সরকার গঠন নিয়ে সংকটে থেরেসা

SHARE

নর্দান আয়ারল্যান্ডের রক্ষণশীল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন নিয়ে ভালোই সংকটে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এই জোট নর্দান আয়ারল্যান্ডে শান্তি বজায় রাখতে সম্পাদিত চুক্তির (গুড ফ্রাইডে অ্যাগ্রিমেন্ট) বরখেলাপ বলে সমালোচনা উঠেছে।

সমালোচকেরা এটিকে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থে মের আরও একটি বেপরোয়া পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করছেন। আবার নির্বাচনী প্রচারণায় থেরেসা বিরোধীদের উপহাস করে আক্রমণের যেসব তীর ছুড়েছেন, সেগুলোই এখন বহগুণ শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসছে তাঁর দিকে। এমন বেদনাদায়ক জয় ইতিহাসে বিরলই বলা চলে।

সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা স্বত্বেও মে নিজের ক্ষমতাকে আরও নিরঙ্কুশ করতে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেন। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে থেরেসা মের কনজারভেটিভ দল ১৩টি আসন হারিয়ে এখন এককভাবে সরকার গঠনে ব্যর্থ। এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ৩২৬ আসন থেকে ৮ আসন দূরে আছে দলটি। যে কারণে মাত্র ১০ আসন জেতা ডিইউপির সঙ্গে জোটের ঘোষণা দিয়েছেন মে। অবশ্য অন্য কোনো দল কনজারভেটিভের সঙ্গে জোটে রাজি নয়।

নর্দান আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে কয়েক দশকের উত্তেজনা শেষে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১৯৯৮ সালে স্বাক্ষর হয়েছিল ‘গুড ফ্রাইডে অ্যাগ্রিমেন্ট’। এ চুক্তি অনুযায়ী, স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পাওয়া ওই ভূখণ্ডের স্থানীয় রাজনীতিতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় সরকার। যে কারণে কনজারভেটিভ, লেবার বা অন্য কোনো কেন্দ্রীয় দলের রাজনীতি সেখানে নেই। যুক্তরাজ্যের অখণ্ডতাপন্থী ডিইউপি এবং স্বাধীনতাকামী ‘শিন ফেইন’ সেখানে বড় দুটি দল। সাধারণ নির্বাচনে এখানকার মোট ১৮টি আসনের মধ্যে ডিইউপি ১০টি এবং ‘শিন ফেইন’ পেয়েছে ৭টি আসন। তবে ‘শিন ফেইন’র এমপিরা কখনো ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টের কার্যক্রমে অংশ নেয় না। এই দল কেন্দ্রীয় কনজারভেটিভদের গুরুতর বিরোধী।

আবার থেরেসা মে এমন সময়ে ডিইউপির সঙ্গে জোট করছেন, যখন বিবাদের কারণে নর্দান আয়ারল্যান্ডের প্রাদেশিক সরকার ভেঙে গেছে। চলতি মাসের মধ্যে ডিইউপি ও শিন ফেইন নতুন সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার সব সময় নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখে। কিন্তু থেরেসার জোট সেই ভূমিকাকে খর্ব করবে। যে কারণে নর্দান আয়ারল্যান্ডে শান্তি আবারও বিনষ্ট হওয়ার ঝুঁকি দেখছেন অনেকেই।

বিতর্ক আছে ডিইউপির রাজনৈতিক আদর্শ নিয়েও। দলটি সমকামী বিয়ের বিরোধী। যুক্তরাজ্যের কেবল নর্দান আয়ারল্যান্ডে সমকামী বিয়ের বৈধতা নেই। কনজারভেটিভ দলের স্কটল্যান্ড শাখার প্রধান সমকামী নারী রুথ ডেভিডসন সরাসরি মেকে জানিয়ে দিয়েছেন, সমকামী অধিকার প্রশ্নে কোনো ছাড় তিনি মানবেন না।

আবার মে যেভাবে ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) বাস্তবায়ন চান তার সঙ্গে দ্বিমত রয়েছে ডিইউপির। দলটি ব্রেক্সিটের পক্ষে হলেও স্বাধীন আয়ারল্যান্ড ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে কোনো কঠোর সীমানা চায় না। তারা ইইউর একক বাজারের সুবিধা ধরে রাখারও পক্ষে।

এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে থেরেসাকে সরকার গঠন করতে হবে। ১৯ মে রানির ভাষণে সংসদে নতুন সরকারের প্রস্তাব তুলে ধরতে হবে। আবার একইদিন শুরু হবে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন প্রশ্নে উভয় পক্ষের আনুষ্ঠানিক আলোচনা। এ আলোচনার সময় আর পেছাতে রাজি নয় ইইউ।

কনজারভেটিভ দলের ভেতর থেকেই থেরেসার পদত্যাগের জন্য চাপ থাকলেও দেশের অনিবার্য পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁকে আপাতত ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

সমালোচকেরা বলছেন, থেরেসা শক্তিশালী ও স্থিতিশীল নেতৃত্ব চেয়েছিলেন, কিন্তু জনরায় তাঁকে দিয়েছে দুর্বল ও নড়বড়ে নেতৃত্ব। কনজারভেটিভ না জিতলে বিরোধীদের বিশৃঙ্খল জোট হবে বলে জনগণকে সতর্ক করেছিলেন মে। এখন তিনিই সমীকরণহীন অদ্ভুত জোট নিয়ে হাজির হয়েছেন। আর লেবার দলের প্রভাবশালী নেতা জন ম্যাকডোনাল্ড বলেন, থেরেসা প্রয়োজনে কোনো চুক্তি ছাড়াই ইইউ থেকে বের হয়ে আসার হুংকার দিয়েছিলেন। কিন্তু জনরায়ের পর তিনি এখন ‘খোঁড়া হাঁস’।

ক্ষমতা আরও নিরঙ্কুশ করে ফিরতে পারলে থেরেসা মন্ত্রিসভার শীর্ষ কয়েকটি পদে রদবদল করে নিজের কর্তৃত্ব আরও জোরালো করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যে কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় দলের চাইতে নিজের নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেন। এখন সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের দিকে থেরেসা আর এগোচ্ছেন না। মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না বলে জানিয়েছে তাঁর কার্যালয়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্রেক্সিট প্রশ্নে থেরেসা যে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে সেটি শেষ হয়ে গেছে। নানামুখী সমালোচনার চাপে তিনি কত দিন টিকে থাকতে পারেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।