরেই নিতে হবে কোথাও গোলমাল আছে। সে গোলমালটা বোলিংয়ে, বিশেষ করে স্পিনে। আয়ারল্যান্ডে প্রতিপক্ষ এবং পরিবেশ বিবেচনায় সাকিবের একজন যোগ্য সঙ্গী যে নেই!