নাভালনির মৃত্যু হলে কঠিন পরিণতি হবে রাশিয়ার: যুক্তরাষ্ট্র

SHARE

রাশিয়ার বিরোধী দলের নেতা ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কড়া সমালোচক অ্যালেক্সেই নাভালনি কারাগারে মারা গেলে পরিণতি ভালো হবে না বলে দেশটিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কারাবন্দি নাভালনির চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।

নাভালনির চিকিৎসকদের ভাষ্য, তার পিঠে তীব্র ব্যথা ও পায়ের অসাড়তা নিয়ে জরুরি চিকিৎসা সেবা দেয়া না হলে কিছুদিনের মধ্যে তার মৃত্যু হবে।

৪৪ বছর বয়সী নাভালনিকে চলতি মাসের ফেব্রুয়ারিতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কারাবন্দি করে রাশিয়া সরকার। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে তার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ আনা হয় বলে অভিযোগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার এ নেতার।

কারাগারে নিজের চিকিৎসক দলের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি না মেলায় ৩১ মার্চে অনশনে বসেন নাভালনি। তার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেছে, কিডনি জটিলতায় ভোগার আশঙ্কা রয়েছে নাভালনির। এ ছাড়া যেকোনো মুহূর্তে তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে তার।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মস্কোর পূর্বাঞ্চলে ৬২ মাইল দূরে পোকরভ শহরের একটি জেলে বন্দি নাভালনির চিকিৎসা নিয়ে স্থানীয় সময় রোববার যৌথভাবে উদ্বেগ জানিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। তার চিকিৎসা নিয়ে রুশ সরকারের পদক্ষেপেরও সমালোচনা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভান সিএনএনকে বলেন, নাভালনি মারা গেলে পরিণতি ভালো হবে না। এর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়াকে দায়ী করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, কারাগারে নাভালনির চিকিৎসা একেবারেই অন্যায্য ও যথাযথ না।

ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক জোসেফ বরেল বলেন, নাভালনির শারীরিক অবস্থা নিয়ে ইইউ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

রাশিয়ার বিরোধী নেতার সঙ্গে চিকিৎসকদের দ্রুত দেখা করার অনুমতি দেয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

নাভালনির উদ্বেগজনক শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার ইইউর নেতাদের আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ একটি চিকিৎসক দল যাতে নাভালনিকে চিকিৎসা সেবা দিতে পারে, সে অনুমতি রাশিয়াকে অবিলম্বে দিতে হবে। রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারাবাস থেকে তাকে দ্রুত মুক্তি দেয়ার ফের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় অধ্যয়নরত নাভালনির ২০ বছর বয়সী মেয়ে দারিয়া নাভালনায়া এক টুইট বার্তায় রুশ সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘চিকিৎসকেরা যেন আমার বাবাকে দেখতে পারেন, সে অনুমতি দাও।’

নাভালনির স্ত্রী ইয়ুলিয়া বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, অনশন শুরু পর থেকে নাভালনির ওজন নয় কেজি কমে গেছে।

গত বছরের আগস্টে নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়। পাঁচ মাস জার্মানিতে চিকিৎসা শেষে ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরার পরই মস্কোর শেরেমিতিয়েভো বিমানবন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পশ্চিমা অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা নাভালনির ওপর বিষপ্রয়োগের ঘটনায় রাশিয়া সরকারকে দায়ী করে আসছে। তাদের ভাষ্য, সাইবেরিয়ায় বিমানে ভ্রমণের সময় নভিচক এজেন্টের মাধ্যমে নাভালনির ওপর বিষপ্রয়োগ করা হয়।

এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে রুশ সরকার।

নভিচকের অর্থ নবাগত। সোভিয়েত আমলে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে ল্যাবে বেশ কিছু নার্ভ এজেন্ট উদ্ভাবন করা হয়। এসব এজেন্টকে নভিচক বলা হয়। এগুলো পেশিকে অবশ করে দেয়। এতে শ্বাসকষ্টে মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মার্চের শুরুর দিকে রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ওপর অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ।

অবরোধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বছর নাভালনির ওপর প্রায় প্রাণনাশক নার্ভ এজেন্ট (একধরনের রাসায়নিক যা স্নায়বিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে) হামলায় রুশ সরকার জড়িত বলে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পারে। রাসায়নিক ও জৈবিক পদার্থ উৎপাদনে জড়িত থাকায় রাশিয়ার সাত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও ১৪ প্রতিষ্ঠানের ওপর অবরোধ আরোপ করা হয়েছে।