ভারতে পাচারের শিকার সহস্রাধিক নারী, এক তরুণীর মামলা

SHARE

ভারতে পাচার হওয়ার ৭৭ দিন পর কৌশলে দেশে ফেরা এক তরুণী মঙ্গলবার রাজধানীল হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছে। ওই মামলায় সাতক্ষীরা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, এ চক্রের মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার নারী পাচারের শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি ভারতে গ্রেফতার মগবাজারের ‘টিকটক’ হৃদয় বাবু এই চক্রের সমন্বয়ক।

নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

ভারতফেরত পাচার ওই কিশোরী নিজের ওপর নির্যাতনের করুন কাহিনি পুলিশকে শুনিয়েছেন । মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে তার দায়ের করা মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তারা হলেন- মেহেদী হাসান বাবু, আবদুল কাদের ও তার ছেলে মহিউদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাচারের শিকার কিশোরীর সাথে ২০১৯ সালে হাতিরঝিলে মধুবাগ ব্রিজে টিকটক হৃদয় বাবুর পরিচয় হয়। কখনো টিকটক স্টার বানাতে চেয়ে বা ভালো বেতনের চাকরির অফার দিয়ে কিশোরীকে প্রলুদ্ধ করার চেষ্টা করে হৃদয় বাবু।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের এডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে ৭০-৮০ জনকে নিয়ে ‘টিকটক হ্যাংআউট’ এবং ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে ৭০০-৮০০ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে পুল পার্টির আয়োজন করে হৃদয় বাবু। এ বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় বাউল লালন শাহ মাজারে আয়োজিত টিকটিক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় এই মানব পাচারকারীর চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় কৌশলে ওই কিশোরীকে ভারতে পাচার করে হৃদয় বাবু।

পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ার পর থেকে পালিয়ে দেশে ফেরা পর্যন্ত তার অপর লোমহর্ষক নির্যাতন চালানো হয়।

পুলিশের ডিসি শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ভারতে পাচারের পর কিশোরীটিকে ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাসায় রাখা হয়। বাসাগুলোতে হাতিরঝিল এলাকার আরো কয়েকজন তরুণী ও কিশোরীর সঙ্গে দেখা হয় ওই কিশোরীর।

তাদের মধ্যে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওর নির্যাতিত তরুণীও ছিলেন, যাদের সুপার মার্কেট, সুপার শপ বা বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয় বলে তিনি জানান।

ভারতের বেঙ্গালুরুতে সম্প্রতি বাংলাদেশের এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। শারীরিক নির্যাতনের সময় ২২ বছরের ওই তরুণীকে দল বেঁধে ধর্ষণও করা হয় বলে এনডিটিভি জানায়।

ওই ঘটনায় ভারতের বেঙ্গালুরু পুলিশ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে টিকটক হৃদয় বাবুসহ দুজন পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের পুলিশ। তারা সবাই বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মানবপাচারের এই চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজনকে সম্প্রতি ঝিনাইদহ সদর, যশোরের অভয়নগর ও বেনাপোল থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

শহীদুল্লাহ বলেন, ব্যাঙ্গালুরুতে পৌঁছার কয়েকদিন পরই ভিকটিম কিশোরীকে চেন্নাইয়ের একটি হোটেলে ১০ দিনের জন্য পাঠানো হয়। ওই হোটেলে রেখে তার উপর অমানবিক শারীরিক ও বিকৃত যৌন নির্যাতন চালানো হয়। কৌশলে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে কিংবা জোরপূর্বক বিবস্ত্র ভিডিওধারণ করে পরিবারের সদস্য পরিচিতদের তা পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জিম্মি করে রাখা হয়।

ভারতে পাচারের ৭৭ দিন পর সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া নির্যাতিত ওই তরুণীর সহায়তায় আরও ২ জন বাংলাদেশিসহ এই তরুণী পালিয়ে বাংলাদেশ আসতে সক্ষম হয়।