সরকার বিএনপির ত্রাণ বিতরণে বাধা দিচ্ছে : নোমান

SHARE

বিএনপির জাতীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটি প্রধান সমন্বয়ক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, সরকার বিএনপির ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে। আর ত্রাণ বিতরণের নামে সরকার রাজনীতি করছে। আমাদের দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ত্রাণকাজে এখনো বন্যাদুর্গত এলাকায় অবস্থান করছে। আজ রবিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বলেন।

আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেরিতে হলেও ত্রাণ দিতে গিয়ে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন, মানুষ বন্যায় ভাসছে ত্রাণ পাচ্ছে না। অথচ প্রধানমন্ত্রী নৌকায় ভোট চাইতে ব্যস্ত। আসলে সরকার ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ঘোষণার পর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তিনি অবিলম্বে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা করে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ এবং কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষিবীজ বিতরণের দাবি জানান।

নোমান বলেন, সারা দেশে ভয়াবহ বন্যায় বন্যাকবলিত মানুষ এক অবর্ণনীয় দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ ২৭টি জেলা বন্যায় ভাসছে, সীমাহীন কষ্টে নিপতিত বানভাসিরা। ইতিপূর্বে বাংলাদেশে বন্যার মতো এত বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটেনি।

তিনি আরো বলেন, একদিকে খাদ্য সংকট অন্যদিকে আশ্রয়কেন্দ্র্রগুলোতে বানভাসি মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের দৃশ্য সত্যি হৃদয়বিদারক। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে কোনো রকমে স্থান করে নিয়েছে অসহায় নিরন্ন বন্যার্ত মানুষ।

আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, বন্যাদূর্গত এলাকাগুলোতে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এখনো প্রকৃত বানভাসিরা ত্রাণ পাচ্ছে না, চারিদিকে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার। দু’মুঠো ভাতের জন্য কাঁদছে মানুষ। আমি বন্যাদুর্গত জামালপুর, শেরপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে দেখেছি- তাদের দুঃখ-দুর্দশা ও অবর্ণনীয় দুর্ভোগের চিত্র। বন্যা দুর্গতরা পানি সাঁতরিয়ে কিভাবে খাবারের জন্য আসে, সেই দৃশ্য এখনও আমার চোখে ভাসছে। অথচ বিএনপির ত্রাণ কার্যক্রমেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারদলীয় লোকরা বাধা সৃষ্টি করছে।

নোমান বলেন, এই মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই, তাদের একটিই মাথাব্যথা- সেটি হলো কিভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে, কুৎসা রটিয়ে, সর্বোপরি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট, ভুয়া ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়েরের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ও কারান্তরীণ করে বিএনপিকে ধ্বংস করা যায়। তা ছাড়া ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ঘোষণার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী নেতারা প্রধান বিচারপতি ও বিচার বিভাগকে নিয়ে যেভাবে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে সরকার হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে গেছে বলেই মনে হয়। আর এসব কারণেই জনগণের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে ভাববার সময় তাদের নেই।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার যেহেতু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বরং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জোর করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, তাই জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। আর জবাবদিহি করার কিংবা জনগণের ভোটের প্রয়োজন হয় না বলেই তারা মানুষের দু:খ দুর্দশা লাঘবেও উদাসীন।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ বন্যাদুর্গতদের দুঃখ-দুর্দশা ও দেশের খাদ্য ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা লাগামহীনভাবে মিথ্যাচার করে বলছেন, দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। আগামী বোরো মৌসুমে ধান-বীজ ক্রয়ে অপারগতার দু:শ্চিন্তায় প্রহর গুণছে বানভাসীরা।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, সরকার বানভাসী মানুষদের পুনর্বাসন ও সাহায্যার্থে বোরো মৌসুমের আগেই সুদবিহীন কৃষিঋণ প্রদানের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করলে শুধু ভুক্তভোগী বন্যার্ত মানুষগুলোই নয়, জাতীয় অর্থনীতিতেও এর বিরুপ প্রভাব পড়বে।

এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের কষ্ট লাঘবে কয়েকটি প্রস্তাবনা পেশ করে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, নিরপেক্ষভাবে তালিকা প্রণয়ন করে অবিলম্বে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষি পূনর্বাসন, কৃষকদের বিনা সুদে ঋণ প্রদান, গৃহহারা মানুষদের অতি দ্রুত গৃহ নির্মাণের ব্যবস্থা, মানুষ ও গো-খাদ্যের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কৃষকদের ধানের চারা বিনামূল্যে বিতরণ, গবাদী পশু কেনার জন্য আর্থিক অনুদান, ভিজিএফ কার্ড চালু করে প্রকৃত বানভাসীদের মধ্যে খাদ্য সরবরাহ, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মেরামত করে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি এবং বিশুদ্ধ পানির জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নলকূপ স্থাপনসহ জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা করতে হবে।

নোমান আরো বলেন, বিএনপি ইতিমধ্যেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে বন্যাকবলিত এলাকার প্রকৃত বানভাসীদের বিধ্বস্ত কাঁচা ঘরবাড়ি নির্মাণ ও ধান-বীজ ক্রয়ে সীমিত সাধ্য দিয়ে আর্থিক অনুদান দেওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিএনপি বর্তমানে সরকারে নেই। কিন্তু জনগণের দল হিসেবে বিএনপি সবসময় সুখে দু:খে জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বর্তমানে বন্যাদূর্গত এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় যথাসাধ্য ত্রাণ ও পূনর্বাসন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আগামীকাল থেকেই বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে তালিকা করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিএনপির জাতীয় ত্রাণ ও পূনর্বাসন কমিটির পক্ষ থেকে এই আর্থিক অনুদান কিংবা ঘরবাড়ী নির্মাণের ম্যাটেরিয়ালস ও কৃষকদেরকে ধান বীজ ক্রয় বাবদ অর্থ প্রদানের কাজ শুরু হবে।