দেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

SHARE

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘বাংলাদেশেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত এক-দুই জন রোগী পাওয়া গেছে বলে জানতে পারলাম। আমাদের আগে থেকে সাবধান হতে হবে। ভয়ের কিছু নেই, আতঙ্কের কিছু নাই।’

আজ মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘যারা বয়স্ক, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, তাদের বেশি করে এই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। আমি ইতোমধ্যে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিকে নির্দেশনা দিয়েছি, যাতে এই ফাঙ্গাসের জন্য যে ধরনের ওষুধ প্রয়োজন, সেটা যেন এখন থেকেই তৈরি করে। আল্লাহ না করুক যদি এখানে রোগী বাড়ে, তাহলে যেন যথাযথ চিকিৎসা করা যায়।’

ভ্যাকসিন সংকট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘যে ১৫ লাখ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সংকট আছে, সেটা ৪ মাস পরেও নেওয়া যাবে। আমাদের আগে এখানে ২ মাস সময় ছিল; আরও ২ মাস সময় নিয়ে যারা দ্বিতীয় ডোজ পায়নি তাদের আমরা দিতে পারবো। এই লক্ষ্যে সরকার যত রকমের চেষ্টা দরকার তা করে যাচ্ছে। ভারত ছাড়াও যেখানে এই ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, সবাই মিলেই চেষ্টা করছে। আমরা আশা করছি, ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা আমরা করতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের অ্যাসট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকার চুক্তি করা হলেও পাওয়া গেছে এক কোটি ডোজ। ভারতের অবস্থা খারাপ হওয়ায় নতুন করে আর টিকা পাওয়া যায়নি। তবে আশা করি আগামীতে পাব। তবে বিকল্প উপায়ে বিভিন্ন সোর্স থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।’

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও পরামর্শে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। চীনের টিকা সংগ্রহের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাফেরা করলে কোভিড-১৯ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের যে সেকেন্ড ওয়েভ চলছে তা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরে বেড়ানো, বিয়েসহ সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মিটিং-মিছিল-জনসমাবেশের কারণে হয়েছিল। লকডাউন দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’

তবে, ‘লকডাউন বার বার দেয়া যায় না। এতে মানুষের আর্থিক ক্ষতি হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। কোনো দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সে দেশের অর্থনীতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সব কিছুই বেসামাল হয়ে যায়। তাই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে’, বলে মন্ত্রী মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক টিটো মিয়া, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব এম এ আজিজ প্রমুখ।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে দরকার সতর্কতা
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাককে মহামারি ঘোষণা করেছে পাশের দেশ ভারত। নিকটতম প্রতিবেশী হওয়াতে বাংলাদেশেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে করোনার মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ইতোমধ্যে জানিয়েছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সে নিয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, এ বিষয়টি নিয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সতর্ক আছে। তাছাড়া এ সংক্রান্ত চিকিৎসা সম্পর্কে অধিদফতরের পক্ষ থেকে জেলাগুলোতে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।

ভারতে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ ছড়িয়েছে ব্যাপকভাবে। সেখানে এখন পর্যন্ত আট হাজার ৮০০ জন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়েছেন এবং এতে সংক্রমিত প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ মারা যাচ্ছে। আর যারা বেঁচে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে একটি অংশের চোখ অপসারণ করতে হচ্ছে। ভারতের চিকিৎসকেরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার ১২ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে এর সংক্রমণ দেখা দেয়।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্তে প্রাথমিক লক্ষণগুলোর প্রতি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

কালো ছত্রাকের সংক্রমণকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় মিউকরমাইকোসিস। এসব ছত্রাক পরিবেশে বিশেষ করে মাটি, পঁচে যাওয়া জৈব পদার্থ যেমন: পঁচা ফলমূল, পাতা বা পশুর বিষ্ঠায় ছড়িয়ে থাকে। এসব ছত্রাককে ল্যাবরেটরির কৃত্রিম মিডিয়াতে যখন বৃদ্ধি করা হয়, এদের রং হয় গাঢ় বাদামি বা কালো। তাই এদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক বলা হয়।

মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না
চিকিৎসকরা বলছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যে কেবল করোনার কারণেই হবে সেটা নয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ‘হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড’ ইনফেকশন হতে পারে মন্তব্য করে তারা বলছেন, এটা সহজে মানুষকে সংক্রমণ করে না, তবে ঝুঁকিপূর্ণ রোগী হলে তখন এটা ‘ডেডলি’ হয়। তাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রোগীদের পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং দরকার না হলে স্টেরয়েড না দেওয়া ও অক্সিজেন না দেওয়ার মতো কাজগুলো করতে হবে।

তবে আশার কথা হলো, চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ‘পার্সন টু পার্সন’ অর্থাৎ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।