সিটি নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির আন্দোলনের যৌক্তিকতা থাকবে?

SHARE

bbcস্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে আসছে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলে দলটির চলমান রাজনৈতিক আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা কি থাকবে- এ প্রশ্ন ওঠেছে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ অনুষ্ঠানে। আলোচকরা বলছেন, মূলত এ নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং পরিস্থিতির আলোকে চূড়ান্ত পর্যায়ে বিএনপি যাওয়া না যাওয়াও একটি কৌশল হতে পারে।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম মিলিনায়তনে এ অনুষ্ঠানের ১১০তম পর্ব হয়। এ পর্বে অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদের, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. দিলারা চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সাদেকা হালিম।

অনুষ্ঠানে এক দর্শক জানতে চান- বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা যদি ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে দলটির চলমান রাজনৈতিক আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা কি থাকবে?

উত্তরে সাদেকা হালিম বলেন, যৌক্তিকতা হারিয়ে যাবে না। কিছু জায়গায় তারা (বিএনপি সমর্থিতরা) মনোনয়ন নিয়েছেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের আন্দোলনের রাজনৈতিক দাবিগুলো একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে আসবে।

সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, নির্বাচনে গেলে বিএনপি একটি নতুন লিস্ট পাবে। সরকারকে বুঝতে পারবে। আর সরকার যদি ঊনিশ থেকে বিশ করে, পানের থেকে চুন খসিয়ে দেয়, তাহলেও বিশ্ববাসী বুঝতে পারবে এ সরকারের (আওয়ামী লীগ) নির্বাচনকালীন আচরণ কী হয়। বিএনপি সর্বাত্মক চেষ্টা করবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার।

ড.দিলারা চৌধুরী বলেন, অংশগ্রহণ করা উচিত, কারণ- বিএনপি নির্বাচনমুখী দল এবং বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কেমন হয়, তা প্রকাশ্যে উঠে আসবে। তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকান্ডে আশঙ্কা আছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে কিনা।

তিনি বলেন, নির্বাচন শেষে আন্দোলনে ফিরে আসার জন্য বিএনপিকে তখন কৌশল পাল্টাতে হতে পারে।

জি এম কাদের বলেন, সব দল অংশ নিয়ে সুষ্ঠুভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন হলে তা আগামীতে যেকোনো সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। নির্বাচনে যাওয়াও আন্দোলনের একটি কৌশল হতে পারে। নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সরকারের আচরণ কেমন হয়, তার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে কৌশল পরিবর্তন করারও সুযোগ আসবে।

এক দর্শক জানতে চান, দেশের বিভিন্ন স্থানে (বিরোধীদল সমর্থক) জনপ্রতিনিধি অপসারণে সরকার দ্বৈতনীতি গ্রহণ করছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা কি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে দূর্বল করছে?

উত্তরে সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, অবশ্যই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে দুর্বল করছে। সরকার তার নিজস্ব চরিত্র তুলে ধরছে। জনগণের নির্বাচিত ব্যক্তিদের সরিয়ে দেয়া জনগণের মতামতে চপেটাঘাত করা হবে। এটা হলো বিরোধীদলীয় ব্যক্তিদের নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা এবং নিজেদের লোকদের তুলে ধরার জন্য সরকারের একটি ফাঁদ।

জি এম কাদের বলেন, দ্বৈতনীতি থাকা উচিত না। আমাদের দেশে কিন্তু ডাবল স্ট্যান্ডার্ড করা হচ্ছে, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে।

দিলার চৌধুরী বলেন, গ্রস মিনকন্ডাক্ট’ হলে তাকে সরকার সরিয়ে দিতে পারে কিন্তু দলের কারণে নয়। এটা গণতন্ত্রের উপর সাংঘাতিক আঘাত।

সাদেকা হালিম বলেন, যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন তারাও নিজেদের অনেক লোককে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনে এ দ্বৈতনীতির প্রসঙ্গ তদন্ত করে দেখতে হবে।

এছাড়া পুলিশের আটক বাণিজ্য, জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির ভূমিকা এবং পুরুষ নির্যাতন আইন প্রণয়নের বিষয়েও অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়েছে।

অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ এবং উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন। বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন এবং বিবিসি বাংলার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। এতে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত বিষয়ে দর্শকরা সরাসরি প্যানেল সদস্যেদর কাছে প্রশ্ন বা মতামত প্রকাশ করতে পারেন।