ঢাবি শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ হতে পারে এলএসডি : পুলিশ

SHARE

রাজধানীর একটি বাসা থেকে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড বা এলএসডি মাদক জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ। ঢাকার বেশ কয়েকজন তরুণ গাঁজা পাতার নির্যাস দিয়ে কেক তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করছে। তাদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া।

তারা ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে মারাত্মক মাদক এলএসডি এবং গাঁজার তৈরি কেক বিক্রি করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর তদন্তে নেমে এলএসডির যোগসূত্র পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গতকাল বুধবার (২৭ মে) বাংলাদেশে প্রথম আমরা এলএসডি উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় তিন তরুণকে গ্রেফতার করার পর তাদের কাছ থেকে গাঁজার কেক তৈরি ও বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়। তবে এই কেক উদ্ধার করা যায়নি।

ডিবি জানতে পারে, ‘বেটার ব্রাওরি অ্যান্ড বেয়ন্ড’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে সেখানে গাঁজা পাতার নির্যাস দিয়ে কেক বানিয়ে মাদক হিসেবে বিক্রি করতো। এই গ্রুপে প্রায় এক হাজার সদস্য।

এদিকে, ডিবির অভিযানে গ্রেফতার তিনজনের কাছ থেকে নতুন মাদক এলএসডির ২০০টি ব্লট উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি ব্লটের মূল্য ৩-৪ হাজার টাকা।

গ্রেফতার তিনজন হচ্ছেন- সাদমান সাকিব ওরফে রুপল, আসহাব ওয়াদুদ ওরফে তুর্য, আদিন আশরাফ। তাদের বয়স ২২-২৫ বছরের মধ্যে। সাদমান সাকিবকে ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি জানায়, সাদমান সাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর বহিষ্কৃত ছাত্র। বর্তমানে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ (শেষবর্ষ) পড়াশোনা করছেন। তিনিই মূলত বছরখানেক আগে টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডস থেকে এই মাদক অর্ডার করেন। মাদকের জন্য তারা পে-পালে টাকা পরিশোধ করলে পার্সেলের মাধ্যমে এই মাদক আসে। প্রতিটি ব্লট তারা ৮০০-১০০০ টাকায় কিনেছিলেন।

ঢাবি শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

সাদমান ডিবির কাছে দাবি করেন, তাকে ঢাবি থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ায় তিনি ঢাবি ছেড়ে দিয়েছিলেন। ‘আপনার আব্বা’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে সাদমানসহ তাদের তিন বন্ধু সেখান থেকে এলএসডি বিক্রি করতো।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, উদ্ধার এলএসডিগুলো দেখতে স্ট্যাম্পের মতো। এগুলো যে মাদক তা দেখে বোঝার উপায় নেই। এলএসডি সেবকরা ঠোঁটের নিচে এলএসডি রেখে দিত। এলএসডি নতুন, ব্যয়বহুল এবং অতিরিক্ত ক্ষতিকারক মাদক (ব্যাড ড্রাগ)।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও এলএসডির ইতিহাস ঘেঁটে ডিবি জানতে পারে, এটি ব্যবহার করলে যে কারও মাথা ভার হয়ে যাবে। হেলোজেনিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। কেউ যদি গান শোনেন, তার সামনে গানের মিউজিকগুলো বিভিন্ন রঙের মতো ঘুরতে থাকে। সেবনকারী অত্যন্ত হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক আচরণ করে। একটি এলএসডি ব্লট সেবন করলে ৮-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এর প্রতিক্রিয়া থাকে। অতিরিক্ত সেবনে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া হয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এটি সেবন করে সেবনকারী নিজেকে অনেক শক্তিশালী ভাবেন। সেবনকারী চিন্তা করেন তিনি উড়তেও পারবেন। তার অতীত স্মৃতি চলে আসে। অনেকে বলেছে, এটি সেবনের পর তারা মনে করে যে তারা ট্রেনেও ধাক্কা দিতে পারবে।

তিনি বলেন, যারা নেদারল্যান্ডস থেকে এই মাদকটি বাংলাদেশে পাঠিয়েছে, তাদের শনাক্তের জন্য পুলিশ সদরদফতরের এনসিবি বিভাগে চিঠি দিয়ে খোঁজ নিতে বলা হবে।

ঢাবি শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে এলএসডি সম্পৃক্ত কি-না?

ডিবি বলছে, সম্প্রতি হাফিজুর রহমান নামে ঢাবি শিক্ষার্থী ‘মৃত্যু’র ঘটনায় ডিবি তদন্ত শুরু করে। হাফিজের বন্ধুরা বলছে, হাফিজ একটি নতুন ও অদ্ভুত মাদকে আসক্ত ছিল। এরপরই এলএসডির বিষয়ে তথ্য পেয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ বলেন, ‘আমরা আত্মহত্যা করা হাফিজুরের মরদেহের ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর বলতে পারবো, তিনি এলএসডিতে আসক্ত ছিলেন কি-না?’

এলএসডি কী?

এলএসডি ড্রাগ মস্তিষ্কে এমন এক প্রভাব সৃষ্টি করে, যা হ্যালুসিনেশনে (সম্মোহন) সাহায্য করে। ফলে যারা এই ড্রাগ ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন রকম রঙ এবং আকৃতির জিনিস দেখে, যার অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই। এছাড়া এই ড্রাগ মানব মস্তিষ্কের এমন সব স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, যা অনেক সময় অতীত স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। এমনকি এই ড্রাগ মানুষকে তার জন্মকালীন স্মৃতিও মনে করাতে সক্ষম।

এলএসডি’র হ্যালুসিনেশন তৈরি করার প্রবণতা থেকে অনেক মানুষই এই ড্রাগটি ব্যবহার শুরু করে। এমনকি ষাটের দশকে এই ড্রাগ থেকে নতুন একটি সাইকেডেলিক কালচার তৈরি হয়। জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও ব্যান্ড মেম্বাররা এই ড্রাগ ব্যবহার শুরু করে।

১৯৬৮ সালে বিশ্বব্যাপী এলএসডি নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেনের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ এই ড্রাগ ব্যবহার করেছিল। বর্তমানেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রিক্রিয়েশনাল ড্রাগ হিসেবে এলএসডির ব্যবহার হয়। এই ড্রাগ ভারতে এখনো গোপনে ব্যবহার হয়।