অভিজিৎ হত্যাই প্রমাণ- নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ: বিএনপি

SHARE

bnp logoবিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “গত বৃহস্পতিবার রাত নয়টায় বাংলা একাডেমি ও টিএসসির মতো স্থানে নিশ্ছিদ্র পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে এদেশের কোনো নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ। আমরা অভিজিৎ হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।”

শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহ উদ্দিন বলেন, “এই নিপীড়ক শাসকচক্রের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন সংগ্রাম কেবলই বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই নয়। রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের কাছে ফেরত দেয়ার এই আন্দোলনকে সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড হিসেবে উপস্থাপনের সীমাহীন অপচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে।”

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “অবৈধ সরকার অস্ত্রের জোরে জনগণের সকল গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে প্রতিমুহূর্তে মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জনকে পদদলিত করে গণতন্ত্রকেই বিলুপ্ত করে দিতে চায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর স্মরণে রাখা উচিৎ-তার বাবা বাকশাল গঠনের মাধ্যমে গণতন্ত্র হত্যা করে যেমন আওয়ামী লীগকে অস্তিত্বহীন করে দিয়েছিল; তেমনি তিনিও বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পূণর্বার আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে দাফন করার আয়োজন করে চলেছেন।”

বিএনপির মহাসচিব বলেন, “দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের নিভৃত পল্লীতে শুক্রবার মিথ্যা মামলায় বিএনপি নেতাকে ধরতে গিয়ে ছেলে রেজওয়ানুলকে হত্যা করে স্ত্রী-কন্যাকে গুলিবিদ্ধ করে পুলিশ গ্রামবাসীর প্রতিরোধে পলায়ন করতে বাধ্য হয়। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আজ দেশের সকল পাড়ায়-মহল্লায় জনগণের নেতৃত্বে স্বত:স্ফুর্তভাবে প্রতিরোধ-সংগ্রাম কমিটি গড়ে উঠেছে। জনতার স্বত:স্ফুর্ত প্রতিরোধের মুখেই অবৈধ সরকারও পলায়নে বাধ্য হবে অতি শিগগিরই। রাস্তায় কয়েকটি গাড়ি চলাচল দেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুললেও আন্দোলনে তৃণমূলের ব্যাপক অংশগ্রহণ আওয়ামী সরকারকে সমূলে উৎপাটন করতে বেশী সময়ের প্রয়োজন হবে না। আমি এই হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সময়ের পরিবর্তনে এ সকল নারকীয় হত্যাকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত আদালতে বিচার করা হবে।”

তিনি বলেন, “জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি জাকির হোসেন, ছাত্রনেতা মৃণাল কান্তিকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে বোমাবাজ সাজানোর পুলিশী নাটকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এছাড়া, ছাত্রদল, যুবদলসহ যেসকল অসংখ্য নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতারের পর অস্বীকার করছে তাদের সকলের তালিকা আমরা সংরক্ষণ করছি। পুলিশ-র্যাবের কতিপয় দলকানা সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-এই সরকারই শেষ সরকার নয়; অতএব অবৈধ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা করে আইনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন না।”

সালাহ উদ্দিন বলেন, “বিনা ভোটের অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হুকুমে র্যাব, পুলিশ, বিজিবির কতিপয় দলবাজ সেবাদাস কর্তাব্যক্তিরা আন্দোলনরত বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন কায়দায় ক্রসফায়ারের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করে সমগ্র দেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করলেও তারা অবৈধ সরকারকে রক্ষা করতে পারবে না। ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত সর্বত্র ঐসমস্ত দলবাজ পিশাচ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা প্রণয়ন অব্যাহত রেখেছে।”

তিনি বলেন, “বিএনপির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব সংগ্রামী জননেতা অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে পুনরায় পুলিশ রিমান্ডে নেয়ায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ রিজভীকে হত্যার উদ্দেশ্যেই সরকার গ্রেফতারের পর থেকে আজ পর্যন্ত কারাগারে না নিয়ে ২৯ দিন লাগাতার পুলিশী রিমান্ডে নেয়ার নজিরবিহীন ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। রিজভী আহমেদের যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। গোটা রাষ্ট্রের জনগণই আজ পুলিশি রিমান্ডে জীবন যাপন করছে, জাতিকে সেই পুলিশি রিমান্ড থেকে মুক্ত করার জন্য অবিরাম সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই।”

তিনি বলেন, “গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান অনির্দিষ্টকালের শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি রোববার সকাল ছয়টা থেকে বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ৭২ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল এবং রোববার সারাদেশে অনুষ্ঠিতব্য গণমিছিল শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে  খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আবারো বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে উদ্বাত্ত আহবান জানাচ্ছি।”