ইয়াবা কেনাবেচার টাকা নিয়ে রায়হান হত্যা: পিবিআই

SHARE

সিলেটের বন্দরবাজার কাষ্টঘর এলাকায় ইয়াবা কেনাবেচার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে। ইয়াবা আসল কি না তা নিয়ে ইয়াবা বিক্রেতা সাইদুল শেখ ও রনি শেখকে মারধর করে তাদের টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা রায়হানকে আটক করে। এরপর পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিসহ খারাপ ব্যবহার করেন রায়হান। এ ঘটনার জেরেই পুলিশের নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু হয়। দীর্ঘ ৭ মাস তদন্ত শেষে এমনটা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

আজ বুধবার (০২ মে) আলোচিত এই হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিলের পর সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই সিলেট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. হুমায়ন কবীর জানান, গত ১১ অক্টোবর পৌনে ২টার দিকে সাইদুল শেখ ও রনি শেখ নামে দুই ব্যক্তি কাষ্টঘরে সুইপার কলোনিতে গিয়ে ৬০০ টাকায় ৪ পিস ইয়াবা কেনেন। এ সময় সুইপার কলোনিতে অবস্থান করছিলেন রায়হান। বিক্রি করা ইয়াবা আসল নয়- এ অভিযোগে সাইদুল শেখের কাছ থেকে একটি মোবাইল ও ৯ হাজার ৭০০ টাকা ছিনিয়ে নেয় রায়হান।

এ ঘটনার পর সাইদুল শেখ বন্দরবাজার এলাকার মাশরাফিয়া রেস্টুরেন্টের সামনে বন্দরবাজার ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। সাইদুল শেখ অভিযোগে বলেন, পুলিশ সদস্য পরিচয়ে মারধর করে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে রায়হান।

পুলিশ সুপার মো. হুমায়ন কবীর বলেন, এই অভিযোগের ভিত্তিতে সুইপার কলোনির চুলাই লালের ঘর থেকে ভিকটিম রায়হানকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। এ সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন রায়হান। পরে বাসা থেকে টাকা এনে সাইদুল শেখের টাকা ফেরত দিতে এবং ছিনতাই ও পুলিশের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করায় ফাঁড়িতে তাকে মারপিট করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর ভোরে আহতাবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মো. হুমায়ন কবীর বলেন, রায়হানের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা ছিল। পরবর্তীতে সেটির বিচার কাজ শেষ হয়। এরপর ২০১৮ সালে তার বিরুদ্ধে আরও একটি মাদক মামলা দায়ের করা হয়। সেটি বিচারাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, রায়হান মাদক বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কাষ্টঘর এলাকায় তার সব সময় আসা যাওয়া ছিল। ঘটনার দিন রাতেও তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন।

পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, আমরা ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। মামলার ১৯৬২ পৃষ্টার চার্জশিটে ৬৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার ধারায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, চার্জশিটে অভিযুক্ত ৬ জনের মধ্যে ৫ পুলিশ সদস্যই জেলহাজতে রয়েছেন। পুলিশের বাইরে আলামত নষ্টকারী আব্দুল্লাহ আল নোমান পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান বলেন, আলোচিত এ মামলার আসামি পুলিশ হওয়ায় নিখুঁত তদন্তের স্বার্থে ত্রুটিমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য চার্জশিট তৈরি করতে কিছুটা সময় লেগেছে। অভিযোগপত্রে আমরা রায়হানের সঙ্গে অভিযুক্ত এসআই আকবরসহ বাকি কারো কোনো পূর্ব শত্রুতা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখেছি। অভিযোগপত্রে পাঁচ পুলিশসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সিলেট আদালতের ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাস বলেন, আলোচিত এ হত্যা মামলায় ১৯৬২ পৃষ্ঠার একটি চার্জশিট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আওলাদ হোসেন জমা দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চলার কারণে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হচ্ছে না।

এদিকে, চার্জশিটে বন্দর বাজার ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত ইনচার্জ এসআই আকবরসহ তিনজনকে সরাসরি নির্যাতনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, দুইজনকে আলামত নষ্ট করা ও একজনকে তথ্য গোপন করার অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস। অভিযুক্তদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান ছাড়া বাকিরা বন্দর বাজার পুলিশ ফাড়িতে কর্মরত ছিলেন।

চার্জশিটে অভিযুক্ত আকবর হোসেন ভুঁইয়া, আশেক এলাহী ও টিটু চন্দ্র দাসকে সরাসরি নির্যাতনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায়, তথ্য গোপনের অপরাধে হারুন অর রশিদ ও আলামত গায়েবের অপরাধে হাসান উদ্দিন আহমদ ও আব্দুল্লাহ আল নোমানকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।