৪৬২ কোটি টাকা আদায়ে অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ

SHARE

ogroni bankঋণ অনিয়মের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ৪৬২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক অডিট রিপোর্টে উঠে এসেছে। সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ মার্চের মধ্যে এ অর্থ আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণে অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৮তম সভায় অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল ও সুদ মওকুফ কার্যক্রমের তথ্যসংবলিত মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট তুলে ধরা হয়। এতে প্রায় ৪৬২ কোটি টাকার ঋণের বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে অগ্রণী ব্যাংককে। এ অর্থের মধ্যে চট্টগ্রামের মেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেডের দায় ২২৫ কোটি টাকা।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, এসব ঋণের অনেক অবলোপন করা হয়েছে। ব্যবসা খারাপ হওয়ায় অনেকে ঋণ শোধ করতে পারেনি। নির্ধারিত সময়েই বাংলাদেশ ব্যাংককে গৃহীত ব্যবস্থা জানানো হবে।

মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের ২০১০-১১ সময়ের বার্ষিক অডিট রিপোর্টে জানানো হয়, মেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্সকে পর্যাপ্ত জামানত ছাড়াই অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানির জন্য কয়েক দফায় ঋণপত্র খোলার সুযোগ দেয় অগ্রণী ব্যাংক। পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ টিআর, পিএডি ও পুনঃতফসিলকৃত ঋণ আদায় করতে না পারায় ব্যাংকের ক্ষতি হয় ২২৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের নামে সম্পত্তি অনুসন্ধানপূর্বক তা ক্ষতির সঙ্গে সংযুক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে রিট পিটিশন ভ্যাকেটপূর্বক সিআর মামলার কার্যক্রম গ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি গ্রাহক পরিচয় গোপন করে অন্য ব্যাংক থেকেও ব্যাংকটি সুবিধা নিয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

এছাড়া বারবার পুনঃতফসিল ও অনিয়মিতভাবে কস্ট অব ফান্ড কভার না করে সুদ মওকুফ ও পুনঃতফসিলের পরও মেসার্স স্টার সিমেন্ট লিমিটেড থেকে ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৬৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। মেসার্স সাত্তার টেক্সটাইল মিলস প্রকল্প ও সিসি হাইপো ঋণের দায় পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও অনিয়মিতভাবে পুনঃতফসিলের পর অর্থ আদায় না হওয়ায় ক্ষতি ৪৮ কোটি টাকা। রুমা লেদার ইন্ডাস্ট্রিজকে অর্থায়নে ক্ষতি ৩৫ কোটি টাকা। এসব ঋণ আদায়ে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া এস কে এম জুট মিলকে অর্থায়নে ব্যাংকের ক্ষতি ২০ কোটি এবং গুড উইল বেসিক কেমিক্যালকে অর্থায়নে ক্ষতি হয়েছে ১৭ কোটি টাকা।

সক্ষমতা যাচাই না করে মেসার্স ওয়ানটেল কমিউনিকেশনকে জামানত ছাড়াই ঋণ দেয়ায় ক্ষতি হয়েছে ১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। বাণিজ্যিকভাবে প্রকল্পটি সফলতা অর্জন না করায় ঋণ আদায় হয়নি বলে দাবি ব্যাংকের। সংসদীয় কমিটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে, আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বিদ্যমান রিট পিটিশন ভ্যাকেট করে পাওনা আদায়ে প্রয়োজনে গণদাবি আদায় আইন, ১৯১৩ প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সংসদীয় কমিটিকে জানানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সাঈদ টেক্সটাইল মিল খেলাপি থাকা অবস্থায় ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে, ফলে ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে ১২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এ ঋণ আদায়েও গণদাবি আদায় আইন প্রয়োগ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মেসার্স এপিটি ফ্যাশন ওয়্যারস লিমিটেড অর্থায়নে ক্ষতি ৮ কোটি, মেসার্স কওয়াচি ডিটারজেন্ট অ্যান্ড কেমিক্যালকে অর্থায়নে ক্ষতি ৮ কোটি ও এসআর ফিশ প্রিজিংকে অর্থায়নে ক্ষতি ৭ কোটি টাকা। সংসদীয় কমিটি এসব ঋণ দ্রুত আদায় করার নির্দেশনা দিয়েছে।

২০১৪ সাল শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ১ হাজার ১০২ কোটি টাকা হলেও নিট মুনাফা হয়েছে ৩৭৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনক মাত্রায় রয়েছে উল্লেখ করে ব্যাংকটির কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খেলাপি ঋণ আদায় ও হ্রাসকরণে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোর কাছে।