সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্য, সেভাবেই সংরক্ষণ হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুন্দরবনের ক্ষতি হয় এমন কোনো প্রকল্প তার সরকার নিচ্ছে না; বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবেই এ বনকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

SHARE

বাংলাদেশ ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুন্দরবনের ক্ষতি হয় এমন কোনো প্রকল্প তার সরকার নিচ্ছে না; বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবেই এ বনকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০১৭ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৭’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে কোনো প্রকল্প আমরা নিই না কেন অন্তত আমাদের এই সুন্দরবন যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েই কিন্তু আমরা আমাদের প্রকল্প গ্রহণ করি।”

সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন ও বামপন্থিরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।

১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায়, শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী, তখনই সুন্দরবনকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ ঘোষণা করে ইউনেস্কো।

তিনি বলেন, সুন্দরবনের কারণে বাংলাদেশ বেঁচে আছে। সুন্দরবন যেন বৃদ্ধি পায়, সেজন্য কৃত্রিমভাবে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ ১৭ শতাংশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। এখন লক্ষ্য তা ২৫ শতাংশে উন্নীত করা।

সামাজিক বনায়নসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বনাঞ্চলে অপরাধ দমনের জন্য স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে, যাতে অহেতুক বৃক্ষ নিধন না হয়।

“আর জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সব থেকে দরকার সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা।”

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নিজেদের অর্থে ট্রাস্ট ফান্ড গড়ে কাজ করে যাওয়ার কথাও শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন।

তিনি জানান, নিজস্ব অর্থায়নে ২০১০ সালে ক্লাইমেট চেইঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের পর এ পর্যন্ত তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
উন্নত দেশগুলো এই তহবিলে প্রতিশ্রুত অর্থ না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “প্রতিশ্রুতি অনেক পেলেও এখানে আমরা পেয়েছি খুব সামান্য। তবে যেটুকু পেয়েছি সেটুকু আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশই বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে- কারো মুখাপেক্ষী না থেকে নিজস্ব অর্থায়নে ট্রাস্ট ফান্ড করে কীভাবে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করা যায়। তার একটা স্বীকৃতি আমরা পাচ্ছি।”

কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও অনুষ্ঠানে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বাসস্থান নির্মাণ থেকে শুরু করে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যেন আধুনিক পদ্ধতিতে হয়, সে বিষয়ে যথাযথ নির্দেশনা দিচ্ছে সরকার।

“ইতোমধ্যে প্রত্যেকটা শিল্পাঞ্চলে আমরা ইটিপি নির্মাণ করেছি। শিল্প মালিকরা নিজেরা ইটিপি করলেও ব্যবহার করতে চায় না। যদি আমরা পরিদর্শনে পাঠাই তখন ব্যবহার হয়। এজন্য আমরা সেন্ট্রালি তৈরি করে সকলকে বাধ্যতামূলক করে দিচ্ছি, যে ব্যবহার করতেই হবে।”
ইট ভাটাগুলোকে পরিবেশবান্ধব করতে নতুন নতুন প্রযুক্তি দিয়ে আধুনিকায়নের কাজ চলছে বলেও শেখ হাসিনা জানান।

বিএনপির নেতাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০২১ পর্যন্ত সময়ে আওয়ামী লীগের সময়ে উপকূলীয় এলাকায় বনায়নের প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর সেসব গাছপালা কেটে সেখানে চিংড়ি ঘের করা হয়।

“তখনকার যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, খালেদা জিয়া, তার পরিবার থেকে শুরু করে তার দলের, তার এক এপিএস ছিল- সেই সমস্ত গাছপালা কেটে সেখানে চিংড়ির ঘের করে। অনেক কিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে, ২০০১ এ সরকার পরিবর্তনের পর।”
ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ দুর্যোগ মোকাবিলায় বনায়নের ওপর গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর সময়ে নেওয়া বেশকিছু পদক্ষেপের কথাও এ সময় তিনি তুলে ধরেন। সবাইকে কমপক্ষে একটি ফলজ, একটি বনজ ও একটি ঔষধি গাছ লাগানোর আহ্বান জানান।

এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ২০১৭’, ‘পরিবেশ পদক ২০১৭,’ এবং ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার ২০১৬,’ বিতরণ করেন।

বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি গাছের চারা রোপণ করেন সরকারপ্রধান। এরপর বাণিজ্য মেলার মাঠে বৃক্ষ ও পরিবশ মেলার উদ্বোধন করেন।

অন্যদের মধ্যে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।