মঙ্গলের বুকে নাসার পারসিভারেন্স

SHARE

প্রায় সাত মাসের যাত্রা শেষে দুই লাখ ৪০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে সফলভাবে অবতরণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসার মার্স রোভার ‘পারসিভারেন্স’। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার শেষ হলো মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন নাসার বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টা ৫৫ মিনিটে পারসেভারেন্স মঙ্গলে অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে লস এঞ্জেলেসের জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানীরা উল্লাসে মেতে ওঠেন।

এটির অবতরণের শেষ সময়টিকে ‘সেভেন মিনিটস অব টেরর’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কেননা অবতরণের সময় দ্রুত বেগে আছড়ে পড়ার কারণে এসব যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই এই সময়টিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

এ মহাকাশ যানের সফল অবতরণের সংকেত ইতোমধ্যেই লস এঞ্জেলেসের জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরিতে এসে পৌঁছেছে বলে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের আতঙ্ক ছিল, মঙ্গলের মাটিতে প্রচণ্ড গতিতে আছড়ে পড়ার সময়ে ছয় চাকার যে যানটি আছে এর যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, এজন্য যানটিকে একটি ক্যাপসুলের মধ্যে ঢুকিয়ে মঙ্গলযানের সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল। ২০৪০ লাখ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে প্রায় সাত মাসের যাত্রা শেষে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে পৌঁছেছে ‘পারসিভারেন্স’। শেষ ৭ মিনিটের মধ্যে ওই যানসহ ক্যাপসুলটি ধীরে ধীরে আছড়ে পড়ে এক জায়গায় থেমে যাওয়ার কথা। এই ঘটনাটাই ঠিকভাবে হবে কি-না, এই নিয়ে উদ্বেগ ছিলেন বিজ্ঞানীদের।

এখন ল্যান্ডিং হয়ে যাওয়ার পরে প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, কোনো ক্ষতি হয়নি পারসিভারেন্সের। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই এটি মঙ্গলের মাটিতে অভিযানও শুরু করবে। ছয় চাকার ওই অনুসন্ধানযান মঙ্গলপৃষ্ঠের ছবি তুলবে, মাটির প্রকৃতি বিশ্লেষণ করবে এবং সেই সব ছবি ও তথ্য পাঠাতে থাকবে।

নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরির পরিচালক মাইক ওয়াটকিনস পারসেভারেন্স টিমের এই সাফল্যকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‌‘এই সাফল্য ভবিষ্যতে লাল গ্রহে (মঙ্গলে) মানুষের যাত্রার পথ তৈরি করবে।’

তিনি বলেন, ‘মঙ্গলে নভোচারী পাঠানোর জন্য আমরা এখনও প্রস্তুত নই, তবে আমরা রোবট পাঠিয়েছি।’

এদিকে, এই ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকায় বৃহস্পতিবারই (১৮ ফেব্রুয়ারি) ইতিহাসে ঢুকে যাবে চার জন ভারতীয় বংশোদ্ভূতের নাম। যাদের মধ্যে দু’জন আবার বাঙালি। তাদের এক জন নারী। বেঙ্গালুরুর স্বাতী মোহন। ‘পারসিভারেন্স’-এর গাইডেন্স, নেভিগেশন ও কন্ট্রোলস অপারেশন্সের (জিএনঅ্যান্ডসি) প্রধান।

বাকি তিন জনের মধ্যে অন্যতম বেঙ্গালুরুর জে বব বলরাম। অন্য কোনো গ্রহে এবার প্রথম যে হেলিকপ্টার ওড়াতে চলেছে বিশ্ব, সেই ইনজেনুইটির প্রধান প্রকৌশলী।

রয়েছেন অনুভব দত্ত, এখন মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যারোডায়নামিক্স ও অ্যারোইলেকট্রিসিটি বিভাগের অধ্যাপক। তিন দশক আগেই মঙ্গলে হেলিকপ্টার ওড়ানোর স্বপ্নটা দেখতে শুরু করেছিলেন যে মুষ্টিমেয় কয়েক জন, তাদের অন্যতম অনুভব।

আর রয়েছেন বর্ধমানের সৌম্য দত্ত। প্যারাসুট নির্মাণ প্রকল্পের অন্যতম কারিগর তিনি। ওই প্যারাসুটে চেপেই মঙ্গলের বুকে নামবে নাসার ‘মার্স ২০২০ রোভার’ পারসিভের‌্যান্স আর ল্যান্ডার।