বিরোধী দলনেতার পদ যেন কংগ্রেস না পায়, তৎপর বিজেপি

SHARE

কংগ্রেসের জন্য কি আরও একটা বড়সড় ধাক্কা অপেক্ষা করে আছে? শতাব্দীপ্রাচীন দলকে কি আরও একটা লজ্জার মুখে পড়তে হবে? কারণ, চেষ্টা চলছে, লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ যেন কংগ্রেসের কাছে না-যায়৷ এমনিতে সংসদীয় রীতি মেনে সবথেকে বড় বিরোধী দলের নেতা এই সম্মান পেয়ে থাকেন৷ তবে নিয়ম হলো, সেই বিরোধী দলকে লোকসভার মোট সদস্যসংখ্যার অন্তত দশ শতাংশ আসন পেতে হয়৷ প্রাপ্ত আসনসংখ্যার নিরিখে কংগ্রেস সবথেকে বড় বিরোধী দল হলেও, দশ শতাংশ আসন কিন্ত্ত পায়নি৷ তবে যেহেতু জোট হিসেবে ইউপিএ দশ শতাংশ আসন পেয়েছে এবং এই জোট ছিল ভোটের আগে থেকেই, তাই বিরোধী দলনেতার পদ কংগ্রেসের কাছেই যাওয়ার কথা৷ কিন্ত্ত এখন চেষ্টা চলছে, জয়ললিতা, মমতা এবং নবীন পট্টনায়কের দল মিলে লোকসভায় একটা ব্লক তৈরি করুক৷ তা হলে সেই ব্লককেই বিরোধী দলনেতার পদ দেবেন স্পিকার৷ এ নিয়ে কথাবার্তাও শুরু হয়েছে৷ তবে আলোচনা যে খুব এগিয়েছে, এমনটা নয়৷
image_82707_0
শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস যদি বিরোধী দলনেতার পদ পায়ও, তা হলেও সম্ভবত সোনিয়া বা রাহুল সেই পদ নেবেন না৷ বরং, কমল নাথের মতো কোনো নেতাকে এই পদ দেয়া হতে পারে৷ কারণ দুটো, তার দীর্ঘ দিনের সংসদীয় অভিজ্ঞতা এবং সব দলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও গ্রহণযোগ্যতা৷ কিন্ত্ত কংগ্রেস থেকে কে বিরোধী দলনেতার পদ পাবেন, এই প্রশ্নটার চেয়েও বড় হলো, এই পদ কংগ্রেস আদৌ পাবে কি?

কংগ্রেস নেতারা যুক্তি দেখাচ্ছেন, ২০১২-র সেপ্টেম্বরে পশ্চিমবঙ্গে যখন কংগ্রেস রাজ্য সরকার থেকে বেরিয়ে আসে, তখন তাদের বিধায়কসংখ্যা সিপিএমের থেকে বেশি ছিল৷ তখন কংগ্রেস বিরোধী দলনেতার পদ দাবি করে৷ কিন্ত্ত বিধানসভার অধ্যক্ষ রুলিং দেন, যেহেতু নির্বাচনপূর্ব জোট হিসেবে বামফ্রন্ট ভোটে লড়েছে, তাই বিরোধী নেতার পদ তাদের কাছেই যাবে৷ কিন্ত্ত বিজেপি নেতাদের দাবি, বিধানসভার নিয়ম লোকসভায় খাটবে না৷ এখানে লোকসভার অধ্যক্ষ চাইলেই নতুন ব্লককে এই পদ দিতে পারেন৷

এখানে আরও একটি বিষয় আছে৷ কংগ্রেস যাতে বিরোধী দলনেতার পদ না-পায়, সে ব্যাপারে বিজেপি যথেষ্ট উৎসাহী৷ কারণ, এমনিতেই কংগ্রেসের দুর্দশা, তার উপর কংগ্রেসকে আরও একটি ধাক্কা দেয়ার সুযোগ কিছুতেই ছাড়তে চাইবে না গেরুয়া শিবির৷ বরং, তারা এটাও দেখাতে চায়, কংগ্রেসের দুরবস্থাটা এখন এমনই যে, বিরোধী নেতার পদও তারা পাচ্ছে না৷

কিন্ত্ত বিরোধী ব্লক গড়তে কি এখন জয়ললিতা, নবীন ও মমতা হাত মেলাবেন? তৃণমূলের রয়েছে ৩৪ জন সাংসদ, জয়ার ৩৭৷ সে ক্ষেত্রে তারা হাত মেলালে সংখ্যাটা কংগ্রেসের চেয়ে বেশি তো হবেই, এমনকি ইউপিএ-র ৬০টি আসনকেও ছাপিয়ে যাবে ৷ আর নবীন মমতা-জয়ার সঙ্গে যোগ দিলে সংখ্যাটা দাঁড়াবে ৯১৷ জয়ললিতা ও নবীন হাত মেলালেও তাদের সম্মিলিত সংখ্যাটা ইউপিএ-র কাছাকাছি চলে আসবে৷ তৃণমূল কংগ্রেস এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ না-খুললেও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং ব্যারাকপুরের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী এই বিষয়গুলো নিয়ে মধ্যস্থতার জন্যই দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়েছেন৷ ভোটের ফল প্রকাশের পর রাজ্যসভায় যিনি জয়ললিতার এআইএডিএমকে-র নেতা, সেই ভি মৈত্রেয়ণের সঙ্গে নাকি কথাও হয়েছে মুকুলের৷

শেষ পর্যন্ত যদি সত্যিই এই তিনটি রাজনৈতিক দলের ব্লক হয় এবং লোকসভার অধ্যক্ষ তাদের হলে রুলিং দেন, তখন কংগ্রেসের দুরবস্থা নিশ্চিত ভাবেই বাড়বে৷ তবে প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী প্রথমেই এই ধরনের কাজে উৎসাহ জোগাবেন কি না, সে ব্যাপারেও প্রশ্নও রয়েছে৷- ওয়েবসাইট