১৩ বছরে বদলে গেছে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী

SHARE

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে ১৩ বছর পূর্ণ হয়ে এখন প্রায় ১৪ বছর চলছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনি ইশতেহারে বলেছিলাম বদলে যাবে বাংলাদেশ। সত্যিই বাংলাদেশ বদলে গেছে।
আজ রোববার (১৩ নভেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতিকারক ও রফতানিকারক সমিতি আয়োজিত ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক’ অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি। প্রথমবারের মতো এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনীতে বিদেশি ক্রেতারা অংশ নেবেন। বাংলাদেশকে ব্রান্ডিং করার পাশাপাশি বাংলাদেশের পোশাক খাত সম্পর্কে ক্রেতাদের স্বচ্ছ ধারণা দিতে এ আয়োজন করা হয়েছে বলে জানায় বিজিএমইএ।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের আগেই উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যে রূপকল্প ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছিলাম তা বাস্তবায়ন করেছি। এখন কাজ হলো ২০২১ থেকে ২০৪১ এর বাংলাদেশ, আমরা চাই উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। জাতিসংঘ ঘোষিত এসজিডি বাস্তবায়ন করা, তার ভিত্তিতেই কাজ করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটা বদ্বীপ, ঝড়ঝাপটা আসে। এটা মাথায় রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ২১০০ সালের জন্য ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। এর বাস্তবায়নও শুরু করেছি। উন্নত জীবনের ব্যবস্থাটা দিয়ে গেলাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে এটা বাস্তবায়ন করলে উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিএমইএ আয়োজিত মেইড ইন বাংলাদেশ উইক বিশ্বে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত করবে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
তিনি বলেন, মাথা উঁচু করে যেন আমরা দাঁড়াতে পারি সেটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য।…২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে সেই লক্ষ্যেই আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেই। বেসরকারি খাতসহ প্রতিটি খাতে যেন ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে পারে, সবকিছু উন্মুক্ত করে দেই। মোবাইল ফোনের প্রসার ঘটে, প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ করে দেই। বিনিয়োগবান্ধর কর্মসূচি হাতে নেই।
তিনি উল্লেখ করেন, জিডিপিতে সব থেকে বেশি অবদান রেখে যাচ্ছে গার্মেন্ট খাত। এটা স্বীকার করতে হবে। রফতানি খাত যেন আরও প্রসারিত হয় সেজন্য পণ্য ও সেবাকে দীর্ঘমেয়াদি প্রণোদনা দেই। নতুন বাজার তৈরির উদ্যোগকেও উৎসাহিত করছি। যারা গ্রিন কারখানা স্থাপন করেছেন তাদের কর কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে এসেছি। পরিবেশবান্ধব কারখানার জন্য সব সুযোগ করে দিয়েছি। সুযোগ ও প্রণোদনা সবাই কাজে লাগাতে পারে না। গার্মেন্ট শিল্প সেটা পেরেছে।

বাংলাদেশের রফতানি বাজার বহুগুণে বিস্তৃতি লাভ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনার সময় ব্যবসায়ীরা উদ্বেগে ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার সেসময় উদ্যোগ নেয়। সুদের হার কমিয়ে ভর্তুকি দিয়েছি। রিজার্ভ থেকে বিশেষ ফান্ড করে দিয়েছি। ২৮টি প্যাকেজের আওতায় টাকা দেওয়া হয়েছে। অল্প সুদে ২ দশমিক ৩৭ ট্রিলিয়ন টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। সব বাধা অতিক্রম করে ব্যবসাটা আপনারা চালাতে পারছেন।
করোনাকালে পোশাকখাতে প্রণোদনা দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রফতানি খাতে জিডিপিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে পোশাক রফতানি খাত। করোনাকালীন সময়ে বৈশ্বিক মন্দা রফতানি খাত শক্তভাবে মোকাবেলা করেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে সরকারের প্রণোদনার কারণে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেইড ইন বাংলাদেশের কারণে পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুযোগ করে দেওয়ার বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ক্রমক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজস্ব বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। করোনাকালিন সময়ে গ্রাম পর্যায়ের যত বেশি সম্ভব অর্থ বরাদ্ধ করেছি।
যারা শ্রম দেয় তারাও এই দেশের মানুষ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, তাদের উন্নত ট্রেনিং দিতে চাই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পদধ্বনি শুনছি। এর উপযোগী মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট যেমন আনতে হবে, স্কিলড লেবারও আমাদের দরকার। এবিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছি। কাপড়ের মান বাড়াতে হবে। এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। শ্রমিকদের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছি। তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা, পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন করা এসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের নজর দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার রাজনীতি হচ্ছে এদেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের জন্য। তাদের দক্ষতা যোগ্যতা কাজে লাগাতে হবে। সাড়ে ১৬ কোটির ওপরে মানুষ। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। নিজেরা উৎপাদন করতে হবে। ভিক্ষা করে চলবো না।
সরকার ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে, ১০০ সেতুর উদ্বোধন করেছে, যোগাযোগের বিরাট নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত মানব সম্পদ গড়ে তোলায় জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শিল্পকারখানাকে পরিবেশবান্ধব হওয়ার তাগিদও দেন।
বর্তমান সরকার মেহনতী মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারি সারাবিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। আমি জানি, আমাদের ব্যবসায়ীরা অনেক উদ্বিগ্ন ছিলেন। সেই সময় আওয়ামী লীগ সরকার পদক্ষেপ নেয়। তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার সুফল এখন আমরা পাচ্ছি। সকল বাধা অতিক্রম করে ব্যবসা-বাণিজ্য এখন চলছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। মূল্যস্ফীতি, রাশিয়া ইউক্রন যুদ্ধ, স্যাংকশন, পাল্টা স্যাংকশন আছে। উন্নত দেশগুলোও ভুক্তভোগী হচ্ছে। ব্যবসাবাণিজ্য স্থবির হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। এই যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কীভাবে এর থেকে উত্তরণ ঘটানো যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের আরও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
‘মেড ইন বাংলাদেশ উইক ২০২২’ এর উদ্বোধনের পর, কার্নিভাল হলে ‘এক্সপেরিয়েন্স দ্য ট্রান্সফর্মেশন অব দ্য আরএমজি টুয়ার্ডস সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ইনোভেশন’ শিরোনামের একটি ডিসপ্লে জোনও খোলা হয়েছে যা ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুটি কফি টেবিল বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন, যার ওপর বিজিএমইএ চলতি বছরের শুরু থেকে কাজ করছে। পোশাক রফতানিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ চার জন তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারককে বিশেষ সম্মাননাও প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশন (আইএএইফ) সভাপতি সেম অলটান এবং বিজিএমইএ সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি বক্তৃতা করেন। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। দেশের পোশাক খাতের অগ্রগতি এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক পৃথক দুটি ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।