এলএসডি সেবন ও ব্যবসায় ১৫ গ্রুপ সক্রিয়: পুলিশ

SHARE

দেশে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড বা এলএসডি মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে ১৫টি সক্রিয় গ্রুপ রয়েছে। রাজধানীর শাহজাহানপুর, রামপুরা, বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি গ্রুপের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাররা সবাই শিক্ষার্থী।

তারা হলেন- সাইফুল ইসলাম সাইফ (২০), এসএম মনওয়ার আকিব (২০), নাজমুস সাকিব (২০), নাজমুল ইসলাম (২৪) ও বিএম সিরাজুস সালেকীন (২৪)।

রোববার (৩০ মে) রাতে পল্টন থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ।

তিনি বলেন, গতকাল রাত থেকে শাহজাহানপুর, রামপুরা, বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এলএসডি সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ভয়ঙ্কর মাদক ২ হাজার মাইক্রোগ্রাম এলসডি, আইস ও গাঁজা জব্দ করা হয়েছে।

ডিসি আহাদ বলেন, গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, তারা সবাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদ। গত এক বছর ধরে এলএসডি সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত তারা। অনলাইনে ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তারা আসক্ত হয়ে এলএসডি সেবন শুরু করে। মূলত বিদেশ থেকে এলএসডি মাদক সংগ্রহ করে তারা। রাজধানীতে ১৫টি গ্রুপ রয়েছে যারা এলএসডি বিক্রি করে আসছে। গ্রুপগুলো গত এক বছর ধরেই এই এলএসডি বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত।

১৫টি গ্রুপকে শনাক্ত করা গেছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, তারা সরাসরি ব্যবসা ও সেবনের সঙ্গে জড়িত। অনলাইনের মাধ্যমে এলএসডি মাদক নিয়ে আসতো। তবে তাদের শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে কাজ চলছে।

তারা কোন দেশ থেকে এলএসডি নিয়ে আসতো—এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, মূলত ইউরোপ থেকে এলএসডি নিয়ে আসতো। ১৯৩৮ সালে সুইজারল্যান্ডের একজন বিজ্ঞানী ওষুধ হিসেবে এলএসডি আবিষ্কার করে। পরে এটি অপব্যবহার হয়ে মাদক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

দেশে এলএসডি কীভাবে আসে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুরিয়ার ও লাগেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশে এলএসডি আসে। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ১৪ থেকে ১৫টি গ্রুপ দেশে এলএসডি আনার সঙ্গে জিড়িত। আমরা এই গ্রুপের সব সদস্যকে আইনের আওতায় আনতে পারব বলে আশা করি।

দেশে এই গ্রুপগুলো কত দিন ধরে সক্রিয় আছে, জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা গত এক বছর ধরে এলএসডি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া গত এক বছর ধরে তারা এলএসডি সেবন করছে বলে জানা গেছে। গ্রুপের বাকি সদস্যদের গ্রেফতার করলে বুঝতে পারব তারা দেশে কতদিন ধরে সক্রিয়।

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত এলএসডি বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে আটজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি। এদের মধ্যে গত বুধবার (২৬ মে) মহাখালী ডিওএইচএস থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪৬ স্ট্রিপ এলএসডি উদ্ধার করা হয়। শনিবার (২৯ মে) রাজধানীর খিলগাঁও এবং ভাটারা থেকে আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের থেকে দুই হাজার মাইক্রোগ্রাম এলএসডি জব্দ করা হয়।

গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রচলিত যেসব মাদক আছে এর মধ্যে এলএসডির দাম এখন পর্যন্ত সব থেকে বেশি। বর্তমানে এলএসডি মিশ্রিত ৩ পিস রঙিন প্রিন্টের ব্লট পেপারের দাম (আনুমানিক ওজন শূন্য দশমিক শূন্য এক গ্রাম) ৩ হাজার টাকা। ফলে ইয়াবা, গাঁজা কিংবা হেরোইন থেকে কয়েক গুণ বেশি ক্ষতিকারক এই মাদক এখনও সব শ্রেণির মাদক সেবীদের হাতের নাগালের বাইরে। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে দেশে গড়ে উঠেছে এলএসডির বাজার। দেশে এলএসডির ব্যবসা এবং সেবনের সঙ্গে জড়িত এমন ১৫টি গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। এসব গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গত এক থেকে দেড় বছর আগে দেশি বিদেশি বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক প্রচারণার মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এলএসডির প্রতি আকৃষ্ট হন। পরে তারা কৌতূহলবশত অনলাইনে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে এলএসডির সেবন প্রক্রিয়া ও কোথায় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপ খুলে এলএসডি দেশে নিয়ে আসা ও সেবনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে তারা বিদেশ থেকে এলএসডি দেশে নিয়ে এসে গ্রুপে আলোচনা করে কেনাবেচার বিষয়টি ঠিক করেন। এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া ১৫টি গ্রুপের সদস্য নিজেরাই এলএসডির ক্রেতা ও বিক্রেতা। এসব গ্রুপের বাইরে এলএসডির বিক্রির তেমন কোনো তথ্য পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত যে পরিমাণে এলএসডি দেশে এসেছে তা মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ থেকে। দেশীয় সেবনকারীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ওইসব দেশের ব্যবসায়ীদের পে-পালে টাকা পাঠিয়ে এলএসডির অর্ডার করেন। কুরিয়ার ও ব্যাগেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশে এলএসডি মাদক ঢুকছে। পরে দেশীয় সেবনকারীরা বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে তা সরবরাহ করছেন।