ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট : যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার শঙ্কা

SHARE

গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, পরিস্থিতি ‘একটা পূর্ণাঙ্গ মাত্রার যুদ্ধের’ দিকে এগোচ্ছে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের গত ৩৮ ঘণ্টায় দেড় হাজারেরও বেশি রকেট ছুঁড়েছে, যার বেশিরভাগ তেল আবিরের উপর।

ইসরায়েলও গাজা উপত্যকার একশর বেশি স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় গাজার তিনটি উঁচু টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া জ্যেষ্ঠ হামাস কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

আল জাজিরা ও বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সোমবার থেকে সেখানে ১৬ শিশুসহ অন্তত ৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে গাজার হামলায় নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি সেনাসহ অন্তত ছয়জন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্টোনিও গুতেরেস গাজা উপত্যকায় চলমান সহিংসতায় ‘গভীরভাবে উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুকে করা এক ফোনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন তার দেশে হামাসের রকেট হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে ইসরায়েলের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

তিনি বলেন, উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য তিনি উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যাডি আমরকে পাঠিয়েছেন।

গত সোমবার রাতে পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চরম উত্তেজনার কয়েক সপ্তাহ পর এই লড়াই শুরু হয়। ইসরায়েলের বেশকিছু শহরে ইসরায়েলি আরবরা সহিংস বিক্ষোভ করছে, যেখানে শতাধিক গ্রেফতার হয়েছে। তেল আবিরের দক্ষিণের শহর লডে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে ইসরায়েল সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, বহিরাগত শত্রু ও অভ্যন্তরীণ দাঙ্গাবাজদের থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করতে সরকার সব ধরনের শক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। অপরদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এক টুইট বার্তায় ইসরায়েলের ‘সামরিক আগ্রাসন’-এর নিন্দা জানিয়েছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে হামাসের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমে ‘সহিংস কর্মকাণ্ড’ ও এখানকার ‘বাসিন্দাদের প্রতি অবৈধ ব্যবস্থা নেয়া’ বন্ধ করে দিলে তারা যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত ছিল।

গাজায় কী ঘটছে?

গত সোমবার রাত থেকে গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে রকেট ছোঁড়ে হামাস। বিপরীতে, গাজার শতাধিক লক্ষবস্তুতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।

মঙ্গলবার (১১ মে) ইসরায়েল জানায়, হামলায় হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। হামাস তাদের একজন কমান্ডার ও কয়েকজনের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা শুধুমাত্র শুরু। আমরা তাদেরকে এমনভাবে উড়িয়ে দেব যেন তারা কখনো স্বপ্ন না দেখতে পারে।’

রয়টার্সে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘হাজার হাজার নেতা ও সেনা তাদের পদক্ষেপে অনুসরণ করবে।’

হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংঘাত শুরুর পর থেকে ১৪ জন শিশুসহ অন্তত ৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছে আরও ৩০০ জনেরও বেশি।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, ২০১৪ সালের পর এটাই দুই পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র হামলার ঘটনা।

হামাস বলেছে, তাদেরকে রকেট হামলায় প্রলুব্ধ করেছে যে, ‘শত্রুরা তাদের আবাসিক টাওয়ারগুলোকে লক্ষ্য করে’ হামলা করছে। হামলা চালিয়ে গাজার একটি উচু টাওয়ার ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।

বিমান হামলার আগে সেখানকার বাসিন্দাদের ভবনগুলো খালি করার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল; তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছে, গাজায় এখনও বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হচ্ছে।

এএফপির বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, গত মঙ্গলবারের বিমান হামলায় দুই ভাইসহ একই পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন।

গাজা উপত্যকার ১১ বছর বয়সী ইয়াসমিন সেভ দ্য চিলড্রেনকে বলে, ‘মঙ্গলবার রাতটি তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ রাত।’

মানবাধিকারকর্মীকে সে বলে, ‘ভয়ে আমার পেটে ব্যথা হয়েছিল এবং আমার বাবা-মা আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু এগুলো খুব কাছাকাছি পড়ছিল তা আমি বুঝতে পারছিলাম। এই সংঘাতের কারণে আমরা তা উদযাপন করবো না।’

ইসরায়েলে কী ঘটছে?

ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখার রকেট হামলায় অন্তত শিশুসহ ছয়জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ইসরায়েলি সৈন্য রয়েছেন। এছাড়া হামাসের হামলায় অন্তত ১০০ জন ইসরায়েলি আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে প্রায় দেড় হাজার রকেট হামলা চালিয়েছে গাজা। বুধবার সন্ধ্যায় হামাসের রকেট হামলার সময় দেশজুড়ে যখন সতর্কতা সংকেত বাজানো হচ্ছিল, তখন লাখ লাখ মানুষ বোমা শেল্টারের দিকে যাচ্ছিল।

বুধবার সকালে গাজা থেকে নিক্ষেপ করা একটি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েলের একজন সেনা নিহত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

ইসরায়েলের লড শহরে জরুরি অবস্থা

ইসরায়েলের লড শহরে ইসরায়েলি আরবদের বিক্ষোভ পুরো মাত্রার দাঙ্গায় রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুঁড়তে থাকে এবং পুলিশ জবাবে স্টেন গান চালায়।

সংঘর্ষে ৫২ বছর বয়সী এক বাবা এবং তার ১৬ বছর বয়সী কন্যা নিহত হয়। একটা রকেট এসে তাদের গাড়িকে আঘাত করলে তারা মারা যান। ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারিৎজ-এর খবরে বলা হয়, সংঘর্ষে আহত হয়েছে আরও অনেক মানুষ।

মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী লড শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত লড শহরে কারফিউ চলবে।

১৯৬৬ সালের পর এই প্রথম সরকার আরব সম্প্রদায়ের ওপর জরুরি আইন প্রয়োগ করল বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল পত্রিকা।