ডেঙ্গুতে অন্য দেশের তুলনায় মৃত্যু কম, তবুও আমরা উদ্বিগ্ন: তাজুল

SHARE

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কম হলেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, এডিস বা ডেঙ্গু নিয়ে ২০১৯ সালে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে ২০২০, ২১ ও ২২ এ তিন বছর আমাদের সমসাময়িক দেশগুলোর তুলনায় আমরা সফলতা অর্জন করলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি।

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত সারাদেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে চতুর্থ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহিদুল্লা খন্দকারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আবার এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে আমরা সমসাময়িক দেশগুলোর তুলনায় আমরা অনেক ভালো আছি। বিশেষ করে ১৪ সেপ্টেম্বরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার ৯৭০ জন, ভারতে ৩০ হাজার ৬২৭ জন, মালয়েশিয়ায় ৩৩ হাজার, ফিলিপাইনে ৮২ হাজার ৫৯৭ জন, কম্বোডিয়াতে তিন হাজার ৩২২ জন, ভিয়েতনামে এক লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৬ জন, ইন্দোনেশিয়াতে ৬৮ হাজার ৯০৩ জন। আর বাংলাদেশে নয় হাজার ৮৩৭ জন। সে হিসাবে আমাদের অবস্থান অনেক অনেক ভালো। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ দেবো।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের পর আমরা ক্লাস্টারভিত্তিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর প্রতিটা ওয়ার্ডকে ১০ জোনে ভাগ করে কাউন্সিলরকে প্রধান করে কমিটি করে দিয়েছি। এরপর ওইসব এলাকায় কী পরিমাণ মশা নিধনের জন্য ওষুধ লাগবে তা নির্ণয় করে আমদানি ও মজুত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই সময় জনবল সংকট ছিল, একদিনে তিন হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে ফগার মেশিন ছিল না সেখানে কেনার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মশা নিধনের প্রতিশেধক আমদানিতে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। জনগণকে সব কাজে অংশগ্রহণ করা দরকার।

তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের আজ সভাটি ডাকার উদ্দেশ্য হলো, অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে কম সংখ্যক লোক আক্রান্ত হয়েছেন, তবে মৃত্যু হলে আমাদের ব্যথিত করে। এ বিষয়টা নিয়ে আমরা সত্যি উদ্বিগ্ন।

আগের সভার সিদ্ধান্তগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সব সিদ্ধান্ত দৃশ্যমান ও বাস্তবায়ন করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। আজ বসার মূল কারণই এটা। যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোথায় কোনো নতুন কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে কি না। তারা যদি কাজ না করতেন, তাহলে আজ যে ফিগারটা দিলাম সেটা আসতো না। আমরা যে কাজ করছি তার বড় সফলতা হচ্ছে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো আছি। এর মানে আমাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে।

বর্তমানে ঢাকাতে করোনার থেকে ডেঙ্গুরোগীর আক্রান্তের ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, করোনাতে আমরা সফল বলে ডেঙ্গুতে অসফল সেটা প্রমাণ করা যাবে না। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ডেঙ্গুতে ভালো করছি। আমার কাছে যে তথ্য আছে সেটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য। জানুয়ারি থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নয় হাজার ৮৩৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। এর মধ্যে ঢাকা ও কক্সবাজারে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জন করে মোট ৩৪ জন। চট্টগ্রামে একজন ও বরিশালে চারজন ডেঙ্গরোগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ভারতে ১২ জন, ফিলিপাইনে ৩১৯ জন, ইন্দোনেশিয়াতে ৬৪০ জন, ভিয়েতনামে ৫৩ জন ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করে ছিলেন এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২০১৯ সালের থেকে বেশি হবে
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি কাউকে অসম্মান করতে পারি না। তারা তাদের বিভিন্ন গবেষণা থেকে ধারণা করেছেন। তাদের ধারণা যে সবসময় ঠিক হবে সেটা বলা যাবে না। তবে তাদের আতঙ্ক সঠিক ছিল। আমরা যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছি সে কারণে আমরা ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি। তবে এডিশ মশার ডিম দুই বছর পর্যন্ত থেকে যেতে পারে।