ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে ১ জুলাই থেকে টোল আদায় শুরু

SHARE

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল আদায় শুরু করতে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। আগামী ১ জুলাই থেকে মহাসড়কটি ব্যবহার করতে গুনতে হবে অর্থ। টোল আদায় কার্যক্রম চালুর জন্য অপারেটর নিয়োগের কার্যক্রমও শুরু করেছে সংস্থাটি। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তি টোল প্রস্তাব করা হয়েছে কিলোমিটারপ্রতি ৯ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থ বিভাগের অনুমোদন পেলে এ হারেই টোল আদায় শুরু হবে। পদ্মা সেতু চালুর পর টোলহার পুনরায় নির্ধারণ করা হবে। সেক্ষেত্রে টোলহার আরো বাড়বে বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন সওজ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

এটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের চতুর্থ টোল সড়ক। বর্তমানে ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক, ১৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৭৪ কিলোমিটার অংশের জন্য টোল আদায় করা হচ্ছে।

সওজ অধিদপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী, ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে পাড়ি দেয়ার জন্য ট্রেইলার থেকে ১ হাজার ৩৬১ টাকা, ভারী ট্রাকে ১ হাজার ৮৯, মাঝারি ট্রাকে ৫৪৪, বড় বাসে ৪৯০, ছোট ট্রাকে ৪০৮, মিনিবাসে ২৭২, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপে ২১৮, সেডান কারে ১৩৬ ও মোটরসাইকেল থেকে ২৭ টাকা টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে প্রস্তাব অনুযায়ী, এ টোলহার কেবল পদ্মা সেতুর চালুর পূর্ববর্তী সময়ের জন্য। সেতু চালু হলে টোলহার পুনর্বিন্যাসের কথা জানিয়েছে সওজ অধিদপ্তর। বর্তমানে এ মহাসড়কের দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও আড়িয়ল খাঁ সেতু থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, এ তিন সেতুর টোল যুক্ত করেই পুরো এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ‘সহনীয়’ মাত্রায় টোল আরোপের কথা জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। প্রস্তাবিত এ টোলহার ১ জুলাই থেকে আরোপের জন্য চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। অর্থ বিভাগের অনুমোদন পেলেই আদায় কার্যক্রম শুরু করা হবে। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য চারটি পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা-মাওয়ার মধ্যে আব্দুল্লাপুর ও শ্রীনগরে গাড়ি প্রবেশ ও বের হতে পারবে। একইভাবে পাচ্চর-ভাঙ্গার মধ্যে মালিগ্রাম ও পুলিয়াবাজারে গাড়ি প্রবেশ ও বের হতে পারবে। অন্যদিকে কোনো যানবাহন যদি টোল দিয়ে সড়ক ব্যবহার করতে না চায়, তাহলে তাদের জন্য বিকল্প সড়কের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

সওজ অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টোল আদায় করা হবে অপারেটরের মাধ্যমে। এজন্য অপারেটর নিয়োগ দেয়ার দরপত্র আহ্বান করে আগ্রহী অপারেটরদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুত অপারেটর নিয়োগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সওজ অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আমরা নেয়া শুরু করেছি। অপারেটর নিয়োগ দেয়ার কার্যক্রম চলমান আছে। টোল আদায়ের জন্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামোও প্রস্তুত করে ফেলা হয়েছে। তবে টোল আদায় শুরুর জন্য কম্পিউটার সফটওয়্যারসহ আরো কিছু অবকাঠামো দরকার, যে কাজগুলো অপারেটর নিজেরা করবে।

টোলহার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যে টোলহারটি প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছি, সেটি সীমিত সময়ের জন্য। এখনো যেহেতু পদ্মা সেতু চালু হয়নি, সেহেতু মহাসড়কটিকে এখনই এক্সপ্রেসওয়ে মানের বলা ঠিক হবে না। তাই সরকারের টোল নীতিমালা অনুযায়ী এখনই টোল আদায় করা হবে না। আমরা আশা করছি, ২০২২ সালের জুলাইয়ের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হয়ে যাবে। তখন নতুন করে টোলহার নির্ধারণ করা হবে।

পদ্মা সেতু চালুর পর টোলহার বেড়ে যেতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই টোলহার বাড়বে। সরকারের টোল নীতিমালা অনুযায়ী, মহাসড়কটিতে ভিত্তি টোল হওয়ার কথা ২০ টাকা ১৮ পয়সা। সেখানে আমরা শুরুতে আদায় করব ১০ টাকার কম। পর্যায়ক্রমে এ হার বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন তিনি, যাতে টোল আরোপের কোনো বিরূপ প্রভাব সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে না পড়ে।

প্রসঙ্গত, এর আগে এক্সপ্রেসওয়েটি থেকে কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি টোল ২০ টাকা ১৮ পয়সা হিসেবে আদায়ের প্রস্তাব দিয়েছিল সওজ অধিদপ্তর। সেই প্রস্তাবে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত (পদ্মা সেতুর টোল বাদে) একটি ট্রেইলারে টোল হওয়ার কথা ২ হাজার ২৭৫ টাকা। একইভাবে ট্রাকে ২ হাজার ২২০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ১ হাজার ১১০, বড় বাসে ৯৯৯, ছোট ট্রাকে ৮৩৩, মিনিবাসে ৫৫৫, মাইক্রোবাসে ৪৪৪, পিকআপ/জিপে ৪৪৪, সেডান কারে ২৭৮ ও মোটরসাইকেলে ৫৬ টাকা টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়।

সূত্র: বণিক বার্তা