আ.লীগের প্রার্থীদের পরাজয়ের পেছনে দলের দায়ীদের ছাড় নয়: শেখ হাসিনা

SHARE

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয়ের পেছনে দলের দায়ীদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, যারা নৌকার প্রার্থীকে হারিয়েছেন তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। কিছুটা শিক্ষা ও শাস্তি তাদের পেতেই হবে।
কোন্দল-দ্বন্দ্বে জড়িত মন্ত্রী-এমপিদেরও সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবার আমলনামা আমার কাছে আছে। যারা দলের মধ্যে উপদল সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত, তাদেরও ছাড়া হবে না। আগামী নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে জানিয়ে দলের মন্ত্রী-এমপিদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, প্রত্যেক নির্বাচনই চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আগামী নির্বাচন আরও চ্যালেঞ্জিং হবে।
তাই যেখানে দলের মধ্যে বিভেদ বা দ্বন্দ্ব রয়েছে দ্রুতই তা নিরসন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন অপশক্তিই আমাদের দলকে হারাতে পারবে না। তিনি সরকারের গত সাড়ে ১৩ বছরের উন্নয়ন কর্মকা- প্রতিটি ভোটারের ঘরে ঘরে গিয়ে তুলে ধরার জন্যও দলীয় এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন।
দীর্ঘদিন পর গতকাল বুধবার (২ নভেম্বর) রাতে সংসদ ভবনের ৯ম তলাস্থ সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সংসদীয় দলের বৈঠকে সরকারি দলের উপনেতা কে হবেন এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। বৈঠকে বেশ ক’জন সংসদ সদস্য সরকারের কিছু মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তাদের কোন কথা না শোনারও অভিযোগ করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, সভার শুরুতেই আসন্ন দলের জাতীয় ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন, আগামী নির্বাচনসহ সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন মোকাবিলায় দলের এমপি-মন্ত্রীদের উদ্দেশে করে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরে দলের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য বক্তব্য দেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক মন্ত্রী-এমপি বলেন, দলীয় সভাপতি তার সূচনা বক্তব্যে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়েও কথা বলেছেন। বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকারের তরফে কোন বাধা দেওয়া হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করি। তারা (বিএনপি) শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চায় করবে। এখানে বাধা দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। কিন্তু আন্দোলনের নামে অতীতের মতো তারা যদি অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে সেক্ষেত্রে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা- জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় দলের বৈঠকে নিজ দলের সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সামনে জাতীয় সম্মেলন। আমার কাছে তথ্য আছে অনেক জায়গায় এমপিরা জেলা-উপজেলা সম্মেলন করতে দেন না। নিজেরাও দায়িত্বশীল হয়ে সম্মেলন করেন না। সংসদ সদস্যদের এ ধরনের আচরণ বন্ধ করতে হবে। দ্রুত এসব জায়গায় সম্মেলন করতে হবে, ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হবে। জাতীয় সম্মেলনের আগে এসব জেলায় সুন্দরভাবে সম্মেলন অনুষ্ঠান দেখতে চাই।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় পর্যায়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো তদারকি করার জন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, যেসব উন্নয়ন কাজগুলো চলছে সেটা যেন ঠিকমতো শেষ হয় তা দেখতে হবে। সরকারের কৃচ্ছ্র সাধনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নতুন কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে না বলেও বৈঠকে জানান সরকারপ্রধান।
বৈঠকে উপস্থিত সরকার দলের একাধিক সিনিয়র এমপি ও বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য জনকণ্ঠকে জানান, বিভিন্ন সময স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থী পরাজিত হয়েছে তার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের বিরোধিতার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ’আমি নৌকার মনোনয়ন দিয়েছি। কিন্তু অনেক নেতা দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। সব তথ্য আমার কাছে আছে।
তাদের কারণে অনেক জায়গায় নৌকার প্রার্থী হেরে গেছেন। নৌকাকে যারা হারিয়েছেন তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে হুইপ আতিউর রহমান আতিক তার বক্তব্যে অনেক এলাকায় উন্নয়নকাজের সমবণ্টন হচ্ছে না উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নিজেদের এলাকাতে প্রাধান্য না দিয়ে সকল এলাকার দিকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানান।
মন্ত্রীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, উন্নয়ন কাজ হলেই নির্বাচনে আমরা আবারও বিজয়ী হব। আমরা জয়ী হলে দল ক্ষমতায় আসবে, আর দল ক্ষমতায় আসলে আপনারা আবারও মন্ত্রী হবেন। তাই শুধু নিজেদের এলাকার দিকে নয়, দলের সব এমপিদের দিকে নজর দিন।
এদিকে কয়েকজন সংসদ সদস্য বক্তব্যকালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, অনেকে নৌকা নিয়ে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরে আমাদের মূল্যায়ন করেন না। অনেকেই আছে আমাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য কথা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য দিয়ে এমপিদের হেয় করার চেষ্টা করেন।
স্থানীয় পর্যায়ের সম্মেলনেও আমাদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এতে সংসদ সদস্য হিসেবে আমরা প্রশ্নের মুখে পড়ি, এভাবে চলতে পারে না। বৈঠক সূত্র জানায়, ঢাকার এমপি ও ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল আলম মহিউদ্দিন তার বক্তব্যে আমলাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কিছু আমলা এবং এনবিআরে কর্মকর্তাদের জ্বালায় ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। তারা ভালভাবে ব্যবসা করতে পারছেন না। ব্যবসায়ীরা এদের হাত থেকে মুক্তি চায়।
বৈঠকের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সেক্রেটারি ও জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন পরে সংসদীয় দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের জনগণের দ্বারে দ্বারে যেতে বলেছেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে বলেছেন।