শেষ ৫ ওভারে সোহান আর জিয়ার ছক্কা-বৃষ্টি

SHARE

১৫ ওভার শেষে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ৮৫। সেখান থেকে শেষ ৫ ওভারে রীতিমত তাণ্ডব চালালেন নুরুল হাসান সোহান আর জিয়াউর রহমান। তাদের ছক্কা-বৃষ্টিতেই ৫ উইকেটে ১৬১ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ শেখ জামালের।

মিরপুরের প্রেসবক্সে সোহান-জিয়ার ঝড় নিয়ে যতটা না আলোচনা, তার চেয়ে বেশি আলোচনা সাকিব আল হাসানের অদূরদর্শি নেতৃত্ব নিয়ে। বোলার সাকিব বল হাতে দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত পারফরম্যান্স উপহার দিলেন অধিনায়ক সাকিব মগজের খেলায় একদম ছিলেন পিছিয়ে। এই ম্যাচে তার নেতৃত্ব রীতিমত হতাশ করেছে মোহামেডান সমর্থকদের।

শেখ জামাল ইনিংসের ১৭ নম্বর ওভারে ২১ রান দেয়ার পরও শেষ ওভারে আবারও সাকিব বোলিংয়ে আনেন পেসার আবু হায়দার রনিকে। রনি সেই ওভারেও দুই ছক্কা হজম করে ১৪ রান দিয়ে বসেন।

একাদশে দুই অফস্পিনার শুভাগতহোম ও মাহমুদুল হাসান লিমন থাকার পরও দশ ওভারের পর থেকে টানা পেস বোলার ব্যবহার ও তাদের বেদম মার খাওয়ার পরও চালিয়ে যাওয়া ছিল সাকিবের চরম অদূরদর্শিতা। যার জন্য ভুগতে হয়েছে মোহামেডানকে।

আগের ম্যাচে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে ১৬ রানে ২ উইকেট পাওয়া সাকিব অবশ্য আজ শেখ জামালের বিপক্ষে বিগ ম্যাচেও দারুণ বোলিং করেছেন। তার ম্যাচ ফিগার ১২ রানে ২ উইকেট (৪ ওভারে)।

মোহাম্মদ আশরাফুল আর সৈকত আলী, প্রতিপক্ষ শেখ জামালের দুই ওপেনারই ডান হাতি; তা দেখে জেনেবুঝেই এদিন সাকিব ওপেনিং বোলারের ভূমিকায়।

তার মাপা ও বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের বিপক্ষে রান করতে রীতিমত হিমশিম খেয়েছেন আশরাফুল আর সৈকত। প্রথম ২ ওভারে উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় স্পেলে এক ওভারে আশরাফুল আর ফারদিন হাসানকে আউট করে শেখ জামালকে পেছনের পায়ে ঠেলে দেন মোহামেডান ক্যাপ্টেন।

আশরাফুলকে ফিরিয়ে শেখ জামালের উদ্বোধনী জুটিটি ভাঙেন সাকিব। অফ মিডলে পিচ পড়া ডেলিভারিকে সুইপ করতে গিয়ে লং লেগে ক্যাচ তুলে দেন ধীরগতির ইনিংস খেলা (২৪ বলে ১৫) আশরাফুল। একদম সীমানার ওপরে দাড়িয়ে ফুট দুয়েক আগে সে ক্যাচ ধরেন আসিফ হাসান।

এ বাঁহাতি স্পিনার বল হাতেও ভালো করেছেন। তার ৪ ওভারের মাপা স্পেলে ওঠে ১৮। শেখ জামালের আরেক ওপেনার সৈকত আলীর উইকেটটি জমা পড়ে বাঁহাতি স্পিনার আসিফের পকেটে। সাকিবের মাপা বোলিংয়ে ৬.৩ ওভারে ৩০ রানে ভাঙে প্রথম উইকেট জুটি। তারপর রান গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন নাসির।

প্রথমে থার্ডম্যান দিয়ে পরেরবার অন ড্রাইভ করে বাউন্ডারি। কিন্তু ৫ বলে ৯ রান করার পর আবু হায়দার রনির বলে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে নাসির। এরপর ইলিয়াস সানি লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে মনে হচ্ছিল শেখ জামালের স্কোর হয়তো একশো‘র আশপাশে থামবে।

কিন্তু শেষ ৫ ওভারে সোহান আর জিয়ার অবিশ্বাস্য উইলোবাজিতে শেষ অবধি ১৬১ রানের বড় ও লড়াকু স্কোর পেয়েছে শেখ জামাল। আবু জায়েদ রাহি, তাসকিন আহমেদ আর আসিফ হাসানকে তিন ছক্কা হাঁকানোসহ শেখ জামাল অধিনায়ক সোহান খেলেছেন ৩১ বলে ৬০ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস। মাত্র ২৯ বলে হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন সোহান। যার মধ্যে ছিল পাঁচটি বিশাল ছক্কা।
তার সাথে আরও একটি সহায়ক ইনিংস উপহার দিয়েছেন জিয়াউর রহমানও। হাত খুলে খেলার অনেক নজির আছে তার। আজ শেরে বাংলায় দলের সংকটে ঘাবড়ে না গিয়েও ঝড়ের গতিতে ১৭ বলে ৩৫ রান করেছেন জিয়া।

১৭ নম্বর ওভারে মোহামেডান পেসার আবু হায়দার রনিকে দুই ছক্কা হাঁকান জিয়া। ওই ওভারে রনি ২১ রান দিলে শেখ জামাল ইনিংসে আসে প্রাণের সঞ্চার।

তারপর শুরু হয় ছক্কা-বৃষ্টি। আবু হায়দার রনি, তাসকিন আহমেদ আর আবু জায়েদ রাহি-জাতীয় দলে খেলা তিন পেসারকে সাধারণ মানে নামিয়ে শেরে বাংলা ছক্কায় সয়লাব করেন সোহান আর জিয়া।

আগের কদিনের তুলনায় আজ সোমবার শেরে বাংলার উইকেটটি তূলনামুলক ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি। আগের ম্যাচে শাইনপুকুরের ১৬২ রান টপকে ৪ উইকেটে জিতেছে প্রাইম দোলেশ্বর। সেই উইকেটে আজ প্রথম ১০ ওভারে শেখ জামালের রান ছিল ৩ উইকেট ৫১।

এমনকি ১৫ ওভার শেষেও স্কোর ছিল ৮৫। সেই ম্যাচে শেষ ৫ ওভারে উঠলো ৭৬ রান। আগে দুই বাঁহাতি স্পিনার সাকিব (১২) আর আসিফ (১৮) ৮ ওভারে ৩০ রান দিলেও তিন পেসার তাসকিন, রনি ও রাহি ১২ ওভারে দিয়েছেন ১৩১।

তাসকিন ৪ ওভারে ৩৩ রানে উইকেটশূন্য। রাহি ৪ ওভারে ৩৮ আর আবু হায়দার ৪ ওভারে ২ উইকেট পেলেও বেদম মার খেয়ে দিয়েছেন ৫৩ রান।